বুধবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
নদী বাঁচাও ১৮

গতিহারা গোপলার বুকে দখলের রাজত্ব

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার)

গতিহারা গোপলার বুকে দখলের রাজত্ব

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার একমাত্র নদী গোপলা। একসময়ের খরস্রোতা নদীটি আজ সরু খাল। বালু আর পলিতে ভরাট হয়ে গিয়ে কবেই গতি হারিয়েছে নদীটি। বর্তমানে গোপলার বুকে চলছে দখলের রাজত্ব। দীর্ঘদিন ধরে প্রবহমান নদীর জায়গা দখল হতে থাকলেও দখলদারদের কবল থেকে তা উদ্ধারে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই। ঠিক একইভাবে বালু আর পলিতে ভরাট হয়ে গিয়ে অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলা গোপলার পুরনো গতিপথ খননে নেওয়া হচ্ছে না কোনো প্রকল্প। আর এ অবস্থা চলতে থাকলে  একসময় বাস্তবতা থেকে হারিয়ে গিয়ে শুধু মানচিত্রেই থাকবে নদীটি। অথচ বর্ষায় উজান থেকে নেমে আসা সমস্ত পানি এই নদী দিয়েই প্রবাহিত হয়ে হাইল হাওরে গিয়ে পতিত হয়। জানা যায়, উপজেলার বিলাশছড়া ও উদনাছড়া মতিগঞ্জ নামক স্থানে এসে একত্রে মিলিত হয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর গোপলা নাম ধারণ করেছে নদীটি। একসময় এই নদী দিয়ে স্টিমার, জাহাজ চলাচল করত। এ অঞ্চলের চা-বাগানের ও ব্যবসা-বাণিজ্যের মালামাল আসত জাহাজে করে। জাহাজ ভেড়ানোর জেটির নামানুসারে আজও সদর ইউনিয়নের একটি এলাকার নাম জেটি রোড নামে পরিচিত রয়েছে। সরেজমিন জিলাদপুর ও উত্তর উত্তরসুর এলাকায় গোপলা নদীর পুরনো গতিপথ ঘুরে দেখা গেছে, নদীর জায়গা দখল করে বেশ কিছু মৎস্য খামার গড়ে উঠেছে। সংখ্যায় ২০টির মতো হবে। এ ছাড়া নির্মাণ করা হয়েছে ঘরবাড়ি, ব্রিজ-কালভার্ট। আবার অনেকেই নতুন করে দোকান, ঘরবাড়ি নির্মাণ করছেন। মরা গোপলার কোথাও শুকনো জমি, কোথাওবা কচুরিপানায় ভরে আছে। আর কোথাও খালে পানি জমে মরা গোপলা তার অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে। এলাকার আবদুল গফুর বলেন, ১৫-২০ বছর আগে এই নদীর গতিপথ এলাকার প্রভাবশালীরাই বদলে দিয়েছেন। এ সুযোগে তারা নদীর ভূমি তাদের ভূমির সঙ্গে মিশিয়ে নিয়েছেন। নতুন গতিপথের কারণে ভূমি হারানোর শিকার হয়েছেন অনেক জমির মালিক। এখন বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নেমে পাড়ের একাধিক স্থান ভেঙে গিয়ে ঘরবাড়ি প্লাবিত করে। পানিতে নিমজ্জিত হয়ে নষ্ট হয়ে যায় জমির ফসল। তাই নদীটি খনন করে পুরনো গতিপথ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান এলাকাবাসী। এতে করে নদীটি তার নাব্যতা ফিরে পাবে। মতিগঞ্জ এলাকার বেলাল আহম্মেদ বলেন, গোপলার নতুন গতিপথের কারণে তার ১২ বিঘা জমি নদীতে চলে গেছে। আর নদীটি বর্তমানে ব্যক্তিমালিকানাধীন ভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় প্রশস্ততা কমে গেছে। তিনি বলেন, তিন থেকে চার কিলোমিটারের মৃত নদীর পুরনো পথ খনন করলে নদীটি যেমন প্রশস্ত হবে, তেমনি এলাকার কৃষকরা উপকৃত হবেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করব। অবৈধ দখলদার থাকলে উচ্ছেদ করে দেব। প্রয়োজনে নদীটি খননেন জন্য প্রস্তাব পাঠনো যাবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর