সোমবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ থেকে কৃষক নেবে সৌদি আরব

চাষাবাদ ও পশুপালন উভয় কাজই করবেন তারা, কাজে লাগানো হবে উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ আলফা ঘাস চাষে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

চুক্তিভিত্তিক চাষাবাদের জন্য বাংলাদেশ থেকে কৃষক নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে সৌদি আরব। আগ্রহী কৃষকদের সুদান এবং উগান্ডায় চাষাবাদ ও পশুপালনের কাজে লাগানো হবে। এরই মধ্যে সৌদি আরবের শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন সৌদি এগ্রিকালচার অ্যান্ড লাইভস্টক কোম্পানি (সালিক) এ বিষয়ে তাদের আগ্রহের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে জানিয়েছে।  সূত্রগুলো জানায়, গত ৭ জানুয়ারি সালিক-এর সিইও রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাসকে কৃষক নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। কোম্পানিটি বলছে, তারা চাষাবাদ ও পশুপালন উভয় কাজের জন্যই বাংলাদেশের কৃষক নিতে চান। বিশেষ করে সুদানে উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ আলফা আলফা ঘাস চাষে বাংলাদেশি কৃষকদের কাজে লাগাবেন তারা। বাংলাদেশ চাইলে জয়েন্ট ভেঞ্চার পদ্ধতিতে সৌদি কোম্পানির সঙ্গে সুদান ও উগান্ডায় কৃষি খাত পশুপালনে বিনিয়োগ করতে পারে। জানা গেছে, সৌদি আরবের কৃষকরা আলফা আলফা ঘাস চাষ বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ এই ঘাস উৎপাদনে মাটিতে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। সে কারণে সৌদি কোম্পানিগুলো এখন সুদান ও উগান্ডায় কৃষি আবাদ ও পশুপালনে নজর দিয়েছে। এরই মধ্যে ওই দুটি দেশে চীন ও ভারতও জমি লিজ নিয়ে চাষাবাদ শুরুর উদ্যোগ নিয়েছে। তবে ব্যাপকভিত্তিতে চাষাবাদের তেমন কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই সৌদি আরবের। সে কারণেই মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি চাষাবাদের জন্য কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের সহায়তা নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো আরও জানায়, এ বিষয়ে সৌদি আরবের  সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত করতে মৎস্য ও পশুসম্পদ বিভাগের সহায়তায় কাজ করছে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। আগামী মাসে সৌদি আরবের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফরের কথা রয়েছে। ওই সফরে এ বিষয়ে কোম্পানিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে আরও আলোচনা হবে। এ ছাড়া কৃষিকাজের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে বিডার একটি প্রতিনিধি দলও সুদান এবং উগান্ডায় যাওয়ার কথা রয়েছে। বিডার কর্মকর্তারা জানান, সুদান ও উগান্ডায় কৃষি উৎপাদন ও পশুপালনে বাংলাদেশের বিনিয়োগের বিষয়টি আগে থেকেই সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে। এখন সৌদি আরবও চাইছে বাংলাদেশের কৃষকদের কাজে লাগিয়ে সুদানে চাষাবাদ করতে। আফ্রিকার সুদান উগান্ডার মতো দেশগুলোতে সৌদি কোম্পানির মাধ্যমে বাংলাদেশি কৃষকদের নিয়োগ করার সুযোগ সৃষ্টি হলে এটি দেশের কৃষি খাতের উন্নতি ও সংশ্লিষ্ট কৃষক পরিবারের আয় বাড়াতে সহায়তা করবে। পাশাপাশি রেমিট্যান্স আয়ও বাড়বে। সুদানে ১৩৬ মিলিয়ন হেক্টর জমির মধ্যে ৪০ শতাংশ কৃষিজমি। এসব জমিতে তুলা, আখ, গম ইত্যাদি চাষাবাদ হচ্ছে। দেশটিতে গরু, বাছুর, ভেড়া, ছাগল ও উটসহ বিভিন্ন পশুসম্পদের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশের কৃষি বিজ্ঞানীদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে সুদানে কৃষিখাতে সাফল্য আনা সম্ভব বলে মনে করছেন বিডার কর্মকর্তারা। জানা গেছে, সুদানে জমি লিজ নিয়ে কৃষিকাজসহ প্রাণিসম্পদ ও মাছ চাষের সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখতে গত অক্টোবরে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে প্রধান করে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। ওই সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে সুদানে দীর্ঘমেয়াদে জমি ইজারা নিয়ে কৃষিকাজসহ প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য চাষের বিষয়ে এক সভা হয়। ওই সভায় দীর্ঘমেয়াদি জমি ইজারা নিয়ে কৃষিকাজসহ প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য চাষ করার বাস্তবতা এবং সুদানে নীতিমালা পরিবীক্ষণ করার জন্য বিডার নির্বাহী  চেয়ারম্যানকে আহ্বায়ক করে বাস্তবায়ন টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। কমিটি এ বিষয়ে রোডম্যাপ তৈরি করবে। দেশটির নীতিমালা যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন দেবে। ইজারা নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ, কী কাজ করা হবে, কীভাবে এবং কবে থেকে কাজ শুরু করা হবে, তা ঠিক করবে কমিটি। বাংলাদেশে এ-সংক্রান্ত নীতিমালা পর্যালোচনা ও প্রয়োজনীয় নীতিমালা সংশোধনের উদ্যোগও নেবে কমিটি।

সর্বশেষ খবর