মঙ্গলবার, ২২ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

লাগামহীন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল

শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সময় টিউশন ফি, ভর্তি ফি-সহ মোট ১ লাখ ৮৯ হাজার ৭২৯ টাকা, নেই নীতিমালা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ভর্তি ফি, সেশন চার্জ, শিক্ষক নিয়োগসহ যাবতীয় কার্যক্রম চলছে লাগামহীনভাবে। কোনো ধরনের নীতিমালা ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর প্রকৃত সংখ্যা কিংবা সিলেবাস সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৫৯টি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের নিবন্ধন রয়েছে এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬৪ হাজার ৫০৭ জন। এর মধ্যে ‘ও’ লেভেলের স্কুল ৬৪টি, ‘এ’ লেভেলের ৫৪টি এবং জুনিয়র লেভেলের স্কুল হলো ৪১টি। তবে বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল অ্যাসোসিয়েশনের হিসেবে সারা দেশে এ ধরনের স্কুলের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিনশ। আর শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় তিন লাখ। জুলাই মাস থেকে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হলেই ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতে শুরু হয়ে যায় বেতন বাড়ানোর প্রতিযোগিতা। বিভিন্ন রকমের ফন্দিফিকিরে বেতন বাড়ানো নিয়ে অভিভাবকদের হাজারো অভিযোগ থাকলেও এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নিয়মনীতির কোনো বালাই না থাকায় রাজধানীতে ব্যাঙের ছাতার মতোই গজিয়ে উঠছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। ব্রিটিশ কিংবা এডেক্সেলের সিলেবাস অনুসরণ করে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাধ্যমে পরীক্ষা দিলেও কতজন কী পরীক্ষা দিল, অ্যাডমিশন ও টিউশন ফি বাবদ কত টাকা আদায় করা হলো সেসব বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কোনো তথ্যই নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরায় আগা খান স্কুলে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে প্লে ও কেজি প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি ফি নেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৬০৮ টাকা। শিক্ষার্থীদের কাছে প্রতি মাসের টিউশন ফি নেওয়া হয়েছে ১৩ হাজার ৫৪৫ টাকা। নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সময় টিউশন ফি, ভর্তি ফি-সহ মোট ১ লাখ ৮৯ হাজার ৭২৯ টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হতে হলে এক শিক্ষার্থীকে পরিশোধ করতে হবে ১ লাখ ৯০ হাজার ৩৭৪ টাকা। বারিধারার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে কেজি ওয়ান শ্রেণিতে টিউশন ফি নেওয়া হয়েছে ২৩ হাজার ৫৬০ ইউএস ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ টাকা। গ্রেড ১২ শ্রেণির টিউশন ফি নেওয়া হয় ২৯ হাজার ৩৩০ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় এ অঙ্ক ২৩ লাখ টাকার বেশি।

এসব প্রতিষ্ঠান ছাড়াও রাজধানীর হার্ডকো ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, মাস্টার মাইন্ড, স্কলাসটিকা, ইন্টারন্যাশনাল টার্কিশ হোপ স্কুল, আরব মিশন পাবলিক স্কুলসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও একই অবস্থা। এসব প্রতিষ্ঠানেও শিক্ষার্থী ভর্তিতে নেওয়া হয় লাখ লাখ টাকা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১২ সালে ইংলিশ মিডিয়ামের নীতিমালা তৈরিতে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের নেতৃত্বে কয়েকটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সভাগুলোতে ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, রাশেদা কে চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ অন্যরা অংশ নেন। ওই সভায় বিভিন্ন ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের স্বত্বাধিকারীরাও সভায় উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে নানামুখী চাপে নীতিমালা আর আলোর মুখ দেখেনি বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদর অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শিক্ষার্থীদের সিলেবাসে কী পড়ানো হচ্ছে সে তথ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে থাকতে হবে। নয়তো এর সুযোগ নিয়ে দুর্বৃত্তরা শিশুমনে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে তাদের বিপথগামী করতে পারে। আমাদের আগামী প্রজন্মকে সুশিক্ষিত করতে চাইলে অবশ্যই মানসম্পন্ন শিক্ষক এবং শিক্ষা উপকরণের চাহিদা পূরণ করতে হবে। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোকে যতদ্রুত সম্ভব নীতিমালার আওতায় আনা উচিত।

সর্বশেষ খবর