শুক্রবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

পাকস্থলী ভাড়া

মির্জা মেহেদী তমাল

পাকস্থলী ভাড়া

রাজধানীর দক্ষিণখান থানার পূর্ব গাওয়াইর থেকে গ্রেফতার হন দুই রোহিঙ্গাসহ ছয়জন। এরা প্রত্যেকে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হচ্ছে, দুই রোহিঙ্গার পেট থেকে বের করা হয় ইয়াবা। পুলিশ জানতে পেরেছে, শুধু এরাই নন, কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা এখন তাদের পাকস্থলী ভাড়া দিচ্ছেন। মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের পাকস্থলী ভাড়া নিয়ে তাতে করে ঢাকায় ইয়াবা পাচার করছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোহিঙ্গা শিবিরে পাকস্থলী ভাড়া দেওয়া ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে ইয়াবা বহন করে নিয়ে এলেই তারা মোটা অঙ্কের টাকা পাচ্ছেন। যে কারণে পাকস্থলী ভাড়ার এ পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন তারা। দক্ষিণখান থেকে রোহিঙ্গা যুবক সেলিম মোল্লা, রোহিঙ্গা শিশু আফছার ওরফে বাবুল এবং হোতা মামুন শেখ, শরিফুল, ফাহিম সরকার ও রাজীব হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৩ হাজার ৩৫০টি ইয়াবা ট্যাবলেট। তবে রেজোয়ান নামে দলের অন্য এক হোতাকে গ্রেফতার করা যায়নি। পুলিশ জানায়, ইয়াবা ব্যবসায়ীরা রোহিঙ্গাদের টাকার লোভ দেখিয়ে দলে টানছেন। ইয়াবা ট্যাবলেট স্কচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে ক্যাপসুল বানিয়ে পানি দিয়ে খাইয়ে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। পুলিশ জানতে পারে, ইয়াবা ব্যবসায়ী মামুন শেখ ও তার সহযোগী রেজোয়ান দীর্ঘদিন ধরে কৌশলে ইয়াবা পাচার করে আসছেন। রেজোয়ান কক্সবাজারে বাসা ভাড়া নিয়ে ইয়াবা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠান আর মামুন শেখ ঢাকায় ওই ইয়াবা ট্যাবলেট গ্রহণ করেন। পরে রেজোয়ানের সঙ্গে রোহিঙ্গা বহনকারীদের কক্সবাজারের উখিয়ার লেদা ক্যাম্পে পরিচয় হয়। উখিয়ার রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে অবস্থানরত সেলিম ও আফছারকে টাকার লোভ দেখিয়ে ইয়াবা ট্যাবলেট ঢাকায় পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব করেন। রাজি হলে তাদের মাধ্যমে রেজোয়ান বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ইয়াবা বহন করে ঢাকায় নিয়ে আসা শুরু করেন। রেজোয়ান ইয়াবা ট্যাবলেট স্কচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে ক্যাপসুল তৈরি করেন। প্রতি সপ্তাহে ৭০টি ক্যাপসুল সেলিম মোল্লা ও ৩০টি ক্যাপসুল বাবুলকে পানি দিয়ে ওষুধের মতো করে খাওয়ান। বাস ও ট্রেনে তারা ঢাকায় আসেন। পথে আর কিছু খান না। এভাবে প্রতি মাসে তিন থেকে চার বার ঢাকায় যাতায়াত করে আসছিলেন। পৌঁছার পর মিল্ক অব ম্যাগনেসিয়াম জাতীয় ওষুধ খাইয়ে ইয়াবাগুলো পাকস্থলী থেকে পায়ুপথ দিয়ে বের করে নেওয়া হয়। ওই ইয়াবা তারা মামুন শেখ, ফাহিম, শরীফ ও রাজীবের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। প্রতি চালানে পাকস্থলী ভাড়ার বিনিময়ে সেলিম মোল্লা রেজোয়ানের কাছ থেকে ১৫ ও আফছার বাবুল ১০ হাজার টাকা পান। এরপর ইয়াবা ট্যাবলেটগুলো তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করেন।

হালে পাকস্থলী ভাড়ার পেশা রোহিঙ্গা শিবিরে জনপ্রিয় হয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গা নারীরাও এ পেশায় নামছেন। তারা মৃত্যুকে তোয়াক্কা না করেই পাকস্থলীতে করে ইয়াবা পাচার করে দিচ্ছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, পাকস্থলীতে ইয়াবা বহন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোনো সময় বহনকারীর মৃত্যু হতে পারে। তাদের মতে, পাকস্থলীতে ইয়াবা বহন করলে যে কোনো সময় নাড়ি ছিদ্র কিংবা পেঁচিয়ে যেতে পারে। পাকস্থলীতে ইয়াবা প্রবেশ করানোর পর তারা পায়ুপথ দিয়ে বের করেন। যদি বের না হয়, তাহলে জরুরি অস্ত্রোপচার করা ছাড়া উপায় থাকবে না। এ ছাড়া বহনকারী যে পলিথিনে ভরে ইয়াবা গিলে ফেলেন, সেই পলিথিন যদি পেটের ভিতরে ছিঁড়ে যায়, তাহলে ইয়াবার বিষ শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। এতে হঠাৎ মৃত্যুও হতে পারে তার।

মাদক নির্মূলে চলমান অভিযানের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিত্যনতুন কৌশলে পাচার হচ্ছে ইয়াবা। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে রীতিমতো বোকা বানিয়ে সক্রিয় ইয়াবা কারবারিরা। নারকেল, আম, জুতা, মাছ, মোবাইল ফোন সেটের ভিতর, পায়ুপথে করে ইয়াবা বড়ি পাচার হচ্ছে। মাদক ব্যবসায়ীরা অভাবী মানুষকে টার্গেট করে একের পর এক ইয়াবার চালান পৌঁছাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর