সোমবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
বিশ্ব ক্যান্সার দিবস আজ

চিকিৎসায় নিঃস্ব হচ্ছেন রোগীরা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

বাংলাদেশে প্রতি বছর আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা। কিন্তু সরকারি সেবার অপ্রতুলতায় বাড়ছে রোগীদের চিকিৎসা খরচ। সামর্থ্যবানরা পাড়ি জমাচ্ছেন বিদেশে। রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপিসহ অন্যান্য খরচ বহন করতে নিঃস্ব হচ্ছে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষ। এমন একটা অবস্থায় আজ বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে ক্যান্সার দিবস। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাবিষয়ক গবেষণা সংস্থা গ্লোবোক্যান ২০১৮-এর প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে প্রতি বছর নতুন করে ক্যান্সার আক্রান্ত হয় ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষ। সংস্থাটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের জনসংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে এই পরিসংখ্যান দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের নিজস্ব কোনো পরিসংখ্যান নেই। এর কোনো উদ্যোগ কখনো নেওয়া হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদ- অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য একটি ক্যান্সার কেন্দ্র দরকার। এ হিসেবে দেশে ক্যান্সার কেন্দ্রের প্রয়োজন ১৬০টি। এর বিপরীতে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে রয়েছে মাত্র ১৮টি। এসব ক্যান্সার কেন্দ্রও আবার রাজধানীকেন্দ্রিক। তাই চিকিৎসার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রোগী ও তাদের স্বজনদের ঢাকায় আসতে হয়। সরকারি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা কম হওয়ায় অধিকাংশ রোগীকে বাইরে থেকে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হয়। এসব কারণে বাড়ছে চিকিৎসা ব্যয়। গতকাল রাজধানীর জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটে ও হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ রোগীই নিম্ন আয়ের পরিবারের। ঢাকার বাইরে থেকে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সংখ্যা বেশি। কিন্তু সিরিয়াল না পেয়ে তাদের ঢাকায় থাকতে হচ্ছে। নিম্ন আয়ের এসব রোগীর হোটেল ভাড়া দিয়ে থাকার সামর্থ্য না থাকায় ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালের অডিটরিয়ামের বারান্দায়। নওগাঁ থেকে এসেছেন সোলায়মান হোসেন। তিনি বলেন, আমাকে রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহে আবার দেখবেন চিকিৎসকরা। বারবার এভাবে যাতায়াত করার শারীরিক কিংবা আর্থিক সামর্থ্য আমার নেই। হাসপাতালে বিছানা পাইনি তাই হাসপাতাল মিলনায়তনের বারান্দায় থাকছি। এই হাসপাতালে বেসরকারি হাসপাতালের চেয়ে অনেক কম খরচে চিকিৎসা হয় সেজন্য এখানে আসি। জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, এই বিশেষায়িত হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ রোগীকে কেমোথেরাপি ও ৩৫০-৪০০-এর মতো রোগীকে রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। হাসপাতালে শয্যা সংকটের কারণে সব রোগীকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না। এ কারণে হাঁটাচলা করতে পারেন এমন রোগীকে কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি দেওয়ার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। রোগীরা তারপর নিজ দায়িত্বে যে কোনো জায়গায় থেকে চিকিৎসা চালিয়ে যান। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ইপিডেমিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আটটি বিভাগীয় শহরে পরিপূর্ণ ক্যান্সার সেবার ব্যবস্থা করতে পারলে এ দুরবস্থা কমবে। কিন্তু মেডিকেল কলেজগুলোতে শুধু রেডিওলজি বিভাগ খুলে। অর্থাৎ একটা ইউনিট দিয়ে ক্যান্সারের চিকিৎসা দেওয়া যাবে না। শুধু ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিলে হবে না প্রতিরোধের জন্য স্কিনিং সেবা বাড়াতে হবে। আটটি বিভাগে পরিপূর্ণ বিভাগ খুলতে ৮০০ কোটি টাকা লাগবে। সরকার যদি একটা সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পারে তাহলে পাঁচ বছরে ক্যান্সার চিকিৎসা সেবা আমূল বদলে ফেলা যাবে। ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনলে অনেক কম খরচে ক্যান্সার চিকিৎসা সম্ভব। বিশ্ব ক্যান্সার দিবস উপলক্ষে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল আজ র‌্যালি, ক্যান্সার রোগী ও সারভাইভারদের অংশগ্রহণে ক্রীড়া অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বিশেষ অতিথি থাকবেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান।

 

সর্বশেষ খবর