শুক্রবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভোটের আগেই ভোটযুদ্ধে প্রার্থীরা

রাজনীতি এখন গ্রামে

রফিকুল ইসলাম রনি

মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে শুরু হচ্ছে উপজেলা নির্বাচন। এ নির্বাচনকে ঘিরে জমে উঠেছে গ্রামীণ রাজনীতি। কে উপজেলা চেয়ারম্যান, কে ভাইস চেয়ারম্যান এবং কে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন- তা নিয়ে সর্বত্র আলোচনা চলছে। আর সম্ভাব্য প্রার্থীরাও ছুটে বেড়াচ্ছেন মহল্লা-মহল্লায়, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে, গ্রামে গ্রামে। লক্ষ্য- আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে ‘তৃণমূলের সমর্থন’ আদায়। কেন্দ্রের চাহিদা অনুযায়ী তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে একক প্রার্থী বাছাই করার জন্য ভোট গ্রহণ করার প্রক্রিয়া চলছে তৃণমূলে। সে কারণে ভোটের আগেই ‘ভোটযুদ্ধে’ নামতে হচ্ছে মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীদের। কমপক্ষে ২০টি জেলার তৃণমূলে খোঁজ নিয়ে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। এবারই প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীক নিয়ে ভোটযুদ্ধে লড়বেন প্রার্থীরা। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে না হলেও দলীয় মনোনয়ন দেবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। সে কারণে একক প্রার্থী বাছাই করতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তৃণমূলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বাছাইয়ে ‘ভোট’ পদ্ধতি বেছে নিয়েছে। জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বর্ধিত সভা ডেকে প্রার্থী চূড়ান্ত করার ইচ্ছা থাকলেও অনেকেই প্রকাশ্যে কথা বলবে না। সে কারণে গোপন ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। সরেজমিন সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ছাড়াও এক ডজন প্রার্থী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে দেড় ডজন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। এত প্রার্থীর মধ্য থেকে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করতে হিমশিম খাচ্ছেন নেতারা। তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হক বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান। তিনি এবারও দলের মনোনয়ন নিয়ে ভোট করতে চান। অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সনজিত কর্মকার উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে চান। সে কারণে ভোটের মাধ্যমেই প্রার্থী চূড়ান্ত করে কেন্দ্রে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে উপজেলা সাধারণ সম্পাদক সনজিত কর্মকার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা বর্ধিত সভায় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে না পারলে গোপন ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছি। কারণ একাধিক প্রার্থী থাকায় অনেক ভোটার প্রকাশ্যে মতামত দেবেন না বলে জানা গেছে।’ উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহফুজা খাতুন জানান, ‘এখন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের কাছে যাচ্ছি। কারণ আনুষ্ঠানিক ভোটের আগেই তৃণমূল নেতাদের ভোটে আমাকে বিজয়ী হতে হবে।’ শুধু সিরাজগঞ্জের তাড়াশই নয়, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, বেলকুচিসহ নাটোরের সিংড়া, বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, লালপুর, বগুড়ার শেরপুর, নন্দীগ্রাম, শিবগঞ্জ, গাবতলী, পাবনার ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর, বেড়া, সাঁথিয়া, আটঘরিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় একই চিত্র। সম্ভাব্য উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে এখন তৃণমূলের ভোটের প্রার্থনা করছেন। গ্রামগঞ্জের চায়ের স্টলে চলছে- কে পাচ্ছেন উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বড় দুই রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে কর্মী-সমর্থকরাও বসে নেই। তারা অমুক ভাইকে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে দেখতে চাই- পোস্টার, বিলবোর্ড দিয়ে হাটবাজার, মাঠ-ঘাট ছাপিয়ে দিয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগের নেতারাও উপজেলায় বর্ধিত সভা ডেকে বা ভোটের মাধ্যমে একক প্রার্থী করার নির্দেশনা দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী করতে তৃণমূলকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তৃণমূল থেকে নাম পাঠানো হলে দলের মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। আমরা চাই, সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের একক বিজয়। সে কারণে যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন দেব।’ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল মতিন খসরু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর আমাদের লক্ষ্য এখন উপজেলায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন। সে কারণে যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে। সেজন্য দলীয় সভানেত্রী নিজস্ব জরিপ করাচ্ছেন এবং তৃণমূল থেকে একক প্রার্থী পাঠাতে বলা হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর