শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
নদী বাঁচাও ৫

পুনর্ভবা এখন খেলার মাঠ

হয় ফসলের আবাদ

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

পুনর্ভবা এখন খেলার মাঠ

দিনাজপুরের একসময়ের খরস্রোতা নদ-নদীগুলোর কোনোটিতে চলছে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ, কোথাও গোচারণ, কোথাও শিশুদের খেলাধুলা, নয় তো বালু উত্তোলন। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় দখলে আর দূষণে বিপর্যস্ত নদ-নদীগুলো। অনেক এলাকায় ভরাট করে চলছে বেদখল। অথচ নদ-নদী বাঁচিয়ে রাখতে কাগজে পরিকল্পনা থাকলেও বাস্তবে নেই। অন্যদিকে শুকনো মৌসুমের আগেই নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়ায় হারিয়ে গেছে অনেক দেশি প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী। এর ফলে জেলেরা দিন দিন পেশা বদলিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। তবে তিনটি নদীতে ড্রেজিং করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। আবার সেচসুবিধার জন্য তিন নদীতে স্থাপন করা হয়েছে রাবার ড্যাম।

পুনর্ভবা, গর্ভেশ্বরী, ঢেপাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর বুকে এখন ধান, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ হচ্ছে। কোথাও দেখা যাচ্ছে ধু-ধু বালুচর। চরের কোথাও হাঁটুজল অথবা কোথাও জলবিহীন গর্ত। যেন বালু বুকে নিয়ে নদী জলের জন্য করছে আর্তনাদ। অথচ অতীতে ঢেপা, গর্ভেশ্বরী, পুনর্ভবা, শাখা যমুনাসহ বিভিন্ন নদ-নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র। এসব নদ-নদী দিয়ে চলত বড় বড় পালতোলা নৌকা। আজ আর নেই সেই অবস্থা।

অনেক নদ-নদী হারিয়েছে গতিপথ বা অস্তিত্ব। অনেক স্থানে নদ-নদী টিকে আছে শুধু নামে। খনন ও সংস্কার না করায় এসব নদ-নদীর নাব্য হারিয়েছে। এতে এ অঞ্চলের পরিবেশ মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ছে। আবার দখল আর ভরাটে নদ-নদীগুলোর পানির ধারণক্ষমতা কমে যাওয়ায় বর্ষাকালে দেখা দিচ্ছে বন্যা। বর্ষায় পানি থাকলেও নভেম্বর?থেকে মার্চ পর্যন্ত নদ-নদীর বুক হয়ে ওঠে বিস্তীর্ণ মাঠ। দিন দিন ফাঁকা মাঠগুলোয় অবাধে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর নির্মাণ করেছেন স্থানীয়রা। খেলার মাঠ না পেয়ে নদীতে খেলা করছে শিশু-কিশোররা।

দিনাজপুর জেলার ওপর দিয়ে ১৯টি নদ-নদী প্রবাহিত। এগুলো হলো- ছোট-বড় আত্রাই, করতোয়া, কাঁকড়া, ঢেপা, পুনর্ভবা, গর্ভেশ্বরী, ছোট যমুনা, ইছামতী, ভুল্লী, পাথরঘাটা, নর্ত, ছোট ঢেপা, বেলান, নলসীসা, তুলসীগঙ্গা, চিরি, মহিলা, তেঁতুলিয়া (তুলাই), ভেলামতী। এসব নদ-নদীর মোট দৈর্ঘ্য ৭২৪ কিলোমিটার। ১৩ উপজেলায় ছোট-বড় বিল রয়েছে ৭৫টি। কৃষি বিভাগ জানায়, শুষ্ক মৌসুমে জেলার ছোট-বড় সব নদ-নদীর চরে সহস্রাধিক চাষি ৯০৬ হেক্টর জমিতে ব্রি-২৮ ও ৩২ জাতের বোরো ধান, তরমুজ, আলু, মরিচ, সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করছেন। ভূমিহীন কৃষক সুযোগ পেলেই এসব নদ-নদীর চরে চাষাবাদ করেন। দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী সিদ্দিকুর জামান নয়ন বলেন, ‘খনন না করায় ঢেপাসহ কয়েকটি নদ-নদীর প্রস্থ ও গভীরতা কমে প্রায় সমতল হয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে পলি ও বালু পড়ে নদ-নদীগুলো ভরাট হয়ে মরা নদীতে পরিণত হয়। জেগে ওঠা চরে চলছে চাষাবাদ। আবার বর্ষা মৌসুমে দেখা দিচ্ছে কোনো কোনো নদীতে বন্যা। আবার শহরের পানি নিষ্কাশনে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এজন্য গত বন্যার পরই আমরা নদ-নদীর প্রবাহ ঠিক রাখতে পুনর্ভবা, ছোট ও বড় ঢেপা ও গর্ভেশ্বরী নদীতে ড্রেজিং করার প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি।’ নদ-নদী দখল হয়ে যাচ্ছে- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নদী শাসন করার কাজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের। কিন্তু নদীর ভূমির দায়িত্ব ভূমি অফিসের। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ভূমি অধিদফতরের যৌথ সমন্বয়ে দখলমুক্ত করতে পরিকল্পনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে নদী রক্ষা কমিশন রয়েছে। এ বিষয়টা তারা দেখে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর