বৃহস্পতিবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
প্রথম দিনেই জমেছে রিহ্যাব মেলা

বেসরকারি আবাসন খাতে সহায়তা দেওয়া হবে : গণপূর্তমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বেসরকারি আবাসন খাতে সহায়তা দেওয়া হবে : গণপূর্তমন্ত্রী

গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম গতকাল রিহ্যাব মেলা উদ্বোধন করেন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জানিয়েছেন, সরকার বেসরকারি আবাসন খাতকে পরিপূর্ণ সহায়তা ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেবে। তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের চেয়ে বড় শক্তিশালী কেউ নয়। আমরা নিজেদের ক্ষমতাবান ভাবতে চাই না। কেউ    অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে, তার গন্তব্য হবে জেলখানা।’ গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলানগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত রিহ্যাব আবাসন মেলা, ২০১৯-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সংগঠনটির সিনিয়র সহসভাপতি ভোলা-৩ আসনের সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন। অতিথি বক্তা ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। স্বাগত বক্তব্য দেন রিহ্যাবের প্রথম সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূইয়া মিলন। পরে অতিথিরা ফিতা কেটে রিহ্যাব আবাসন মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

অনুষ্ঠানে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম আবাসন ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা আইন মেনে পরিবেশবান্ধব ইমারত, ভবন নির্মাণ করবেন। এমন কিছু করবেন না যাতে পরবর্তীতে ফ্ল্যাটের বা বাড়ির মালিককে খেসারত দিতে হয়। যেসব আবাসন ব্যবসায়ী ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা (ফ্রড) করেন, তাদের নাম দেন, আমরা ব্যবস্থা নেব। সরকারের থেকে বড় ক্ষমতাবান কেউ নয়। আপনাদের কারও অপরাধের কারণে বা সঠিকভাবে বাড়ি নির্মাণ না করার কারণে যেন মালিক বিপন্ন না হন। এমনভাবে ভবন নির্মাণ করবেন না যেন পরে সরকার বা রাজউক তা ভেঙে ফেলতে বলে। কিছু কিছু ব্যবসায়ী এমনটি করেন। আপনারা এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।’ পূর্বাচল বা অন্য জায়গায় স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণে জমি বরাদ্দ চেয়ে রিহ্যাবের দাবি বিবেচনা করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এ প্রস্তাবটি নতুন। আমি ভেবে দেখব এজন্য কী করা যায়।’ এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘আবাসন ব্যবসায় কিছু অসাধু লোক ঢুকে গেছে। তারা রিহ্যাবের সদস্য হয় না। মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেয় না। তাদের কারণে বিরাট সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমার কাছে কয়েকজন অভিযোগ করেছেন, পাঁচ-ছয় বছর আগে জমি নিলেও এখন পর্যন্ত ভবনের নির্মাণকাজই শুরু করেনি আবাসন প্রতিষ্ঠান। এসব কারণে মানুষ আস্থা হারায়। ফ্ল্যাট কিনতে ভয় পায়।’

নতুন ভ্যাট আইন প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘নতুন ভ্যাট আইন চলতি বছর কার্যকর হবে। অবশ্য সব ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করে জর্জরিত করব না। যেসব খাত জনকল্যাণমূলক হবে, সেখানে ছাড় দেওয়া হবে। তবে যেটুকু ভ্যাট নির্ধারণ করা হবে, তা দিতে হবে।’

রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল বলেন, ‘স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য ফ্ল্যাট তৈরি করে দিতে পারবে রিহ্যাব। সরকার প্লট বা জমি দিলে সাধারণ মানুষের জন্য রিহ্যাব সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দিতে পারবে। রিহ্যাব সদস্যরা এখন পর্যন্ত ২ লাখ ফ্ল্যাট ও ৭০ হাজার প্লট ক্রেতাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এ মুহূর্তে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করার ক্ষমতা রিহ্যাব সদস্যদের নেই। তাই সরকারের কাছ থেকে জমি পেলে সাধারণ মানুষের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দিতে পারবে রিহ্যাব সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো।’

রিহ্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন বলেন, ‘স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য দীর্ঘমেয়াদি গৃহঋণ সুবিধা চালু করতে ২০ হাজার কোটি টাকার পুনরর্থায়ন তহবিল গঠন করা জরুরি। একই সঙ্গে প্লট ও ফ্ল্যাটের নিবন্ধন খরচ কমিয়ে ৮ শতাংশ করা হোক।’

এদিকে গতকাল মেলা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর পরই সেখানে আসতে থাকেন শত শত ক্রেতা- দর্শনার্থী। বিকালে তাদের পদচারণে প্রথম দিনেই জমে ওঠে রিহ্যাব আবাসন মেলা, ২০১৯। রিহ্যাব নেতারা জানিয়েছেন, এ মেলায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সাভারে ৪০ লাখ থেকে শুরু করে ৩ কোটি টাকার ফ্ল্যাট আছে। প্রতিবারের মতো এবারও আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পূর্ণ প্রস্তুত ও আধাপ্রস্তুত ফ্ল্যাট ও প্লট ক্রেতা-দর্শনার্থীদের সামনে উপস্থাপন করা হচ্ছে। প্রথম দিন হিসেবে গতকাল ভালো সাড়া দিয়েছেন দর্শনার্থীরা।

মেলার আয়োজকরা জানিয়েছেন, পাঁচ দিনব্যাপী রিহ্যাব আবাসন মেলা চলবে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্রেতা-দর্শনার্থীরা মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন। টিকিটের প্রবেশমূল্য ৫০ টাকা। মেলায় মোট ২০২টি স্টল থাকছে। কো-স্পন্সর হিসেবে আছে ৩০টি প্রতিষ্ঠান। আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এবার ২০টি বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ও ১৪ অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে। মেলার অন্যান্য তথ্য পাওয়া যাবে www.rehabfair2019.com এ ওয়েবসাইটে।

সর্বশেষ খবর