মঙ্গলবার, ৫ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

আতিকের সামনে যত চ্যালেঞ্জ

নিজস্ব প্রতিবেদক

আতিকের সামনে যত চ্যালেঞ্জ

আগামী এক বছর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলামের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। মোট এক বছর তিন মাস সময়ে তাকে শেষ করতে হবে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের শুরু করে যাওয়া বিশাল উন্নয়নযজ্ঞ। একই সঙ্গে নিজের ইমেজকে জোরালো করে পরের নির্বাচনের প্রস্তুতিও সম্পন্ন করতে হবে এই সময়েই। সে ক্ষেত্রে পুরো সময়ই তাকে চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে পার করতে হবে। এরই মধ্যে সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে ভোট নিয়ে কিছু বিতর্ক থাকায় চ্যালেঞ্জ আরও বেড়েছে।

একটি নিরাপদ, আধুনিক ও নারীবান্ধব মহানগর গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে ২০১৫ সালের ৬ মে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মেয়রের দায়িত্ব নেন আনিসুল হক। দায়িত্ব নিয়েই রাজধানী ঢাকায় ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা করেন তিনি। রাজধানীতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নগরবাসীর হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছিলেন আনিসুল হক।

অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্পের তালিকা তৈরি করেছিলেন তিনি। সে অনুযায়ী শহর গড়তে সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন প্রকল্পগুলোর কাজ। কিন্তু হঠাৎ করেই ছন্দপতন। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর পরপারে পাড়ি জমান স্বপ্নবাজ মেয়র আনিসুল হক। এরপর প্যানেল মেয়রদের তত্ত্বাবধানে নানা জটিলতায় চলছিল চলমান প্রকল্পগুলো। অবশেষে ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে মেয়র পদে জয়লাভ করেন আতিকুল ইসলাম। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে বেশ কিছু প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে। রাজধানীর গণপরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কোম্পানিভিত্তিক রুট নির্ধারণ করে বাস নামানোর পরিকল্পনা নিয়েছিলেন আনিসুল হক। তার মৃত্যুতে পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়ে প্রকল্পটি। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আগ্রহে এগিয়ে চলছে প্রকল্পের কাজ। গাজীপুর থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত ইউটার্ন প্রকল্প নিয়ে শুরু থেকেই চলছে টানাপড়েন। আনিসুল হকের সঙ্গে আলোচনায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ প্রকল্পের ব্যবহারের জন্য বিনা মূল্যে জমি দিতে চেয়েছিল। কিন্তু মেয়রের মৃত্যুর পরই প্রকল্পের প্রয়োজনীয় জমির জন্য অর্থ পরিশোধ করতে হবে বলে জানানো হয়। এতে প্রকল্প নিয়ে শুরু হয় জটিলতা। দীর্ঘদিন পর জমির সমস্যা মীমাংসার মধ্য দিয়ে কাজ শুরু হলেও মাঝপথে থমকে গেছে প্রকল্প। যানজট নিরসন করতে কতটা কার্যকরী বিষয়টি যাচাই-বাছাইয়ের নামে থেমে রয়েছে এটি। পরীক্ষামূলকভাবে উত্তরায় একটি ইউটার্ন চালু হয়েছে। কিন্তু বাকিগুলো অনিশ্চয়তায় পড়েছে। সাহসিকতার সঙ্গে রাস্তা দখল করে গড়ে তোলা তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড অপসারণ করেছিলেন মেয়র আনিসুল হক। উচ্ছেদ অভিযানে গিয়ে জীবন বিপন্ন হয়ে গিয়েছিল তার। তবু পিছপা হননি তিনি। জনগণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করেছিলেন রাস্তা। তার প্রতি স¤œানে আনিসুল হক সড়ক হিসেবে এই রাস্তার নামকরণ করেছে সিটি করপোরেশন। কিন্তু সুযোগ পেলেই ট্রাক রাখা হয় রাস্তায়। দেখার কেউ নেই এটা ভেবে রাত হলেই রাস্তায় ট্রাক রাখেন মালিক ও চালকরা। রাস্তা দখলমুক্ত রাখতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় ট্রাফিক পুলিশকে। ৮৭টি পার্কের জন্য কনসালটেন্ট নিয়োগ করেছিলেন আনিসুল হক। এর মধ্যে কিছু পার্কের সংস্কার কাজ চলছে, কিছু পার্কের নকশা সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ পার্কের কাজই শুরু হয়নি। হাতিরঝিলের মতো আরও তিনটি প্রকল্পের পরিকল্পনা করেছিলেন আনিসুল হক। উত্তরার দিকে জলনিসর্গ নামে প্রকল্প ছিল তার। এ ছাড়া কল্যাণপুরের পেছনে গিয়ে গাবতলীর পাশে এবং কাটাসুর খালকে কেন্দ্র করে প্রকল্পের অনুমোদন প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এর বেশির ভাগ অংশই এখনো পরিকল্পনার ভিতরে আছে। কিছু অনুমোদন পেয়েছে। এখনো অনেক কাজ বাকি। এসব অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করার পাশাপাশি নিজের ইমেজ তুলে ধরার কাজও করতে হবে আতিকুল ইসলামকে। এত অল্প সময়ে তাকে সম্পন্ন করতে হবে অসম্পূর্ণ প্রকল্প। এর সঙ্গে তার ইশতেহারে উল্লেখ করা নিজের পরিকল্পনাগুলো তো আছেই। কাজের মাধ্যমে নগরবাসীর হৃদয় জয় করে তাকে নিতে হবে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতিও।

এ ব্যাপারে নগরবিশ্লেষক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সামনেই আসছে বর্ষা মৌসুম। খুব দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে প্রকট আকার ধারণ করবে মিরপুরের রোকেয়া সরণির জলজট। তাই এ বিষয়ে নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলামকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ শুরু করতে হবে। তিনি বলেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে আনিসুল হকের প্রকল্পগুলো শেষ করার পাশাপাশি নগর উন্নয়নে জোর দিতে হবে তাকে। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প কাজ বাস্তবায়ন করতে না পারলে এবং প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে না পারলে আগামী নির্বাচনে তাকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। তাই এই সময়ে সঠিক কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করে টিমওয়ার্ক জোরদার করে কাজের গতি বাড়াতে হবে।

সর্বশেষ খবর