সোমবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবা

সবকিছুর নিয়ন্ত্রণে দালাল চক্র

নোয়াখালী হাসপাতাল

আকবর হোসেন সোহাগ, নোয়াখালী

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলছে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা। একটি সক্রিয় দালাল চক্র এখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করছে। ওই চক্রের হাতে জিম্মি সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা। এ ছাড়া নিম্নমানের খাবার ও ওষুধ সংকটের অভিযোগ রয়েছে। জেলার প্রায় ৩৫ লাখ মানুষের সর্ববৃহৎ  স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে অধিকাংশ রোগীই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও একই অবস্থা বিরাজ করছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী রোগী ও স্বজনদের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালকে ঘিরে গড়ে উঠেছে প্রায় ৩০টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এ সরকারি হাসপাতালের অধিকাংশ ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ান এসব বেসরকারি ক্লিনিকের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এসব সেন্টারের প্রায় দুই শতাধিক দালাল সক্রিয়। সম্প্রতি এক অভিযানে জেনারেল হাসপাতাল থেকে ৯ জন দালালকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহত্তর নোয়াখালী ও চরাঞ্চল থেকে আশা অসহায় রোগীরা দালালদের খপ্পরে পড়ে চিকিৎসার নামে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। এ হাসপাতালে বিগত সময়ের তুলনায় বর্তমানে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিন নতুন রোগীসহ প্রায় গড়ে ৭শ রোগী ভর্তি থাকে। এখানে বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে চিকিৎসাসেবা নিতে আসে প্রায় ৮শ জন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রোগী জানান, ডাক্তারদের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ চাইলে ওয়ার্ডে থাকা নার্সরা ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনার জন্য স্লিপ ধরিয়ে দেয়। গত ৮ ফেব্রুয়ারি এ হাসপাতালের ৯নং ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৮ কার্টন সরকারি ওষুধসহ ধরা পড়ে সিনিয়র এক নার্স। জানাজানি হলে এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। হাসপাতালে প্রতিদিন ২৫০ জনের জন্য খাদ্য বরাদ্দ থাকে। ভর্তি বাকি রোগীদের বাইরে থেকে খাবার সংগ্রহ করতে হয়। বরাদ্দকৃত ২৫০ জনের জন্য খাবারও নিম্নমানের বলে অভিযোগ করেন ভর্তি রোগীরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম জানান, ২৫০ জন রোগীর জন্য খাবার বরাদ্দ রয়েছে। তিনি ভর্তি সব রোগীর খাবার বরাদ্দের আশা করেন। তিনি বলেন, আগে বাসিসহ কিছুটা নিম্নমানের খাবারের অভিযোগ থাকলেও বর্তমানে তেমন নেই। জানা যায়, নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালসহ কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই বিশুদ্ধ খাবার পানি ও বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই। প্রয়োজনের তুলনায় বেড সংখ্যা খুবই কম। সরকার এখানে চিকিৎসাসেবায় যা দিচ্ছে তাও অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে রোগীরা এর সুফল পাচ্ছে না।। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাদের প্রাইভেট চিকিৎসা ব্যবসা চাঙ্গা করতে বিভিন্ন রকম রহস্যজনক আচরণ করে থাকেন রোগীদের সঙ্গে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যতটুকু সেবা প্রদানের সুযোগ আছে তা জনগণ যথাযথভাবে পাচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে শতকরা ৫০ শতাংশ ‘না’ বলে জানান। ডাক্তাররা রোগীদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন না এমন কথা বলেছেন ২০ শতাংশ মানুষ। এছাড়া বহির্বিভাগের ডাক্তাররা সকাল ৮টায় আসার কথা থাকলেও অনেকে ৯/১০টার পরে আসেন। আবার অনেকে ১২টার পর থাকেন না। এমন অভিযোগ সেবা নিতে আশা অনেকের। এখানে একটি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন আনা হলেও গত দুই বছরেও তা চালু করা হয়নি। প্যাথলজি বিভাগে কর্মরতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাহাড়সম। টেকনিশিয়ানরা সকাল ৯-১০টায় এসে দুপুর ১২টার পর থাকেন না। জানতে চাইলে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, নার্সদের মধ্যে কিছুটা সমস্যা আছে। সঠিক মনিটরিং করা হলে কোনো সমস্যা থাকবে না।

সর্বশেষ খবর