শিরোনাম
রবিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

জীবন্ত লাশ

মির্জা মেহেদী তমাল

জীবন্ত লাশ

একটি মাঠের কোনায় সাড়ে তিন হাত মেপে কবর খোড়া হয়েছে।

চারপাশ ঘিরে রেখেছে অসংখ্য মানুষ। সবাই চোখ বড় করে কবরের দিকে তাকিয়ে। দেখতে চাচ্ছেন তারা কী হয়। আলখেল্লা পরা এক  লোক বয়ান দিচ্ছেন। তার পাশেই শুইয়ে রাখা হয়েছে এক তরুণকে। কিন্তু কাফনের কাপড় পরা নয়। টি শার্ট আর জিন্সের প্যান্ট পরা। চোখ মুখ কাপড় দিয়ে বাঁধা। এই যুবককেই কবরে রেখে মাটি চাপা দেওয়া হবে।

নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের রহমানপুরে বাদশা নামের এক ব্যক্তির বাড়ির সামনের মাঠে এই কবর দেওয়ার আয়োজন। আলখেল্লা পরা লোকটিকে সবাই জাদুকর বলে ডাকেন। ঝাড়ফুঁক দেওয়া তার পেশা। এবার তিনি নতুন ভেলকির আয়োজন করেছেন। জীবন্ত লাশ দাফন। সেই দৃশ্য দেখতেই গ্রামবাসী সেখানে এসেছেন। কিছু সময় পরই মুখ বেঁধে কবরে শুইয়ে দেওয়া হলো জীবিত সেই যুবককে। দাফনের আনুষ্ঠানিকতা মেনে রীতিমতো মাটিচাপা দিতে শুরু করল তারা। কবরের ওপরে একটু আগেও যে জীবিত লোকটি কথা বলেছে সবার সঙ্গে, তাকেই জীবন্ত মাটিচাপা! উৎসুক জনতার চোখ কবরের দিকে। হঠাৎ পাল্টে যায় জাদুকরের সুর। উপস্থিত উৎসুক জনতার উদ্দেশ্যে জাদুকর বলল, ‘যা আছে আনুন, নইলে ভিতরের মানুষটাকে বাঁচানো যাবে না। মানুষটি মরে গেলে এই এলাকার কেউই বাঁচবে না।’ তার মুখে এমন ভয়ঙ্কর কথা শুনে আশপাশের সবাই যার কাছে যা আছে হন্তদন্ত হয়ে আনতে শুরু করলেন। কেউ নগদ টাকা, কেউ ধান, কেউ কাপড় এনে কবরের সামনে রাখলেন। এ সময় পাশ দিয়ে ফোর্সসহ যাচ্ছিলেন বাগাতিপাড়া থানার এসআই খাইরুল ইসলাম। মানুষের ভিড় ঠেলে কাছে গিয়ে দেখেন জীবিত মানুষ কবরে রেখে অভিনব কৌশলে করা হচ্ছে প্রতারণা। জাদুকর পরিচয় দেওয়া তিন প্রতারককে আটক করে পুলিশ। তারা হল- রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী ইউনিয়নের নূরনগর গ্রামের মৃত মোসলেম দারোগার ছেলে মনোয়ার হোসেন (৩৩), একই গ্রামের মৃত পিয়ার আলীর ছেলে পলাশ (২৯) ও ঝিনাগ্রামের মাসুদ আলীর ছেলে সেলিম হোসেন (৩২)। পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, রহিমানপুর থেকে ফেরার সময় বাদশা নামের এক ব্যক্তির বাড়ির সামনে মানুষের ভিড় দেখতে পাই। কাছে গিয়ে দেখি সেলিমকে কবরে শুইয়ে মাটিচাপা দিয়েছে মনোয়ার ও পলাশ। এরপর প্রতারণা শুরু করে তারা। বলতে থাকে, কথামতো সাহায্য না করলে সেলিমের মৃত্যু হবে এবং ওর মৃত্যু এলাকবাসীর জন্য অমঙ্গল বয়ে আনবে। এভাবে মিথ্যা বলে তারা উপস্থিতি জনতার কাছ থেকে টাকাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র হাতিয়ে নিচ্ছিল। এ সময় আমরা কবর থেকে জীবন্ত সেলিমকে উদ্ধার করি এবং প্রতারণার অভিযোগে ওই তিনজনকে আটক করি। প্রতারকরা তাদের সহযোগীকে মাটিচাপা দিলে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার জন্য একটি ব্যবস্থা তারা রেখে দেয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারা দেশেই একটি চক্র এভাবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। তবে একটু সচেতন হলেই প্রতারণার শিকার হয়তো হতে হবে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর