বুধবার, ৬ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

বাংলাদেশের চোখ এখন আর্জেন্টিনা ব্রাজিলে

রপ্তানি বাড়াতে মুক্তবাণিজ্য চুক্তির সিদ্ধান্ত

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ফুটবল বিশ্বকাপে এ দেশের দর্শক মূলত দুটি দেশের পক্ষে ভাগ হয়ে যায়। একপক্ষ আর্জেন্টিনা আর অন্যপক্ষ ব্রাজিল। এমনকি একই পরিবারে স্ত্রী ব্রাজিল সাপোর্ট করলে স্বামী আর্জেন্টিনার পতাকা নিয়ে ঘুরে বেড়ান। বাংলাদেশের দর্শকদের ক্ষেত্রে এটি গত কয়েক দশকের পুরনো চিত্র। তবে ফুটবল বিশ্বকাপের খেলায় এই দুটি দেশের সমর্থনে বাংলাদেশের মানুষের ‘আবেগের বান’ ছুটলেও তারা কিন্তু বাংলাদেশকে কোনো বাণিজ্য সুবিধা দিচ্ছে না। ফলে দেশ দুটিতে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির বিশাল সম্ভাবনা থাকলেও সেই সুযোগ নিতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের ওপর উচ্চহারে আমদানি শুল্ক রয়েছে ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে। অতিরিক্ত শুল্কের কারণে গত কয়েক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি। এন্টি ডাম্পিংয়ের কারণে পাট পণ্য রপ্তানিও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় সরকার নিয়েছে ভিন্ন কৌশল। সিদ্ধান্ত নিয়েছে : ‘মারকোসার জোটভুক্ত’ ল্যাটিন আমেরিকার চারটি দেশ আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, উরুগুয়ে ও প্যারাগুয়ের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার। সূত্র জানায়, ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে এফটিএ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গতকাল আন্তমন্ত্রণালয় সভা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য সচিব মো. মফিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসে। জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত (এফটিএ) সচিব শফিকুল ইসলাম বলেন, এখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে মুক্তবাণিজ্য বিষয়ে আলোচনা করতে। এ ছাড়া ‘মারকোসার’ সদস্যরাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে এফটিএ করা নিয়ে একটি ডিটেইলড ফিজিবিলিটি স্টাডি করতে বলা হয়েছে ট্যারিফ কমিশনকে। কর্মকর্তারা জানান, ‘মারকোসার’ মূলত দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর বাণিজ্য জোট, যা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯১ সালে। আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে ও উরুগুয়ে ওই জোটের পূর্ণ সদস্যরাষ্ট্র। এ জোটের বার্ষিক জিডিপি ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি। সরকার এই দেশগুলোতেই রপ্তানি সম্প্রসারণে নজর দিয়েছে। কারণ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পর বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলোতে শুল্ক সুবিধা পাবে না। তখন রপ্তানি আয় বাড়াতে রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ ও নতুন বাজার অনুসন্ধানের কোনো বিকল্প নেই। সে ক্ষেত্রে ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো হতে পারে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় বাজার। জানা গেছে, এফটিএ নিয়ে এরই মধ্যে একটি প্রাথমিক সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন বা প্রাইমারি ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে ট্যারিফ কমিশন। ওই রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ মারকোসার রাষ্ট্রে ২০৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। বিপরীতে এসব দেশ থেকে আমদানি করেছে ২ হাজার ৩১৮ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। মূলত চিনি, ভোজ্যতেল, ভুট্টা, গম ও পশুখাদ্য আমদানি করা হয় ওসব দেশ থেকে। ট্যারিফ কমিশন হিসাব করে দেখেছে যে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে এফটিএ করলে বাংলাদেশের আমদানি শুল্ক বাবদ বছরে রাজস্ব ক্ষতি হবে প্রায় ১১ মিলিয়ন ডলার। বিপরীতে যে পরিমাণ রপ্তানি বাড়বে তাতে লাভ হবে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, ওষুধ, টেক্সটাইল ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। সে জন্য তারা এফটিএ করার বিষয়ে ইতিবাচক মতামত দিয়েছে।

সর্বশেষ খবর