সোমবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রতিনিয়ত প্রতারণা

মির্জা মেহেদী তমাল

প্রতিনিয়ত প্রতারণা

শেখ রুহুল আমিন। বাড়ি ঝিনাইদহ। গত ৩০ জানুয়ারি পেশাগত কাজে তিনি ঢাকায় আসেন। বিকালে তার বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা বের করতে ভাটারায় এজেন্টের কাছে যান। কিন্তু এজেন্ট তাকে বলেন, তার অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই। আকাশ থেকে পড়লেন শেখ রুহুল আমিন। বলে কী! তার অ্যাকাউন্টে ৪ হাজার ৬০০ টাকা ছিল। তিনি তো কোনো টাকা বের করেননি! তবে টাকা যাবে কোথায়? ভালো করে চেক করেন। হ্যাঁ, টাকা তো আসলেও নেই। কিন্তু কোনো মেসেজও নেই টাকা ওঠানোর। রুহুল আমিন মন খারাপ করে অফিসে ফিরেন। অফিস থেকে তিনি ১৬২৪৭৭ নম্বরে বিকাশের হেল্প সেন্টারে ফোন করেন। ইমরান নামে একজন ফোন রিসিভ করেন। রুহুল আমিন তাকে বিষয়টি খুলে বলেন। ইমরান তাকে লাইনে রেখেই অ্যাকাউন্ট চেক করেন। ইমরান তাকে জানান,  সেদিন সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে সেন্ড মানি করে টাকা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। টাকা গিয়েছে ০১৮৭৭৯০০৯৮২ নম্বরে। এ কথা শুনে রুহুল আমিন তাকে বলেন, এ বিষয়ে কোনো মেসেজ পাননি তিনি। টাকা সেন্ড করলেও তো মেসেজ আসার কথা। বিকাশের হেল্প সেন্টারের ভদ্রলোক ইমরান এ বিষয়ে আর কিছু জানাতে পারছিলেন না। তবে তিনি রুহুল আমিনকে বলেন, রবির ওই নম্বরের অ্যাকাউন্টে ১৮৪ টাকা আছে। চাইলে ওই টাকাটা এনে তার অ্যাকাউন্টে সেন্ড করতে পারেন। এ কথা শুনে রুহুল আমিন হতবাক। তবে কী যে কোনো অ্যাকাউন্ট থেকেই তারা টাকা নিয়ে আরেক অ্যাকাউন্টে সেন্ড করতে পারেন-এমন প্রশ্ন রুহুল আমিন করলে ইমরান কোনো জবাব দিতে পারেননি।

রুহুল আমিন জানান, প্রায় মাস খানেক আগে বিকাশ থেকে একটি মেসেজ আসে। এরপরই একজন ফোন করে বলেন, আমি বিকাশ থেকে বলছি। আপনার বিকাশ নম্বরে একটি মেসেজ পাঠানো হয়েছে। কোড নম্বর দেওয়া আছে। একটু দ্রুত নম্বরটি বলুন। রুহুল আমিন তার নম্বরে চেক করে দেখেন মেসেজ এসেছে। কোড নম্বরও দেওয়া আছে। তিনি কোনো কিছু না ভেবেই লোকটিকে সেই কোড নম্বরটি বলে দেন। কোড নম্বরটি নিয়েই লোকটি ফোন কেটে দেন। কেটে দেওয়ার আগে লোকটি বলেছেন, মেসেজটি যেন ডিলিট করে দেন।

কোনো প্রকার নোটিস ছাড়াই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এর সঙ্গে অবশ্যই বিকাশের কোনো লোকজন জড়িত রয়েছে। দিন যত যাচ্ছে বিকাশের টাকা লোপাটের কৌশলও বদলাচ্ছে। নিত্য নতুন কায়দায় অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা গায়েব হয়ে যাচ্ছে। তা ঘটছে প্রতিদিনই। তবে একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, এজেন্টের বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে এভাবে টাকা গায়েব হওয়ার ঘটনা ঘটে না। ঘটছে শুধু পারসোনাল নম্বরের বিকাশ অ্যাকাউন্টে।

১০ হাজার টাকা খোয়া গেছে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর এলাকার আসলাম সিকদারের। তিনি বলেন, ফোন ধরলে ওপাশ থেকে বলেন, আমি বিকাশের ঢাকা অফিস মহাখালী থেকে বলছি। এরপর কিছু তথ্য জানতে চান। তখন আমি ফোনের লাইনটা কেটে দেই। পরদিন বেলা ১২টা ৩৬ মিনিটে আমার ওই নম্বর  থেকে ১০ হাজার টাকা সেন্ডমানি করে নেওয়া হয়। বিষয়টি বিকাশের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় এসআরকে জানালে তিনি বলেন, আমাদের কিছু করার নেই। তিনি আরও বলেন, গত ১২ অক্টোবর রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমার পারসোনাল বিকাশের (০১৯১৪১৩৪১৪১) নম্বরে ০১৯০৬১১০৭২৪ নম্বর থেকে কল আসে। আমি তাদের আমার বিকাশের কোনো তথ্য দেইনি। কলটি রিসিভ করেছিলাম মাত্র। কল ধরেই আমার ১০ হাজার টাকা চলে গেল।

তিনি বলেন, ঘটনাটি নিয়ে পরদিন কলারোয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি। ডায়েরি নং-৫৪০। যে নম্বরে টাকা সেন্ডমানি করে নেওয়া হয়েছে বা যেখান থেকে ক্যাশআউট করা হয়েছে বিকাশ কর্তৃপক্ষ চাইলে খুব সহজেই বের করতে পারবে। কিন্তু তারা এসব ঘটনা রহস্যজনক কারণে এড়িয়ে যান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর