শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

জমে উঠেছে ডাকসু নির্বাচন

ক্যাম্পাস ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণায় প্রার্থীরা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

জমে উঠেছে ডাকসু নির্বাচন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের বাকি আছে আর মাত্র ১০ দিন। শিক্ষার্থীদের বহুকাক্সিক্ষত এই নির্বাচনের দিন যতই এগোচ্ছে, ততই প্রার্থী আর সমর্থকদের নিয়মিত কার্যক্রমে মুখর হয়ে উঠছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এরই মধ্যে গতকাল যাচাই-বাছাই শেষে প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকায় বাদ পড়া স্বতন্ত্র ও বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা নিজেদের প্রার্থিতা ফিরে  পেতে ডাকসুর সভাপতির (উপাচার্য) কাছে আবেদন করেছেন। এদিকে প্রার্থীরা প্রচারণাও শুরু করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসই নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও সক্রিয় রয়েছেন প্রার্থীরা। জানা যায়, দীর্ঘ প্রায় ২৮ বছর পর আগামী ১১ মার্চ হতে যাচ্ছে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইতিমধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও  রিটার্নিং অফিসারের  কাছে তা দাখিল করেছেন স্বতন্ত্র ও ছাত্র সংগঠনগুলোর মনোনীত বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা। ওই সব মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বুধবার প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করে ডাকসুর রিটার্নিং অফিস। এতে কেন্দ্রীয় সংসদের প্রার্থী তালিকায় বাদ পড়েন বাম জোটের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী উম্মে হাবিবা বেনজীর, আলোচিত জিএস পদপ্রার্থী আসিফুর রহমানসহ মোট সাতজন। আর হল সংসদের বিভিন্ন পদে প্রার্থিতা বাতিল হয় ২৪ জনের। বাদ পড়া এই প্রার্থীরা গতকাল নিজেদের প্রার্থিতা ফিরে ডাকসুর সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে আবেদন করেছেন। এই আবেদনের নিষ্পত্তি শেষে আগামী ৩ মার্চ বিকাল ৪টায় প্রকাশ করা হবে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা। তবে ২ মার্চ বেলা ১টার আগে কোনো প্রার্থী চাইলেই তার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ পাবেন। এর পরই শুরু হবে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা। তবে ঘোষণা দিয়ে না হলেও অনেকটা অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু করেছেন স্বতন্ত্র ও বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা। কয়েক দিন ধরে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়, দাবিদাওয়া তুলে ধরে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন তারা। গতকাল ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান ঘুরে এমন চিত্র চোখে পড়ে। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে শিক্ষার্থীদের সমস্যা-সংকটের কথা শুনছেন প্রার্থীরা। ছাত্র সংগঠনের প্রার্থীরা পুরো প্যানেল নিয়ে ভোটারদের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছেন এককভাবেই। শিক্ষার্থীদের সমর্থন আদায়ে তাদের দাবিদাওয়া ও অভিযোগ জানতে বিভিন্ন হলের প্রবেশদ্বারের সামনে অভিযোগ বাক্স স্থাপন করেছে ছাত্রলীগের সমর্থন পাওয়া ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ’। একই সঙ্গে ছাত্রলীগের প্যানেলে স্থান পাওয়া প্রার্থীদের নিজেদের নির্বাচনী কৌশল সাজাতে কর্মীদের সঙ্গে অনেক রাত পর্যন্ত আলাপ-আলোচনা করতে দেখা গেছে।

এদিকে ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন পর সক্রিয়ভাবে নিয়মিত কর্মসূচি পালন করছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। শুরু থেকেই নির্বাচনে সংগঠনটির অংশগ্রহণ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিলেও শেষ মুহূর্তে প্যানেল ঘোষণা করেছে তারা। ছাত্রদলের প্যানেলে স্থান পাওয়া প্রার্থীরা অনানুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। গতকাল বেলা ২টার দিকে বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে নিয়ে মধুর ক্যান্টিনে আসেন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান। নিজেদের পক্ষে সমর্থন কুড়াতে মধুর ক্যান্টিন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, কলা ভবন, ক্যাম্পাস শ্যাডো, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, রেজিস্ট্রার ভবন এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন সংগঠনটির মনোনয়ন পাওয়া অনেকেই। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তারাও এখন প্রচারণা শুরু করেনি। দলীয় দাবিদাওয়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে সমর্থন আদায়ে কাজ করেছেন বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা ‘প্রগতিশীল ছাত্র জোটের’ প্রার্থীরা। সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউট, কলা ভবন, ক্যাম্পাস শ্যাডো ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার এলাকায় প্রচারণা চালিয়েছেন তারা।

শুধু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতেও সক্রিয় রয়েছেন প্রার্থীরা। সাধারণ ছাত্রদের কাছে পরিচিত হতে ফেসবুক ওয়ালে নিজের পরিচিতি তুলে ধরছেন তারা। ছবিসহ ভার্চুয়াল পোস্টারও পোস্ট করতে দেখা গেছে তাদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বৃহত্তর ফেসবুক গ্রুপগুলোতেও নিয়মিত পোস্ট করছেন স্বতন্ত্র ও বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীরাও নিজের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে অনলাইনে প্রচারণা চালাচ্ছেন। সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমেজ লেগেছে ডাকসু নির্বাচনের।

হলগুলোতে পর্যাপ্ত বুথ স্থাপনের দাবি ‘স্বাধিকার স্বতন্ত্র জোট’-এর : ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে আংশিক প্যানেল ঘোষণা করেছে স্বাধিকার স্বতন্ত্র জোট। এতে সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে আবু রায়হান খানকে। গতকাল দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্যানেল ঘোষণা করা হয়। এ সময় হলসমূহে পর্যাপ্ত বুথের ব্যবস্থা করতে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানায় সংগঠনটি। সংবাদ সম্মেলনে পঠিত লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, হলগুলোর নিজস্ব বুথে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মোট ৬ ঘণ্টা ভোট গ্রহণ চলবে। ধারণা করা যায়, ৩৮ জন প্রার্থী বেছে নিতে একজন ভোটার তিন মিনিটের বেশি সময় পাবেন না। এই অল্প সময়ে সবার ভোটদানের সুযোগ নিশ্চিত করতে ভোটকেন্দ্রে পর্যাপ্ত বুথের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এ সময় হলগুলোর শিক্ষার্থী অনুপাতে ১১টি থেকে ৩৮টি পর্যন্ত বুথ স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকতা ছেড়ে ডাকসু নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী হওয়া এম আর আসিফুর রহমানের প্রতিও সমর্থন ব্যক্ত করে সংগঠনটি।

হল থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে : আসন্ন ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্রদলের অমর একুশে হলের সহ-সভাপতি (ভিপি) ও (জিএস) সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থীসহ চারজনকে হল থেকে ধাাক্কাধাক্কি করে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি কামরুজ্জামান শুভর বিরুদ্ধে। গতকাল দুপুরে হলের ক্যান্টিনে এ ঘটনা ঘটে। আজ এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দেবে ছাত্রদল।

ভুক্তভোগীরা জানান, অমর একুশে হল সংসদে ছাত্রদলের ভিপি পদপ্রার্থী মোসাদ্দেক রহমান সৌরভ ও জিএস পদপ্রার্থী মো. জসিম খান এবং এজিএস পদপ্রার্থী সাব্বির হোসেনসহ চারজন সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও হল প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করতে যান। তবে প্রাধ্যক্ষের দেখা না পেয়ে তারা হলের ক্যান্টিনে দুপুরের খাবার খেতে যান। এর একপর্যায়ে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি কামরুজ্জামান শুভ সেখানে গিয়ে তাদের ধাক্কাধাক্কি করে হল থেকে বের করে দেন।

 

সর্বশেষ খবর