সোমবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
পিলখানা হত্যাকাণ্ড

১০ বছরেও চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি দুই মামলার

নিজস্ব প্রতিবেদক

পিলখানা হত্যাকা-ের দশ বছর পেরোলেও এ ঘটনায় দায়ের করা মামলা দুটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। হত্যা মামলায় প্রায় দেড় বছর আগে ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপিল নিষ্পত্তি করে ১৩৯ আসামির     মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে হাই কোর্ট রায় দিলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়নি। ফলে মামলা-পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারছেন না কেউ। উভয়পক্ষের (রাষ্ট্র ও আসামি) আইনজীবীরাই জানিয়েছেন, তারা রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপির জন্য অপেক্ষা করছেন। অন্যদিকে এ ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলা চলছে ধীরগতিতে। ৬৫০ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৭৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে এ পর্যন্ত। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি গুলি ও বোমার বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে রাজধানী। দাবি-দাওয়ার নামে পিলখানায় তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস-বিডিআরের উচ্ছৃঙ্খল জওয়ানরা বিদ্রোহ শুরু করেন। ওই দিন ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন নিহত হন বিপথগামী বিডিআর সদস্যদের হাতে। টানা একদিন এক রাত শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি মোকাবিলা করে ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণে আসে। ঘটনার সময় চার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থিত পিলখানায় ৬ হাজার ৯০৩ জন বিডিআর সদস্য কর্মরত ছিলেন। নারকীয় এ ঘটনার পর বিডিআর আইন, বাহিনীর নাম, পোশাক, পতাকা ও মনোগ্রামসহ অনেক কিছুতেই পরিবর্তন আনা হয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের ইতিহাসে একসঙ্গে এত সেনা কর্মকর্তা হত্যার ঘটনার এমন কোনো নজির নেই। এ ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকার তৃতীয় দায়রা জজ আদালত ১৫২ জন আসামিকে মৃত্যুদ  দেওয়ার পাশাপাশি ১৫৯ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদ  দিয়ে রায় দেয়। এরপর ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপিল নিষ্পত্তি করে ১৩৯ আসামিকে মৃত্যুদ  ও ১৮৫ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদ  দিয়ে রায় দেয় হাই কোর্ট। রায়ে ২২৮ আসামিকে ৩ থেকে ১০ বছরের কারাদ  দেওয়া হয়। মৃত্যুদ প্রাপ্ত আসামি সংখ্যার দিক দিয়ে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ মামলায় হাই কোর্ট দুই দিন ধরে প্রায় ১০ হাজার পৃষ্ঠার রায় ঘোষণা করে। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, আট বছর আগে সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে সংঘটিত বিদ্রোহের পেছনে ছিল স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র। বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করে। বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার। জজ আদালতের মতো হাই কোর্টও বলেছে, ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রির মতো কাজে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে জড়ানো ঠিক নয়। রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পেলে আপিল বিভাগে আপিল করবে বলে জানিয়েছে আসামিপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষও পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি পেলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবে। জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা এখনো রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পাইনি। কোনো আসামির বিষয়ে আপিল করবেন কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, রায়ের কপি পাওয়ার পর সেটা যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাব। এ বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা আপিলের সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। এখন রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পেলেই সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করব।

অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনের মামলা : চাঞ্চল্যকর এই হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে ঢিমেতালে। মাসে এক দুই দিন করে চলে কার্যক্রম। ৬৫৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ১০ বছরে মাত্র ৭৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করতে পেরেছেন বিচারক। আগামী ৪ মার্চ এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য রাখা হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৭ ফেব্রুয়ারি মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। বিস্ফোরক আইনের এ মামলার বিচার দীর্ঘায়িত হওয়ায় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা হতাশ। জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, মাসে দুই দিন করে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। ৭৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। এ বছরই এই মামলার বিচার শেষ হবে বলে আশা করেন তিনি।

কর্মসূচি : বিজিবির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এই দিনটি শাহাদাতবার্ষিকী হিসেবে পালন করবে। আইএসপিআর জানায়, এ উপলক্ষে সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় আজ সকাল ৯টায় বনানী সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন নিরাপত্তা বিভাগের সচিব, বিজিবির মহাপরিচালক স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বাদ আসর পিলখানার কেন্দ্রীয় মসজিদে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল আয়োজন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এতে উপস্থিত থাকবেন।

 

সর্বশেষ খবর