মঙ্গলবার, ৫ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
সামাজিক অবক্ষয় শেষ

অপরাধ উসকে দিচ্ছে আকাশ সংস্কৃতি, টিভি সিরিয়াল

জিন্নাতুন নূর

আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে মানুষের মধ্যে বাড়ছে নিষ্ঠুরতা। ভারতীয় সিরিয়াল দেখে পরিকল্পিত হত্যার ঘটনা ঘটছে। আবার ইন্টারনেটের সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম ফেসবুক,  হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে মানুষ বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়াচ্ছে। দম্পতিদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে অবিশ্বাস। ভাঙছে একের পর এক সংসার। ইউটিউবের বিভিন্ন ধরনের আপত্তিকর ভিডিও ও পর্নো সাইট দেখে বখাটেরা যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটাচ্ছে। সাইবার ক্রাইমের শিকার ভুক্তভোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের পরিচালিত এক জরিপ বলছে, দেশের নারীদের শতকরা ৬০ ভাগই ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল স্টার জলসা দেখেন। অথচ ভারতীয় এসব সিরিয়ালের কাহিনী হিংস্রতা,  পারিবারিক বিদ্বেষের মতো কাহিনীতে ঠাসা। ৮ ফেব্রুয়ারি এভাবেই ভারতীয় মেগা সিরিয়াল ক্রাইম পেট্রল দেখে গৃহবধূ হাসিনা বেগমকে তার দেবর মো. ফরহাদ হোসেন লিমন খুন করেন। হাসিনার কাছে টাকা চাইলে তা দিতে রাজি না হওয়ায় ফরহাদ এ হত্যার ঘটনা ঘটান। পরে হাসিনার মরদেহ লুকিয়ে রাখেন তিনি। আবার ভারতীয় সিরিয়ালের নায়ক-নায়িকাদের নাম অনুকরণ করেও সম্প্রতি দেশের ঈদবাজারে ভারতীয় পোশাক বিক্রি করার এক ধরনের প্রবণতা তৈরি হয়েছে। অবস্থা এমনই যে, উদ্ভট নামের এসব পোশাক কিনতে কিশোরী-তরুণীদের মধ্যে তৈরি হয় এক ধরনের কৃত্রিম চাহিদা। আর এ ধরনের পোশাক কিনে দিতে আবদার জানানোয় এবং অভিভাবকরা তা পূরণ না করায় এরই মধ্যে কয়েকজন কিশোরী, তরুণী ও নারী সাম্প্রতিক সময়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। এ বিষয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাংলাদেশে ভারতীয় সিরিয়ালগুলোর মূল দর্শকই হচ্ছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারী। আমাদের কাছে চিকিৎসা নিতে আসা অনেক নারীই আছেন, যারা নিজেদের স্বামীদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সন্দেহ করেন। আর এই পরিস্থিতির জন্য ভারতীয় মানহীন সিরিয়ালগুলো দায়ী।’ এ বিষয়ে রাষ্ট্রের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। আবার ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ফেসবুকের অপব্যবহারের কারণে সমাজে যৌন নির্যাতনের ঘটনাগুলো আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে মেয়েদের আপত্তিকর মেসেজ পাঠানো এবং ফেসবুকে তাদের আপত্তিকর ছবি ব্যবহার করার ঘটনায় অভিযোগ প্রায়ই পাওয়া যাচ্ছে। সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের ‘বাংলাদেশে সাইবার অপরাধের প্রবণতা’ শীর্ষক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, দেশে সংঘটিত সাইবার অপরাধের আখড়া হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। আর এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী নারী। তারা ভুয়া অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অপ্রচার ও ছবি বিকৃতির শিকার হচ্ছেন। এসব ভুক্তভোগীর ৩৯ শতাংশ পুলিশের কাছে গিয়েও আশানুরূপ ফল পাচ্ছেন না। দক্ষতার অভাবে অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে সাইবার অপরাধের বিষয়গুলো তদন্তে হিমশিম খেতে হয়। পুলিশের ৩০ শতাংশ কর্মকর্তাই এর বিরুদ্ধে কীভাবে আইনি ব্যবস্থা নিতে হয় জানেন না। আবার ভুক্তভোগীদের মধ্যে ২৫ শতাংশ আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হবে না বলে অভিযোগ করেন না। উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের প্রধান ডেপুটি কমিশনার ফরিদা ইয়াসমিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ফেসবুক ও মুঠোফোনের অপব্যবহারের জন্য সমাজে ধর্ষণের মতো অপরাধ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রযুক্তির অপব্যবহার-সংক্রান্ত অনেক অপরাধের ঘটনাই আমাদের কাছে আসছে। তবে প্রযুক্তিগত দুর্বলতার জন্য এ-সংশ্লিষ্ট যে মামলাগুলো আসছে তা সাইবার ক্রাইম ইউনিটে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’

সর্বশেষ খবর