বুধবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

রামরায় দীঘি অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত

আবদুল লতিফ লিটু, ঠাকুরগাঁও

রামরায় দীঘি অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত

রং-বেরঙের অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলার ঐতিহাসিক রামরায় দীঘির শান্ত পরিবেশ। প্রচণ্ড শীত থেকে বাঁচতে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও হাজার হাজার অতিথি পাখির আগমনে দৃষ্টিনন্দন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা এ পাখিগুলোর প্রতি সদয় দৃষ্টি রাখছে অতিথির ন্যায়। বিশাল এ পুকুরের পানিজুড়ে অতিথি পাখির বিচরণ আর কলকাকলি দেখলে মনে হবে কোনো শৌখিন ব্যক্তির হাঁস বা পাখির ফার্ম। এ দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছে শত শত নারী-পুরুষ ও শিশু। বিশেষ করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও মহিলাদের সংখ্যাই বেশি। দর্শনার্থীরা এখানে মোবাইল ফোনে ছবি তোলা আর সেলফি তুলতে ব্যস্ত সময় পার করে। সারা দিন দীঘির পানিতে সাঁতার কাটলেও সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই দীঘির পাড়ে লিচু গাছে আশ্রয় নেয় অতিথি পাখিগুলো। ভোর হলে পুনরায় খাবারের সন্ধানে দীঘির পানিতে নেমে পড়ে ঝাঁক বেঁধে। এ যেন অতিথি পাখির মিলনমেলা। পাখি দেখতে আসা ভূমি রায় জানান, এত পাখি একসঙ্গে কোনো দিন দেখিনি। একবার দেখলেই মন জুড়িয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা আলী আহসান হাবীব বলেন, সারা দিন অনেক মানুষ আসে এসব অতিথি পাখি দেখার জন্য। এদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে আছে দীঘি এলাকা। এলাকাবাসী সজাগ থাকেন কেউ যেন এদের শিকার করতে না পারে।

সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুল হক বলেন, পাখির আগমনে ওই এলাকার যেমন সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে  তেমনি প্রকৃতির ভারসাম্যও রক্ষা হচ্ছে। এ পাখিগুলো যাতে কেউ শিকার করতে না পারে সেজন্য আমরা এলাকাবাসী সবাই আন্তরিক।

রানীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী আফরিদা জানান, এসব পাখি আমাদের এই রানীশংকৈলের রামরায় দীঘির সোন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। পাখিগুলো প্রতি শীতকালেই আসে।

রামরায় দীঘি বরেন্দ্র ভূমিতে প্রাচীন জলাশয়গুলোর মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম দীঘি। ৯০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৫৫০ মিটার আয়তনের এ প্রাচীন দীঘির গভীরতা ৮.৯ মিটার। ৫২ দশমিক ২০ একর জমি জুড়ে এই রামরায় দীঘি। পুকুরের জলভাগের আয়তন ৩৩ দশমিক ৮৬ একর এবং পাড় ১৮ দশমিক ৩৪ একর। দিনাজপুর গ্যাজেটেরিয়া এবং ড. সেনের দিনাজপুরের ইতিহাস বই থেকে জানা যায়, আঠারশ শতাব্দীর শেষের দিকে এ অঞ্চল ছিল মালদুয়ার পরগনার অন্তর্গত। সে সময় এ এলাকার জমিদারি ছিল নাথপন্থি দুই চিরকুমারী সহোদর রানীর হাতে। বড় রানী ও ছোট রানী বলে পরিচিত এ দুই রানী ছিল অত্যন্ত প্রজাবৎসল। প্রজাদের পানির কষ্ট নিবারণের জন্য তারা ৩৬০টি পুকুর খনন করেন। রামরায় দীঘি তার মধ্যে অন্যতম। দীঘির চারপাশের পাড়ের উচ্চতা প্রায় ২২ ফুট। এ দীঘিকে ঘিরে ১ হাজার ২৬০টি লিচু গাছ ও পাড়গুলোর শীর্ষে এবং পেছনে প্রায় ১০ হাজার বনজ ও ঔষধি গাছ  রোপণ করা হয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর