মঙ্গলবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

গর্ভবতী নয়, পেট ভর্তি মাদক

মির্জা মেহেদী তমাল

গর্ভবতী নয়, পেট ভর্তি মাদক

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে কোহিনুর ওরফে কইতর ও রুমা নামের দুই নারীকে আটক করে পুলিশ। এরা দুজনই গর্ভবতী। এর পরেও পুলিশ এদের গ্রেফতার করায় লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে পুলিশের ওপর। কিন্তু পুলিশ এর পরেও তাদের দুজনকে থানায় নিয়ে যায়। পরে তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করা হয়।  পুলিশ জানায়, এদের ওপর থেকে দেখে গর্ভবতী মনে হলেও তারা কিন্তু তা নয়। এরা মূলত মাদক ব্যবসায়ী। তাদের শরীরে বিশেষ কায়দায় মাদক বাঁধা থাকে। নিয়মিতভাবে তারা পেটে মাদক বেঁধে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়। সংশ্লিষ্টরা বলছে, বিগত কয়েক বছর ধরে নারী মাদকসেবীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে নারী মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মনে করছে, নারী হওয়ার কারণে আলাদা কিছু সুবিধা পাওয়ায় অপরাধে জড়াচ্ছে তারা। ইচ্ছা করলেই কোনো নারীর দেহে যখন-তখন তল্লাশি চালাতে পারেন না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য। মাদকে নারীর সম্পৃক্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, বিগত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ নারীকে মাদক পরিবহনে ব্যবহার করা হচ্ছে। নারীর স্পর্শকাতর অঙ্গগুলোতে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ইয়াবা বা গাঁজা বেঁধে দেওয়া হয়। ওপর থেকে এদের গর্ভবতী বলেই মনে হয়। এ কারণে কেউ সন্দেহ করে না। ফলে এদের আটক করতে বেশ বেগ পেতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। এ কারণেই মাদকের মূল হোতাদের প্রধান লক্ষ্য নারী। তিনি আরও বলেন, সাধারণভাবে দারিদ্র্যের সঙ্গে অপরাধের সম্পৃক্ততা রয়েছে। দেশে নারীকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেহেতু নারী এখনো পুরুষের তুলনায় উপার্জনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছেন, সে জন্য অর্থাৎ টাকার লোভ দেখিয়ে তাদের সব ধরনের অপরাধে জড়ানো হচ্ছে। মাদকের বিরুদ্ধে কোনো ছাড় নেই উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে। পেছনের হোতাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। এজন্য সবার সহযোগিতাও কামনা করেন তিনি।

নারী ছাড়াও পুরুষরাও প্রায় একই কায়দায় মাদক বহন করে আসছে। তবে এ ক্ষেত্রে পুরুষদের প্রক্রিয়াটা অভিনব কায়দার। সম্প্রতি পেটের ভিতরে নিয়ে ইয়াবা পাচারকালে তিন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। রাজধানীর মহাখালীর কলেরা হাসপাতাল গেটের সামনে থেকে তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১ হাজার ৮২০ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে। তারা হলেন- আসাদ (২৪), শুকুর আলী (২১) ও শফিকুল ইসলাম ওরফে শফিক (২১)। র‌্যাব-১ এর কছে তথ্য ছিল- একটি মাদক ব্যবসায়ী চক্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার থেকে ইয়াবা ট্যাবলেট এনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। মাদক ব্যবসায়ী চক্রটিকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে র‌্যাব-১ গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে এবং চক্রটির কতিপয় সদস্যকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-১ এর একটি দল মহাখালীর কলেরা হাসপাতালের সামনে থেকে ওই তিন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে। তবে তাদের দেহ তল্লাশি করেও মাদকদ্রব্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু তাদের কথাবার্তা অসংলগ্ন ও গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এক পর্যায়ে তারা তাদের পেটে ইয়াবা ট্যাবলেট আছে বলে স্বীকার করে। পরে ওই তিন মাদক ব্যবসায়ীর পেট থেকে ১ হাজার ৮২০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। গলধকরণের মাধ্যমে এসব ইয়াবা ট্যাবলেট পেটের ভিতর ঢুকিয়েছিল বলে জানায় ওই মাদক ব্যবসায়ী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর