বুধবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

সীমান্তের সুরক্ষায় রুশ কপ্টার কিনছে বিজিবি

আনিস রহমান

সীমান্তের সুরক্ষায় রুশ কপ্টার কিনছে বিজিবি

প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে মাদক ও অবৈধ অস্ত্রসহ সব ধরনের চোরাচালান বন্ধে বিশেষ নজর দিচ্ছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বিশেষ করে এখনো অরক্ষিত পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সুন্দরবন এলাকার ৯৭ কিলোমিটার সীমান্তকে নজরদারির আওতায় আনার কাজ হাতে নিয়েছে বিজিবি। দুর্গম পার্বত্যাঞ্চলে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য শিগগির কেনা হচ্ছে দুটি অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার। বিজিবির সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নতুন করে আরও চারটি সেক্টর, ১০টি ব্যাটালিয়ন, ডগ ট্রেনিং ও ব্রিডিং ইউনিট এবং নতুন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান সৃজনের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। বিজিবি-সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানান, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্তের ৫৩৯ কিলোমিটার অরক্ষিত এলাকায় নতুন ৬০টি বিওপি স্থাপনের মাধ্যমে ৪৪২ কিলোমিটার সীমান্ত ইতিমধ্যে নজরদারিতে নিয়ে এসেছে বিজিবি। আরও ২০টি বিওপি স্থাপনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম সীমান্তসহ অবশিষ্ট ৯৭ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্ত নজরদারির আওতায় আনার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সুন্দরবনের ৬০ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্ত এলাকায় দুটি ভাসমান বিওপি স্থাপনের ফলে ইতিমধ্যে ২০ কিলোমিটার এলাকা সুরক্ষিত হয়েছে। নতুন করে আরও তিনটি ভাসমান বিওপি স্থাপন প্রক্রিয়াধীন আছে। পর্যায়ক্রমে আরও কয়েকটি ভাসমান বিওপি স্থাপনের মাধ্যমে সুন্দরবনের অরক্ষিত সীমান্ত পুরোপুরি নজরদারির মধ্যে নিয়ে আসা হবে।

বিজিবি সূত্র জানান, বিজিবিকে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে বিওপি স্থাপনে সহায়তা, রেশনদ্রব্য ও লজিস্টিক সহায়তা পৌঁছানো, মুমূর্ষু বিজিবি সদস্যকে হাসপাতালে পৌঁছানো, জরুরি উদ্ধার অভিযান ও বিজিবির অপারেশনাল ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিজিবি এয়ার উইং করা হয়েছে। এ উইংয়ে শিগগিরই যুক্ত করা হবে দুটি নতুন এমআই-১৭১ই হেলিকপ্টার। এগুলো কেনা হবে রাশিয়া থেকে। এর ফলে বিজিবির এয়ার উইং পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করবে। অন্যদিকে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা জুড়ে পর্যায়ক্রমে সীমান্ত সড়ক নির্মাণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তের ৩১৭ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব সরকার অনুমোদন করেছে। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সেই সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া রামগড় থেকে কান্তালং পর্যন্ত ২৯০ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক বিজিবির তত্ত্বাবধানে নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্ত বরাবর পায়ে হেঁটে টহল দেওয়ার সুবিধার্থে বিভিন্ন সীমান্তে তিন ফুট প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে। বিজিবি সূত্র জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে বিজিবির কর্মকাে  তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ও উন্নত টেলিযোগাযোগব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আইসিটি ব্যাটালিয়ন স্থাপন করা হয়েছে। বিজিবি সদর দফতরের সঙ্গে সব রিজিয়ন, সেক্টর ও ব্যাটালিয়নের অপটিক্যাল ফাইবার কানেকটিভিটি স্থাপন, ডিজিটাল ভিএইচএফ পদ্ধতিতে ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন স্থাপন, ভিডিও কনফারেন্স সুবিধা, সীমান্তে টহলরত বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে তৎক্ষণাৎ যোগাযোগের লক্ষ্যে ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন ব্যবস্থা, অভ্যন্তরীণ দাফতরিক কর্মকাে  নিজস্ব ইমেইল ও বিজিবির নিয়োগ কার্যক্রমে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া বিজিবি সদর দফতরে একটি সর্বাধুনিক ডাটা সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। বিজিবি কর্মকর্তারা জানান, বিজিবির অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে এর সাংগঠনিক কাঠামো সম্প্রসারণের ধারাবাহিকতায় নবগঠিত রামু রিজিয়নসহ পাঁচটি রিজিয়ন সৃজন করে কমান্ড স্তর বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। নতুন চারটি সেক্টর, নবগঠিত নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর ব্যাটালিয়নসহ ১৭টি ব্যাটালিয়ন সৃজনসহ ১৩৬টি নতুন বিওপি স্থাপনের মাধ্যমে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা জোরদার করা হয়েছে। সুন্দরবন এলাকায় টহল পরিচালনার সুবিধার্থে দুটি ভাসমান বিওপি স্থাপন করা হয়েছে। বিজিবির সক্ষমতা বৃদ্ধির পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আরও চারটি সেক্টর, ১০টি ব্যাটালিয়ন, ডগ ট্রেনিং ও ব্রিডিং ইউনিট এবং নতুন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান সৃজনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর