বুধবার, ৬ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
নদী বাঁচাও ২৫

নওগাঁর ছয় নদী ফসলের মাঠ

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

নওগাঁর ছয় নদী ফসলের মাঠ

বরেন্দ্র জেলা নওগাঁর নদীগুলো হচ্ছে আত্রাই, যমুনা, তুলশীগঙ্গা, শীব, পুনর্ভবা ও নাগর। জেলার অন্যতম নদী হচ্ছে ছোট যমুনা ও তুলশীগঙ্গা নদী। এক সময় বছরের সব সময় এসব নদীতে পানি থাকত ভরা। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যোগাযোগ ও মালামাল পরিবহন করার মাধ্যম বলতে এই নদীগুলোয় ছিল একমাত্র পথ। জেলেরা সারা বছর এসব নদী থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। আজ সেই দিনগুলো শুধুই অতীত। এখন এসব নদী মৃতপ্রায়। এক সময়ের স্রোতস্বিনী আত্রাই ও পুনর্ভবা নদী পানির অভাবে শুকিয়ে গেছে। এ ছাড়া প্রতি বছর পলি জমে ক্রমেই ভরাট হয়ে যাচ্ছে খোরস্রোতা এসব নদী। একই অবস্থা অন্যসব নদীরও। যেসব স্থানে পানি শুকিয়ে গেছে সেসব স্থান দখল করে নদীর বুকচিরে কোথাও ধান, কোথাও সরিষা, আবার কোথাও আলুসহ নানা ফসলের চাষাবাদ হচ্ছে। জেলার প্রধান প্রাণকেন্দ্র ছোট যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত নওগাঁ শহর। এই নদীর তীরেই অবস্থিত কোর্ট, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সব সরকারি দফতর। শহরের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত ছোট যমুনা ও তুলশীগঙ্গা এক সময়ের খরস্রোতা নদী বর্তমানে দখল আর দূষণের শিকার হয়ে মরতে বসেছে। নদীর দুই পাশে দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে বড় বড় ভবন ও শিল্প কারখানা। দীর্ঘদিন ধরে নদীটি খনন না করার কারণে পলি জমে কমে গেছে নদীর নাব্যতা। নদীটি এখন শহরবাসীর ময়লা আবর্জনার ডাষ্টবিনে পরিণত হয়েছে। ব্যবসা বাণিজ্যের উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব বহন করত এই ছোট যমুনা নদী। বড় বড় নৌকা ভিড়ত নদীতে। ধান-পাটসহ নানা পণ্য এখান থেকে নদী পথে চলে যেত রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। কৃষিক্ষেত্রেও ছিল অনবদ্য ভূমিকা। কিন্তু কালের প্রবাহে নদীটি তার রূপ হারিয়ে এখন মৃতপ্রায়। বর্ষা মৌসুমে পানি থাকলেও খরা মৌসুমে প্রতি বছর নদীটি সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায়। বর্তমানে নদীর উভয় পার্শ্বে ফ্লাডওয়াল নির্মিত হওয়ায় শহরের নদীর উভয় পাশের বাসিন্দারা তাদের পরিত্যক্ত সব ময়লা আবর্জনা নদীতে ফেলছে। পুরো নদীটি এখন যেন একটি বিশাল ডাস্টবিন। এতে নদীটির পানি দূষণসহ পরিধি সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। এক সময় এসব নদী ছিল মাছে ভরপুর কিন্তু পানি দূষণের কারণে শুধু বর্ষা মৌসুম ছাড়া আর মাছ পাওয়া যায় না। এ পরিস্থিতিতে অনেক জেলে তাদের পৈতৃক পেশা বদলিয়ে ফেলেছে। আবার কোথাও প্রভাবশালীরা নদীর দুইধার অবৈধভাবে দখল করে গড়ে তুলেছে ভবন ও কলকারখানা। দিনের পর দিন পলি জমে নদীর বুক উঁচু হয়ে যাওয়ায় সারা বছর আর নদীতে পানি থাকে না। জেগে ওঠেছে নদীর দুই তীর। যেসব স্থানে পানি শুকিয়ে গেছে সেসব স্থান দখল করে নদীর বুকচিরে কোথাও ধান, কোথাও সরিষা, আবার কোথাও আলুসহ নানা প্রকারের ফসলের চাষাবাদ হচ্ছে। আবার কোথাও অবৈধভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে বালি। যার কারণে নদী যৌবন হারিয়ে দ্রুত মরে যাচ্ছে। ফলে এক সময়ের খরস্রোতা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র এই নদীটি ক্রমেই সংকুচিত হয়ে তার রূপ হারিয়ে ফেলছে। এর হাত থেকে রক্ষা করে নদীটিকে রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন শহরবাসী।

নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার বলেন, জনতার দাবির সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা চাইলে নদীর নাব্যতা সৃষ্টির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মনোজিত কুমার মল্লিক বলেন, দাফতরিকভাবে সব সময় ঊর্ধ্বতন মহলকে নদী রক্ষা করার জন্য লিখিত ও মৌখিকভাবে বলা হলেও কাজ হচ্ছে না। নওগাঁর ৬টি নদী যদি অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা করতে না পারি তাহলে আর কিছুদিনের মধ্যে মানচিত্র থেকে অনেক নদীর নাম মুছে যাবে। জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান বলেন, ছোট যমুনা নদীসহ নওগাঁর সবগুলো নদী রক্ষার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ওয়াক ফর হেলদি লাইফ অ্যান্ড ক্লিন এনভায়রনমেন্ট নামের একটি উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। এর আগে আমরা তুলশীগঙ্গা নদীকে কচুরিপানা মুক্ত করে পানির স্বাভাবিক প্রবাহকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আমাদের এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর