বুধবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

বুড়িগঙ্গা পাড়ে ১২০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

কর্ণফুলীতেও অব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও চট্টগ্রাম

বুড়িগঙ্গা পাড়ে ১২০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

রাজধানীর বুড়িগঙ্গা পাড়ের কামরাঙ্গীর চরে গতকাল ১২০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে বিআইডব্লিউটিএ। কামরাঙ্গীর চরের নবাবচর মৌজায় হুজুরপাড়া, আশ্রাফাবাদ ও সাইনবোর্ড এলাকায় এ অভিযান চলে। এ সময় নদীর তীরভূমি দখল ও ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণের দায়ে তিনজনকে আটক করে জরিমানা করা হয়। এদিকে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো কর্ণফুলী নদীর তীরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।  বুড়িগঙ্গা পাড়ে বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের  (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তারা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করেন। কামরাঙ্গীর চরের হুজুরপাড়ায় আলাউদ্দিন মিয়ার এক তলা সাতটি পাকা দোকান ও গোডাউন অপসারণের মধ্য দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী হাকিম মোস্তাফিজুর রহমান। ছয় ঘণ্টা ধরে চলে এ উচ্ছেদ অভিযান। এ সময় একটি তিন তলা পাকা ভবন, ছয়টি দোতলা ভবন, ১১২টি ছোট-বড় টিনশেডের ছাপড়া, টংঘরসহ ১২০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এ ছাড়া নদীর তীরভূমি দখল ও ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগে শাহ সিমেন্টের পরিবেশক আরাফাত ট্রেডিংয়ের দুই কর্মচারী আবুল কালাম (৪৮) ও লিটন ইসলামকে (৪৭) আটক করা হয়। এ সময় প্রত্যেককে ১০ হাজার করে ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদ- দেওয়া হয়। ফারুক হোসেন নামের এক দখলদারকে আটক করে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদ- দেওয়া হয়। কংক্রিটের তৈরি অনেক স্থাপনাই এ সময় ভেঙে ফেলা হয়। সাইনবোর্ড এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় ২০ বছর আগে আমরা এখানে পাঁচ কাঠা জমি কিনে সেখানে তিন তলা ও এক তলার দুটি পাকা ভবন নির্মাণ করেছি। আমাদের ভবন তিনটি নদীর জায়গায় পড়েনি। অথচ বিআইডব্লিউটিএর লোকজন আমাদের ভবনটি উচ্ছেদ করেছে।’ হুজুরপাড়ার জসিম উদ্দিন মিয়ার এক তলা পাঁচটি পাকা ঘর উচ্ছেদকালে জসিম মিয়া বলেন, ‘২৫ থেকে ৩০ বছর আগে এখানে সাত কাঠা জমি কিনে আমি একটি এক তলা পাকা ঘর নির্মাণ করেছিলাম। আমি নদীর জায়গা দখল করিনি। বিআইডব্লিউটিএর লোকজন নদীর জায়গা বলে আমার স্থাপনা ভেঙে দিয়েছে।’

বিআইডব্লিউটিএর ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম-পরিচালক এ কে এম আরিফউদ্দিন বলেন, অবৈধ দখলদারদের নোটিস দেওয়া হয়নি এ অভিযোগ সঠিক নয়। নদীতীরে অবৈধ দখলদারদের স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে একাধিকবার নোটিস ও মাইকিং করা হয়েছে। বরং তারা এতে কর্ণপাত করেননি। আরিফউদ্দিন বলেন, কারও ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গার স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে না। নদীর জায়গাতেই গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে। উচ্ছেদ অভিযানের সময় উপস্থিত ছিলেন বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর এম মোজাম্মেল হক, উপপরিচালক মিজানুর রহমান, সহকারী পরিচালক নুর হোসেন, মো. আসাদুজ্জামানসহ পুলিশ ও আনসার সদস্যরা।

এদিকে কর্ণফুলী নদীর তীরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চলছে। গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো অভিযান পরিচালিত হয় নগরের সদরঘাট থানার কর্ণফুলী ঘাট এলাকায়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন পতেঙ্গা সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাহমিলুর রহমান। গতকালের অভিযানে ছোট-বড় ৩০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করে চার একর ভূমি উদ্ধার করা হয়।

অভিযানে দুই শতাধিক পুলিশ ও র‌্যাব সদস্য, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বিআইডব্লিউটিএ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সোমবার উচ্ছেদ অভিযানের প্রথম দিন নদীতীরের এক কিলোমিটার এলাকার প্রায় ৮০টি অবৈধ স্থাপনা দখলমুক্ত করা হয়। সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাহমিলুর রহমান বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দ্বিতীয় দিনে ৩০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে প্রায় চার একর ভূমি উদ্ধার করা হয়। অভিযান অব্যাহত থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘যে কোনো মূল্যে কর্ণফুলী নদীর পাড়ে বেহাত হওয়া জমি উদ্ধার করা হবে। এ ব্যাপারে ভূমিমন্ত্রী ও জেলা প্রশাসক অনড় অবস্থানে আছেন। তাই কারও কোনো অনুরোধ বা তদবির রাখা হচ্ছে না।’

জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ কর্ণফুলী নদীর দুই তীরে গড়ে ওঠা স্থাপনা সরাতে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দেয়। ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১ কোটি ২০ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। অর্থ সংকুলান না হওয়ায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়নি। ভূমিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে অর্থ সংস্থানের পর অভিযান শুরু হয়।

সর্বশেষ খবর