রবিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

জামায়াতের সবই চলে গোপনে

সাংগঠনিক কার্যক্রম চলমান, আমির নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু, উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জামায়াতে ইসলামীর মগবাজারের কেন্দ্রীয় ও পল্টনের ঢাকা মহানগরী দুটি কার্যালয়েই তালা ঝুঁলিয়ে দেয় পুলিশ। কয়েকদিনের ব্যবধানে সারা দেশে জামায়াতের কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে প্রকাশ্যে আর কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি এ দলটিকে। পর্যায়ক্রমে দল হিসেবে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ ও প্রতীক ‘দাড়িপাল্লা’ নিষিদ্ধ হয়। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইতিমধ্যে দলটির প্রথম সারির শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুদে র রায় কার্যকর হয়েছে। অনেকে বিচারাধীন। দলটিকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিভিন্ন সংগঠন সোচ্চার রয়েছে। এ বিষয়টিও আদালতে বিচারাধীন। এতকিছুর পরও থেমে নেই জামায়াতের কার্যক্রম। সব কার্যক্রম চলছে গোপনে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় জামায়াত। জোটপ্রধান বিএনপির প্রতীক ‘ধানের শীষ’ নিয়ে জামায়াত ২২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। নিবন্ধনহীন এ দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে উপজেলা নির্বাচনের মাঠে থাকবে না। তবে দলের কেউ প্রার্থী হলে বাধা দেওয়া হবে না। জামায়াতের বিভিন্ন জেলার নেতারা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ঘুমন্ত থাকলেও ভিতরে ভিতরে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। কর্মকৌশল ঠিক করা হচ্ছে। আড়ালে থেকেই দলটি নতুন করে সাংগঠনিক শক্তি বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির রাজপথে না থাকলেও প্রশাসনের নজর এড়িয়ে সংগঠন পরিচালনা করছে। সম্প্রতি সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিয়ে সংবাদ মাধ্যমে আবারও আলোচনায় এসেছেন দলটির নেতারা। দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম জানান, আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম সব সময় চলমান থাকে। জানা যায়, এরইমধ্যে জেলা আমির নির্বাচন শুরু হয়েছে। চলতি মাসে সারা দেশের আমির নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ করে আনার কথা রয়েছে। এই মুহূর্তে সারা দেশে বিশেষ টিম নির্বাচন পরিচালনা করছে। এ মাসের শেষে অথবা আগামী মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ নির্বাচন কমিশন থেকে সারা দেশের নির্বাচিত আমিরদের নাম ঘোষণা হতে পারে। জামায়াতের সর্বশেষ সংশোধিত গঠনতন্ত্রের ৩৩ ধারায় বলা হয়েছে, জেলার রুকনদের ভোটে ২ বছরের জন্য আমির নির্বাচিত হবেন। জামায়াতের বিভিন্ন জেলার নেতারা জানান, গঠনতান্ত্রিক মেয়াদ অনুযায়ী জেলা আমির নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ মাসেই শেষ হবে জেলা আমির নির্বাচন। এর পর শপথ নেবেন নির্বাচিতরা। তারপর বর্তমান জেলার শূরার গঠন হবে। পর্যায়ক্রমে উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও ইউনিট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয় এক দায়িত্বশীল নেতা জানান, আমির নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিছু জায়গায় এখনো শুরু হয়নি। এর মধ্যে খুলনা রয়েছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য বলছে, সারা দেশে জামায়াতের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে দায়িত্বশীলরা বলছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোট না করেই ৩৬ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়ে চমক দেখিয়েছিলেন জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা। এ ছাড়া ১২৬টি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছিলেন এ দলের প্রার্থীরা। ৩৬ উপজেলায় এ দল জয়ী হয়েছিল নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে। এর আগে ২০০৯ সালে তৃতীয় উপজেলা নির্বাচনে ২২টিতে চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছিলেন জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা। জয়ী হয়েছিলেন ৩৭ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান ও ১০ উপজেলায় নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে। তবে ২০১৪ সালে উপজেলায় নির্বাচিত জামায়াত সদস্যদের অনেকেই বিভিন্ন মামলার আসামি হয়ে পরে বরখাস্ত হয়েছিলেন। জামায়াতের ৩৬ চেয়ারম্যানের ১০ জন শপথ নিতে আসার সময় গ্রেফতার হন। পরে বিভিন্ন সময় ২৪ জন সাময়িকভাবে বরখাস্ত হন।

অতীত অভিজ্ঞতা ‘ষারাপ’ হলেও একাদশ নির্বাচনের ফলে ‘হতাশ’ স্থানীয় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে উপজেলা নির্বাচনে কৌশলে মাঠে থাকতে চায় জামায়াত। দলটির একজন কর্মপরিষদ সদস্য জানান, বিএনপি বর্জন করায় সরকার লোক দেখানোর জন্য হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ উপজেলা নির্বাচনের আয়োজন করতে পারে। বিএনপি ভোটে অংশ না নিলে আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোটারদের সামনে বিকল্প পছন্দ থাকবে না। এ পরিস্থিতিতে ন্যূনতম সুষ্ঠু ভোট হলে জামায়াতের সুযোগ রয়েছে চমক দেখানোর।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর