মঙ্গলবার, ৫ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

নিচে কেমিক্যাল ওপরে বসবাস

বিচ্ছিন্ন আরও ২৯ ভবনের গ্যাস বিদ্যুৎ পানি সংযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর পুরান ঢাকা নিয়ে ভাবনা শুরু হয়েছে সব মহলে। এটি আবাসিক না শিল্প এলাকা, তা নিয়ে দ্বিধায় পড়তে হচ্ছে। এমনিতেই লোক গিজগিজে ঢাকা। এর মধ্যে পুরান ঢাকা আরও বেশি ঘিঞ্জি ও ঘনবসতিপূর্ণ। আর এখানেই গড়ে উঠেছে দেশের সবচেয়ে বড় কেমিক্যাল ব্যবসা। আছে আরও বহু ধরনের কারখানা ও গোডাউন। রীতিমতো বিস্ফোরকের ওপর বসবাস করছেন এখানকার বাসিন্দারা। গতকাল নাজিরাবাজার, সিদ্দিকবাজার, হাজারীবাগ, তাঁতীবাজার ও চকবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে এমন ২৯টি ভবনের বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানিসহ ইউটিলিটি সার্ভিস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নেতৃত্বাধীন সরকার গঠিত টাস্ক ফোর্স। এনিয়ে গত চার দিনে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় টাস্ক ফোর্সের অভিযানে অন্তত ৭৬টি বাড়ির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। অভিযানে ডিএসসিসি কর্মকর্তাসহ বিস্ফোরক অধিদফতর, পরিবেশ অধিদফতর, ঢাকা জেলা প্রশাসন, তিতাস গ্যাস, ঢাকা ওয়াসা, ডিপিডিসি, ফায়ার সার্ভিস ও সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ অভিযান আগামী ১ এপ্রিল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। বেলা ১১টার দিকে চকবাজার চুড়িহাট্টায় নন্দকুমার দত্ত রোডে শুরু হওয়া অভিযানে নেতৃত্ব দেন ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহমেদ। বেলা সোয়া ১২টার দিকে এখানকার ৬৯/২ নম্বর ভবনে অভিযান শুরু হয়। ভবনটির নিচে থাকা দি কালার কোম্পানি নামের একটি দোকান প্লাস্টিক দানা, রংসহ নানা ধরনের কেমিক্যাল উপকরণে ছিল সাজানো। আর দোকানের পেছনেই রয়েছে ৭তলা এ ভবনের ওপরে উঠার সিঁড়ি। এ সময় টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা সিঁড়ি বেঁয়ে ওপরে উঠতেই ২য় ও ৩য় তলায় দেখতে পান কেমিক্যালের গোডাউন। ফ্লোরগুলো সব কেমিক্যালে ভরা। নেমে এসেই তারা নির্দেশ দেন বিদ্যুৎ, গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে।

সরেজমিন দেখা গেছে, একই রোডের ৭ নম্বর ও হরনাথ ঘোষ রোডের ৯৫/৫ নম্বর ভবনের চিত্রও ছিল একই। নিচে কেমিক্যালের গোডাউন আর ওপরে মানুষের বসবাস। অভিযানে অংশ নেওয়া বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, বেশির ভাগ বাড়ির নিচে গড়ে তোলা কারখানা ও গোডাউনে রয়েছে অতি দাহ্য বস্তু। আগুন লাগলে বের হওয়ারও পথ নেই। ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো এসব গলিতে ঢুকতে পারে না। স্থানীয়রা বলছেন, জীবিকার তাগিদেই তাদের জীবনের ঝুঁকি নিতে হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানই এখানকার অনিয়ম ও ঝুঁকির বিষয়গুলো জানে। এই ঝুঁকিতেই চলছে বছরের পর বছর। বড় দুর্ঘটনার পরই বিষয়গুলো নিয়ে নড়াচড়া হয়। আবার কিছুদিন পর তা থেমেও যায়। জানা গেছে, পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন উচ্ছেদে একসঙ্গে পাঁচ স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। গঠিত টাস্ক ফোর্সের ৫ নম্বর কমিটি তাঁতীবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৭টি বাড়ির, ২ নম্বর কমিটি হরনাথ ঘোষ ও নন্দকুমার দত্ত রোডের ৮টি বাড়ির, ১ নম্বর কমিটি হাজারীবাগের নীলাম্বর এবং মনেশ্বর রোডের ৮টি বাড়ির এবং ৩ নম্বর কমিটি ৬টি বাড়িতে থাকা কেমিক্যাল গোডাউন, প্লাস্টিক, কসমেটিক্স ও পাদুকা কারখানার ইউটিলিটি সার্ভিস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। চুড়িহাট্টার ৯৫/৫ নম্বর ভবনের মালিক হাজী আলমাস সাংবাদিকদের জানান, তিনি বাকের হোসেন নামের একজনকে বাড়ির সামনের অংশ গোডাউন হিসেবে ভাড়া দিয়েছেন। পরে তাকে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সতর্ক করে দেওয়া হয়।  প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহমেদ বলেন, আমরা কয়েকটি ভবনে অভিযান চালিয়ে দেখেছি যে, কেমিক্যালে ভরা। আমরা সেগুলোর ইউটিলিটি সার্ভিস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি। আশা করি, এখানকার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে মাসব্যাপী অভিযানে পুরান ঢাকাকে কেমিক্যালমুক্ত করতে পারব। এরই মধ্যে আমাদের আহ্বানে বেশকিছু ব্যবসায়ী সাড়া দিয়েছেন এবং গোডাউন খালি করে দিয়েছেন। এদিকে টাস্ক ফোর্সের অভিযানে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা ভবনগুলোর মধ্যে ৮টিতে পুনরায় সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এর আগে ১৫টি কারখানা ও ভবনগুলোর মালিক পুনরায় সংযোগ দিতে ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বরাবর আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে টাস্ক ফোর্স যাচাই করে ৮টিতে সংযোগ দেয়। এ ছাড়া পরিদর্শন শেষে আবেদনকৃত আরও ৭টিতে পুনঃসংযোগ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।  আবেদনে ওইসব ভবনের মালিকরা জানিয়েছেন, তাদের ভবন কিংবা কারখানায় এখন জানমালের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এমন মালামাল বা দাহ্য পদার্থ নেই। এটি পরীক্ষা করে পুনঃসংযোগ দানের অনুরোধ জানানো হয়।  উল্লেখ্য, গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টার ৬৪ নম্বর হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটে। এতে এ পর্যন্ত ৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে। 

সর্বশেষ খবর