রবিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

দখলমুক্ত রাখা গেল না আনিসুল হক সড়ক

তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড সড়ক

জিন্নাতুন নূর

দখলমুক্ত রাখা গেল না আনিসুল হক সড়ক

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে উদ্ধার করা সড়ক আবার অবৈধ দখল হয়ে যাচ্ছে। গতকাল তোলা ছবি -জয়ীতা রায়

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বিভিন্ন সফল কর্মকা-ের একটি হচ্ছে তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড সড়কটি দখলমুক্ত করা। কিন্তু প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে শহরের অন্যতম ব্যস্ত এই সড়কটি আবার দখলদারদের দখলে চলে যায়। বর্তমানে নিয়ম ভেঙে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখের সামনেই ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান চালকরা সেই সড়ক এবং এর সংযুক্ত আশপাশের সড়কের ওপর গাড়ি রাখছেন। ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ সড়কটি দখলমুক্ত রাখার চেষ্টা করলেও তা আবার বেদখল হয়ে যায়। এর আগে গত বছর সেপ্টেম্বরে রাজধানীর তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড-সংলগ্ন এই সড়কটির নতুন নামকরণ হয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের নামে রাখা হয় সড়কটির নাম। আনিসুল হকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে সড়কের নামফলকটি উন্মোচন করেন ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই নামফলকের ঠিক পাশের রাস্তাই আবার ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানের দখলে চলে গেছে।

দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তরের এই অকালপ্রয়াত মেয়র দীর্ঘদিন ধরে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান চালকদের দখলে থাকা তেজগাঁওয়ের এই ব্যস্ত সড়কটি চালকদের অবৈধ দখল থেকে মুক্ত করেন। সড়কটি আবার পথচারী ও যানবাহনের নির্বিঘ্ন চলাচলের জন্য উপযোগী করে দেন। তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডের পাশের সড়কটি মুক্ত হয় যানজট থেকে। অথচ আনিসুল হকের দখলমুক্ত করা সড়কটি এখন আবার বেদখলে চলে গেছে। ১৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সরেজমিন তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, স্ট্যান্ডের সামনের সড়কটির উভয় পাশে লাইন ধরে ট্রাক দাঁড় করে রাখা হয়েছে। এসব ট্রাকে যদিও তখন কোনো চালককে দেখা যায়নি। সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা আনিসুল হক সড়কের নামফলকের ঠিক পাশে, যেখানে ভূমি জরিপ অধিদফতর অফিসের প্রবেশপথের সম্মুখভাগ। এখান থেকে শুরু করে পাশে যে সরু সড়ক ট্রাকস্ট্যান্ডের সামনে গিয়ে মিলেছে এর পুরোটাই হাজার খানেক ট্র্রাকের সারিতে দখল হয়ে আছে। অবস্থা এমন যে এখানে যানবাহন চলাও কষ্টকর। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সড়কের ওপর ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান রাখার কারণ সম্পর্কে কয়েকজন ট্রাকচালকের কাছে জানতে চাইলে তারা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখন যেসব ট্রাকের সারি দেখছেন তারা রাতে মালামাল নিয়ে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়েছে।’ অথচ নিয়ম অনুযায়ী রাত ১২টার আগে ট্রাকগুলো মাল নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিতে পারে না। ভূমি জরিপ অধিদফতরের সামনে গিয়ে দেখা যায়, আনিসুল হকের নামফলক থেকে শুরু করে অফিসটির পাশ দিয়ে যাওয়া পুরো রাস্তা, যা ঘুরে গিয়ে আবার ট্রাকস্ট্যান্ডের সামনে শেষ হয়েছে, তা দখল করে রেখেছেন ট্রাকচালকরা। অধিদফতরের অফিসের সামনে থাকা কয়েকজন ট্রাকচালক জানান, ট্রাকস্ট্যান্ডে স্থান না পেয়ে এসব গাড়ি এখানে তারা রেখেছেন। রাত-দিন সব সময়ই এখানে ট্রাকের জটলা লেগে থাকে। এতে ভূমি জরিপ অধিদফতরের কর্মরত লোকজন ও এখানে আসা মানুষের সমস্যা হলেও ট্রাকচালকরা বিষয়টি খুব একটা আমলে নেন না। ডিএনসিসির ভারপ্রাপ্ত মেয়র জামাল মোস্তফা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড-সংলগ্ন সড়টি যে আবার দখল হয়ে  গেছে, এমন তথ্য আমি শুনেছি। আমরা আসছে সোমবার থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় সড়কটি দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছি। এ বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করে বিস্তারিত ঠিক করব। শুধু এই সড়কটি নয়, সিটি করপোরেশনের চলমান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পর্যায়ক্রমে আমরা ঢাকা শহরের সব দখল করা সড়কে উচ্ছেদ অভিযান চালাব।’ তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রশিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দিনে আমরা সড়টিতে ট্রাক যাতে অবৈধভাবে পার্ক না করতে পারে সেদিকে লক্ষ রাখি। কিন্তু রাতে কিছু ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান সড়কটিতে দেখা যায়। ট্রাকগুলো গন্তব্যে যাওয়ার আগে সড়কটিতে অবস্থান নেয়। তবে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান চালকরা যাতে সেখানে অবৈধভাবে পার্ক না করেন এ ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর