শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
নদী বাঁচাও ২০

শুকিয়ে যাচ্ছে সাঙ্গু-মাতামুহুরী

কবির হোসেন সিদ্দিকী, বান্দরবান

শুকিয়ে যাচ্ছে সাঙ্গু-মাতামুহুরী

বান্দরবান পার্বত্য জেলার সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদী শুকিয়ে নাব্যতা হারাচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত ড্রেজিং হয়নি নদী দুটিতে। অন্যদিকে দখলে-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে নদী দুটি। এদিকে নৌ-চলাচল বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি জেলা শহরে খাওয়ার পানিরও সংকট দেখা দিয়েছে। বিপাকে পড়েছেন নদীনির্ভর জেলেরা।

পৌর কমিশনার হাবিবুর রহমান খোকন বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে জেলার নদী দুটিতে একবারও ড্রেজিং করা হয়নি। ড্রেজিং না করার কারণে নদীর তলদেশের উচ্চতা ক্রমেই বাড়ছে। বান্দরবানের মৃত্তিকা ও পানি সংরক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. মাহাবুবুল ইসলাম জানান, বনাঞ্চল উজাড়, পাহাড় কর্তন, পাথর উত্তোলনের ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। পাহাড় কর্তন করে, বাড়িঘর ও রাস্তা তৈরিসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের কারণে কর্তনকৃত মাটি বর্ষায় নদীতে নেমে আসে। ফলে দিন দিন ভরাট হচ্ছে নদীগুলো। স্থানীয় পরিবেশ আন্দোলনের নেতা ক্যা হ্লা চিং মারমা বলেন, নির্বিচারে বনাঞ্চল উজাড় করা এবং বিভিন্ন ঝিরি (ছোট ঝরনা) থেকে পাথর আহরণের ফলে নদীর পানি কমে যাচ্ছে। নদী ভরাট হওয়ায় বিলুপ্ত হওয়ার পথে বিভিন্ন প্রজাতির মৎস্য সম্পদ। এতে বিপাকে পড়া স্থানীয় জেলে বিন্দু বালা বলেন, ‘প্রায় ৪০ বছর ধরে নদীর মাছ ধরে আমরা জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। কিন্তু চলতি মৌসুমে নদীতে বড় বড় চর জেগে ওঠায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের দেখা মিলছে না।’ এক সময় সাঙ্গু নদী দিয়ে বান্দরবান জেলার রুমা, থানচি এবং মাতামুহুরী নদীপথ দিয়ে আলীকদম ও লামার বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় যাতায়াত করতেন স্থানীয়রা। বর্তমানে উপজেলাগুলোতে সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হলেও এখনো রুমা, থানচির রেমাক্রি, ছোট মদক, বড় মদকসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকা এবং আলীকদম উপজেলার দুর্গম পোয়ামুহুরী, কুরুকপাতাসহ বিভিন্ন এলাকায় যেতে হয় নৌকায় করে। কিন্তু নদী শুকিয়ে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে নৌ-চলাচল। এ ছাড়া শহরের পৌর পানি সরবরাহ ব্যবস্থাও সরাসরি সাঙ্গু নদীর ওপর নির্ভরশীল। শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি কমে যাওয়ার কারণে জেলা শহরের পানিব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘নদীর নাব্যতা হারানোর প্রভাব পড়েছে বান্দরবানের কৃষি উৎপাদনের ওপর। পানির অভাবে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী সোহরাব হোসেন বলেন, ‘পানির স্তর নিচে নেমে বিভিন্ন ঝিরি শুকিয়ে নদীতে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছি আমরা।’

সর্বশেষ খবর