সোমবার, ৪ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
নদী বাঁচাও ২৩

চাষাবাদ হয় এখন আলাই করতোয়ায়

গাইবান্ধা থেকে কুড়িগ্রাম, বগুড়া ও জামালপুর জেলার ১৫টি উপজেলার মধ্যে যোগাযোগের ৩০টি নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে। ছোট নদী ঘাঘট, আলাই, করতোয়ার তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন চাষাবাদ হচ্ছে নানান জাতের ফসল

গৌতমাশিস গুহ সরকার, গাইবান্ধা

চাষাবাদ হয় এখন আলাই করতোয়ায়

গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে করতোয়ার বুকে চাষ হচ্ছে ধান -বাংলাদেশ প্রতিদিন

গাইবান্ধা জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত বড় নদী যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তার পানি শুকিয়ে যাওয়ায় নদীগুলো নাব্য হারিয়েছে। একই সঙ্গে পানি হ্রাস পাওয়ায় গাইবান্ধা থেকে কুড়িগ্রাম, বগুড়া ও জামালপুর জেলার ১৫টি উপজেলার মধ্যে যোগাযোগের ৩০টি নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে ছোট নদী ঘাঘট, আলাই, করতোয়ার তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীগুলোর বুক জুড়ে এখন চাষাবাদ হচ্ছে নানান জাতের ফসল। পরিবেশ আন্দোলনের নেতা-কর্মী ও স্থানীয় জন সাধারণের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাইবান্ধা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘাঘট ও আলাই নদীতে আগেও পানি শুকিয়ে যেত, তবে পানি শূন্য হতো না। কিন্তু গত ১২ বছরের বেশি সময় ধরে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে অক্টোবর মাস থেকেই নদী পানিশূন্য হতে শুরু করে। বর্ষা ঋতুর শুরুতে আবার পানি আসতে আরম্ভ করে। ফলে এগুলো সাময়িক নদীতে পরিণত হয়েছে। যে কারণে বছরের ছয় মাস নদীর বুকে ধানসহ বিভিন্ন ফসল ও সব্জীর চাষাবাদ করছেন মানুষ। এসময় নদীর বুক গবাদি পশুর চারণ ভূমিতেও পরিণত হয়। বর্ষার সময় এসব নদীতে আগে যেমন দেশি মাছ পাওয়া যেত, দীর্ঘ সময় পানি না থাকার কারণে এখন বর্ষার সময়ও নদীতে সেরকম মাছ পাওয়া যায় না। এদিকে যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকাবাসী ও মাঝিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে নাব্যতা সংকটে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের ৫টি, গাইবান্ধা সদরের ৭টি, ফুলছড়ি উপজেলার ১০টি, সাঘাটার ৭টি ঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। এসব ঘাট থেকে কুড়িগ্রাম, বগুড়া ও জামালপুরের অন্তত ২৮ ঘাটের যোগাযোগ বন্ধ। এর মধ্যে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ৫টি, রৌমারির ৩টি, রাজিবপুরের ২টি, কুড়িগ্রাম সদরের ২টি, ভুরুঙ্গামারি ৩টি জামালপুরের ইসলামপুরে ৩টি, দেওয়ানগঞ্জের ৫টি, বগুড়ার সোনাতলার ২টি ও সারিয়াকন্দির ৩টি নৌঘাট রয়েছে। অন্যদিকে নদী এলাকার ফুলছড়ি, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা ও গাইবান্ধা সদরের কিছু অংশে জেগে ওঠা  ধু ধু বালুচরে ভুট্টা, বাদাম, কাউন চাষ করা হচ্ছে। যমুনা নদীর যে ক্ষীণ ধারা বয়ে যাচ্ছে, সেখানে গাইবান্ধার বালাসী ঘাট থেকে পৌঁছতে প্রায় দুই কিলোমিটার চর পায়ে হেঁটে যেতে হয়। এমনকি চরের মধ্যে দু’টি বাঁশের সাঁকোও পাড়ি দিতে হয়।

এছাড়া সুন্দরগঞ্জের তিস্তা নদীতে বেলকা ও হরিপুর ঘাট দুটি নাব্য সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বেলকা থেকে রংপুরের কাউনিয়া ও কাশিমবাজারসহ বেশ কয়েকটি রুটে নৌ চলাচল বন্ধ আছে। হরিপুর খেয়াঘাট থেকে ব্রহ্মপুত্র হয়ে চিলমারী, রাজিবপুর, রৌমারী, জামালপুর, সরিষাবাড়ি মোল্লারচর ও বালাসীঘাটসহ বেশ কিছু রুটেও নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী  মোখলেছুর রহমান বলেন, শীত মৌসুম শুরুর অনেক আগে থেকেই নদীগুলোতে পানি প্রবাহ কমতে শুরু করে। বর্তমানে ২৯৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে যমুনা নদীতে পাউবো’র একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। নদীর ভাঙনরোধ,তীর সংরক্ষণ ও বাঁধ মেরামতের কাজ এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সেখানে যমুনা নদীর গতিপথ ঠিক রাখতে সাড়ে ১০ কিলোমিটার ড্রেজিং কাজ চলছে। তবে অন্যান্য নদীর খনন বিষয়ে কোনো প্রকল্প হাতে নেই।

সর্বশেষ খবর