শুক্রবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিবৃতি ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সীমাবদ্ধ ইসলামী দলগুলো

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

বিবৃতি ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সীমাবদ্ধ ইসলামী দলগুলো

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লেজুড়বৃত্তির কারণে তেজহীন  ইসলামী দলগুলোর কর্মতৎপরতা এখন বিবৃতি ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ক্ষমতার মোহে এরা বড় দলগুলোর লেজুড়বৃত্তি করেছিল। লক্ষ্য ছিল মন্ত্রী-এমপি হয়ে ক্ষমতার স্বাদ নেওয়া। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে ভোট করার চেষ্টা করেছে অধিকাংশ ইসলামী দল। কিন্তু নৌকা প্রতীক জোটেনি। ভোটের পর এখন আঁধারে হাতড়ে বেড়াচ্ছে। রাজনীতির আকাশে তাদের দশা পথহারা পাখির মতো। তবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নিজস্ব প্রতীক হাতপাখা নিয়ে সর্বোচ্চ ২৯৯ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, ওলি আউলিয়ারা এদেশে ইসলাম প্রচার করায় মানুষ সুফিবাদে বিশ্বাসী; এতে ইসলামী ধারার দলগুলোর ভালো করার কথা। কিন্তু তারা নিজস্ব প্লাটফর্ম তৈরি না করে অন্যের প্লাটফর্মে রাজনীতি করতে অভ্যস্ত হওয়ায় সুবিধা করতে পারেনি। ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, আলেমদের মধ্যে সংকীর্ণতা, হিংসা-ফাসাদ ও লোভের মানসিকতার জন্যই ইসলামী ধারার দলগুলো এগোতে পারছে না। নেতৃত্বের অভাবেই ইসলামী ধারার দলগুলো সুবিধা করতে পারছে না বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি মাওলানা আবদুর রকিব অ্যাডভোকেট। জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের  মেয়াদ দেড় মাস অতিবাহিত হলেও গঠনমূলক কোনো ইস্যু দাঁড় করাতে পারছে না দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের শরিক ইসলামী দলগুলোর নেতাদের অবস্থাও একই। তারা বলেন, সময় এলে কথা বলব। একই অবস্থা সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা ইসলামী দলগুলোরও। এ ছাড়া স্বতন্ত্র ইসলামী দলগুলোরও নেই কর্মসূচি। বিগত দিনগুলোতে ছোটখাটো ইস্যুকে পুঁজি করে ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিলেও বর্তমানে বিবৃতি ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিই হচ্ছে বেশির ভাগ দল এবং সংগঠনের ভরসা। সূত্র জানায়, ইসলামী দল ও সংগঠনগুলো ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। ধর্মীয় ইস্যু ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে মাঠে একদা তারা সরব থাকত। তারা বলছেন,  কোনো কিছু করতে গেলেই অনুমতি নিতে হয়।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুমতি পাওয়া যায় না। চাপ-আতঙ্কের কারণেই ঘরোয়া কর্মসূচিতে বন্দী হয়ে পড়ছে তারা। এ ছাড়া বিভক্তি বিভাজনের ঘটনাও দলীয় কর্মকাে  স্থবিরতার অন্যতম কারণ বলে সূত্র জানায়। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ১১টি ইসলামী ধর্মীয় দল। এর বাইরে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। রাজনৈতিক দলের বাইরে হেফাজতে ইসলামসহ শত শত সংগঠন রয়েছে। তাদেরও তেমন কোনো কর্মসূচি নেই। জামায়াত অজ্ঞাত স্থান থেকে গণমাধ্যমে নিয়মিত বিবৃতি ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠাচ্ছে । দলের আমির মকবুল আহমাদ সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেছেন, সরকার অঘোষিতভাবে জামায়াতের প্রকাশ্য কাজকর্ম নিষিদ্ধ করে রেখেছে। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ইসলামী দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংগঠন এখন মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীমের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তারা মাঝে মধ্যে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বিগত দিনে সরব থাকলেও বর্তমানে এ সংগঠনের কর্মসূচি পালনেও বাধা  দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন দলের আমির  সৈয়দ রেজাউল করীম। দলটির কার্যক্রম চলে পুরানা পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে। কার্যালয় এবং আশপাশে প্রায়ই কর্মসূচি পালন করে দলটি। ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা মহানগরীর সহসভাপতি আলহাজ আবদুর রহমান বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলেই প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে কর্মসূচি পালন করি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে থাকা একমাত্র ইসলামী দল বাংলাদেশ তরিকত  ফেডারেশন। ১৪ দলভুক্ত বলে সংগঠনটি সভা-সমাবেশের জন্য প্রশাসনের অনুমতি পেতে সমস্যা হয় না। তবু রাজপথে কোনো কর্মসূচি নেই দলটির। অতি সম্প্রতি দলটির সাবেক মহাসচিব এম এ আউয়াল ইউনাইটেড মুসলিম উম্মাহ ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ শাখার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে থাকার কারণে ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সভা-সমাবেশের অনুমতি পায় না বলে জানান  নেতা-কর্মীরা। তারা বলেন, যেখানে বিএনপির মতো দল সভা-সমাবেশের অনুমতি পায় না, সেখানে আমরা কীভাবে পাই। অন্যদিকে দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন মাঠের কর্মসূচিতে সক্রিয় না থাকায় দলগুলোর মধ্যে বিরোধ ও দ্বন্দ্ব বেড়েছে। হেফাজতে ইসলামের মধ্যেও কয়েকটি ধারা। কেন্দ্র ও মহানগর কমিটির মধ্যে সমন্বয়ের অভাবও রয়েছে।

সর্বশেষ খবর