রবিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

স্টাডি হেল্প সেন্টার

মির্জা মেহেদী তমাল

স্টাডি হেল্প সেন্টার

‘সরকারিভাবে প্রাইভেট পরীক্ষা দিন। অর্জন করুন স্বপ্নের সার্টিফিকেট।’ এমন চটকদার বিজ্ঞাপন দেখা যায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে, বৈদ্যুতিক পিলারে, গণপরিবহনের জানালায়, এমনকি দৈনিক পত্রিকায়। শুধু তা-ই নয়, ফেসবুকে প্রাইভেট পরীক্ষার নামে খোলা বিভিন্ন পেজেও দেখা যায় এমন প্রচারণার বাহার। এমনকি মোবাইল ব্যবহারকারী গ্রাহকদের কাছেও পাঠানো হয় এসএমএস। এভাবেই রাজধানীজুড়ে প্রাইভেট পরীক্ষার নামে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে বেশ কয়েকটি চক্র। সাহাবুদ্দিন আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থী এদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রাইভেট পরীক্ষার জন্য ৩০ হাজার টাকা দিয়েছিল। সাহাবুদ্দিন পরীক্ষা তো দিতেই পারেনি, টাকাগুলো নিয়ে পালিয়েছে প্রতারক চক্র। এমন ঘটনা ঘটছে রাজধানীসহ দেশজুড়ে। এসব প্রতিষ্ঠান চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে শিক্ষার্থী সংগ্রহ করে বিভিন্ন কলেজে ভর্তি করিয়ে এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স, ডিগ্রি, মাস্টার্সের সার্টিফিকেট পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কৌশলে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়। অথচ ঢাকা শিক্ষা বোর্ড, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা যায়, এসএসসি পাসের পর টানা ৩ বছরের বেশি শিক্ষাবিরতি থাকলে ওই শিক্ষার্থীকে আবারও উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু তাকে নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তির সুযোগ না দিয়ে ভর্তি করানো হয় প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে। সারা দেশের বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষা বোর্ডের নির্ধারিত সরকারি কলেজগুলোতেই কেবল প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে ভর্তির সুযোগ রয়েছে। দীর্ঘ সময়ের শিক্ষা বিরতি থাকলেও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এসএসসি থেকে শুরু করে অনার্স-মাস্টার্সের বিভিন্ন প্রোগ্রাম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিগ্রি পাস কোর্স এবং মাস্টার্স পাস কোর্সেও শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করতে পারেন।

এসব বিষয়ে সাধারণ মানুষের অজ্ঞতাকে পুঁজি করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গজিয়ে উঠেছে কয়েকটি প্রতারক চক্র। যারা প্রতিনিয়ত প্রতারিত করছে সাধারণ মানুষকে। ‘সার্টিফিকেট লাগবে? সরকারিভাবে প্রাইভেট পরীক্ষা দিন’, ‘স্টাডি হেল্প সেন্টার’, ‘একটি সার্টিফিকেট বদলে দেবে জীবন’ এরকম নানা প্রলোভনযুক্ত কথা দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে লিফলেট সেঁটে, ফেসবুকে পেজ খুলে এমনকি মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে শিক্ষার্থীদের ফাঁদে ফেলা হচ্ছে।

মহাখালী ডিওএইসএসের ৩২ নম্বর রোড, তেজগাঁও এলাকার নাবিস্কোর হাজি মরণ আলী রোড, উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে, ফার্মগেট, বনানী, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীতে প্রায় অর্ধশত প্রতিষ্ঠান রয়েছে; যারা প্রাইভেট পরীক্ষার নামে ফাঁদ পেতে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছে। এমন একটি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দেখে রাজধানীর মতিঝিলের হাটখোলা রোডের একটি অফিসে কথা বলতে গেলে সেখানকার একজন কর্মী বলেন, ‘যারা এসএসসি পাস করার পর বেশ কয়েক বছর পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছেন তাদের ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে উচ্চমাধ্যমিকে প্রাইভেটে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। এছাড়া উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে ডিপ্লোমা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে ডিগ্রি পাস কোর্স, এমনকি মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েও সার্টিফিকেট পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সেক্ষেত্রে স্ট্যাডি গ্যাপ কোনো ব্যাপার নয়।’ মহাখালী ডিওএইচএসের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতারিত হয়েছেন এক পরীক্ষার্থী। সম্প্রতি এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়া ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তি নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘আমার এসএসসি পরীক্ষার পরে কয়েক বছর গ্যাপ (বিরতি) ছিল। পরে এ প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পাওয়ার পর এখানে আসি। পরে ভর্তিও হয়েছিলাম। কিন্তু আমার কাছ থেকে বিভিন্ন ধাপে প্রায় ৩০ হাজার টাকা নিয়েছে। প্রথম ধাপে ভর্তি বাবদ দিয়েছিলাম ৫ হাজার টাকা। এরপর পরীক্ষায় বসার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের শিট ও সাজেশন ধরিয়ে প্রতি মাসে নিয়েছে আরও প্রায় ৫ হাজার টাকা। পরীক্ষায় বসার ঠিক আগ মুহূর্তে দাবি করা হয় আরও ৩০ হাজার টাকা। সেই টাকা না দিলে আমাকে অ্যাডমিট কার্ড দেবে না বলে হুমকি দেয়। পরে অনেক আকুতি-মিনতি করে বলেছি, ২০ হাজার দেব। এর মধ্যে ১০ হাজার টাকা দিয়ে অ্যাডমিট কার্ড নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছি, সঙ্গে এসএসসির সার্টিফিকেট রেখে দিয়েছে। বাকি ১০ হাজার টাকা এখন দেওয়ার কথা। না হলে আমার এসএসসির সার্টিফিকেট দেবে না।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর