মঙ্গলবার, ৫ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

নাজিমউদ্দিন রোডে বদলে যাচ্ছে কারাগার

নান্দনিক স্থাপনা সুযোগ সুবিধা

আনিস রহমান

নাজিমউদ্দিন রোডে বদলে যাচ্ছে কারাগার

পুকুর ও ঐতিহাসিক স্থানগুলো থাকবে আগের মতোই। আশপাশের জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে নান্দনিক নির্মাণশৈলীর মাধ্যমে এমন একটি স্থান হিসেবে গড়ে তোলা হবে, যা দেখে শুধু পুরান ঢাকাবাসী নয় চোখ জুড়িয়ে যাবে সারা দেশের দর্শনার্থীদের। উল্লেখ্য, পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোড থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর হওয়ার পর সেখানে নতুন কিছু করার পরিকল্পনা করে সরকার। এরই অংশ হিসেবে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের ঐতিহাসিক ভবন ও পারিপার্শ্বিক উন্নয়নের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। সেই প্রকল্পের জন্য উন্মুক্ত স্থাপত্য নকশা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এতে ৯৮টি প্রতিষ্ঠান রেজিস্ট্রেশন করে এবং ৩৪টি প্রতিষ্ঠান ডিজাইন জমা দেয়। পরে জুরিবোর্ডের বিচারে নকশা প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে ফর্ম ডট থ্রি আর্কিটেক্টস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং পার্টনার স্থপতি মো. দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া দিপু জানান, কারাগারের ঐতিহাসিক স্থানগুলোকে অক্ষুণœ রেখেই অপ্রয়োজনীয় স্থাপনা অপসারণ ও খোলা স্থানগুলোকে পুনর্বিন্যাস করে জনগণের জন্য কারাজাদুঘর এলাকাটি উন্মুক্ত করা হবে। নতুন নকশা অনুযায়ী কারা এলাকার ১১০ বিঘা জমিকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে কারা অধিদফতরের সামনের অংশ অঞ্চল-এ তে ছয়তলা ভবনে মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্স, কনভেনশন সেন্টার, সিনেপ্লেক্স, ৪শ কার পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। চকবাজারের অংশ অঞ্চল-বি তে চক কমপ্লেক্সে থাকবে বইয়ের দোকান, ফুড কোর্ট, বাচ্চাদের খেলার জায়গা, মসজিদ, পুকুর ও ৮৫টি কার পাটিংয়ের ব্যবস্থা। আর নাজিমুদ্দিন রোডের অঞ্চল-সি তে থাকবে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ও চার নেতা স্মৃতি জাদুঘর সংরক্ষণ, পুরাতন কারাগার ও তার ইতিহাস সংরক্ষণ, কারা উদ্যান ও লেক, হাঁটার রাস্তা ও লাইব্রেরি, অভ্যন্তরীণ ও পারিপার্র্শ্বিক রাস্তা, ফুটপাত এবং সাইকেল ট্র্যাক নির্মাণ, দুটি মসজিদ ও ল্যান্ডস্কেপিং। কারা অধিদফতর সূত্র জানায়, পুরান কারাগারের ভিতরের পুকুর ও মসজিদসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঠিক রেখে নতুন নতুন স্থাপনা নির্মাণ করতে নকশা করা হয়েছে। এমনকি কারাগারের প্রধান ফটক ও তার পাশে থাকা লাল রঙের যে চিঠির বাক্স ছিল, তা প্রতিস্থাপন করে নতুন নকশা করা হয়েছে। নাজিমুদ্দিন রোড সংলগ্ন প্রধান ফটকের উত্তরের তিনতলা ভবনটি ভেঙে সেখানে দর্শনার্থীদের বসার জন্য উন্মুক্ত স্থান রাখা হয়েছে। পাশেই থাকবে দর্শনার্থীদের জন্য টিকিট কাউন্টার। ভিতরে লাগানো হবে বেশকিছু গাছ ও সবুজ ঘাস। কারা অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, পুরাতন এই কারাগারটিতে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার অনেক স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধসহ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময়কার নেতারাও এখানে ছিলেন। তাই ঐতিহ্য ঠিক রেখে পরিকল্পিত নকশা অনুযায়ী অতি দ্রুত স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু হবে। সরকার কারাগারটিকে ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে নতুন প্রজন্মের কাছে উপস্থাপন করতে চায়। এর মাধ্যমে মানুষ এই কারাগারের স্মৃতিবিজড়িত অনেক ইতিহাস জানতে পারবে। এছাড়া ব্রিটিশ আমলে পুরান ঢাকার এই এলাকার আলাদা সৌন্দর্য ছিল। এখন সেই আদলেই জাদুঘর করা হবে। পুরান ঢাকাবাসী তথা সারা দেশের মানুষের জন্য এখানে সেবাকেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। থাকবে বিনোদনকেন্দ্র ও মুক্ত জলাশয়।

সর্বশেষ খবর