বুধবার, ৬ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

জাহালম ইস্যুতে দায় নিতে চায় না দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

টাঙ্গাইলের জাহালমের বিনা অপরাধে তিন বছর জেল খাটার বিষয়ে দায় নিতে চায় না দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটি বলছে, ব্যাংকগুলোর অনুসন্ধান প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করেই তাদের তদন্ত কর্মকর্তারা প্রথম অভিযোগপত্র দিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের দেওয়া তথ্য-উপাত্ত আমলে না নেওয়ার এখতিয়ার তাদের নেই। গত ৩ ফেব্রুয়ারি জাহালমের জামিন আদেশের পর এ বিষয়ে সবিস্তার ব্যাখ্যা দিতে বলে আদালত। সে সময় দুদকের আইনজীবী ব্যাখ্যা দাখিলের জন্য চার সপ্তাহের সময় নিয়েছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় আদালতে ব্যাখ্যা দাখিলের জন্য গতকাল হলফনামা আকারে প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে দুদক। প্রতিবেদনটি আজ আদালতে উপস্থাপন করা হবে বলে দুদকের প্রধান আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানিয়েছেন। পাশাপাশি এ ঘটনায় জড়িত পাঁচটি ব্যাংককে পক্ষভুক্ত করারও আবেদন করেছে দুদক। দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে দুর্নীতি দমন কমিশন প্রথম অভিযোগপত্র দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সোনালী ব্যাংকের মতো একটি সরকারি ব্যাংক যখন আমাকে কিছু তথ্য-উপাত্ত পাঠাবে অবশ্যই সেটা আমাকে আমলে নিতে হবে। সেই তথ্য-উপাত্তের ভেলিডিটি (বৈধতা) নিয়ে প্রশ্ন উঠানো দুদকের কোনো আইনগত এখতিয়ার নেই। তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংকের মাধ্যমেই তথ্য-উপাত্ত পেয়ে আমরা অভিযোগপত্র দাখিল করেছি। ব্যাংকের অফিসাররাই তাকে (জাহালমকে) আইডেন্টিফাই করেছে। আমরা সে কথাগুলো এফিডেবিট ইন ফ্যাক্টসে (ঘটনার বর্ণনা বা ব্যাখ্যা হলফনামা আকারে) দাখিল করেছি। আশা করি বুধবার শুনানি হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তার আগে ব্যাংকগুলোকে পক্ষভুক্ত করতে যে আবেদন, সেটি আগে শুনানি করতে চাচ্ছি। কারণ এখানে ব্যাংক খুবই গুরুত্বপূর্ণ পারসন। আমরা চাই ব্যাংকগুলা এসে তাদের কথা বলুক।’ এ ঘটনায় দুদক দায় নিয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নে খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘বিচারাধীন বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক নয়। আপনারা যেহেতু জিজ্ঞেস করছেন তাই বলছি, এ ঘটনায় দুদকের দায় কতটুকু কিংবা আমার দায় আদৌ আছে কিনা সেটা আদালত নির্ণয় করবেন। কারণ আমি পাবলিক ডকুমেন্টের ভিত্তিতে সরল বিশ্বাসে কাজ করেছি। সে বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ৩১ ধারায় বলা আছে। সেখানে বলা হয়েছে, আমি যদি সরল বিশ্বাসে কাজ করে থাকি তাহলে দায়মুক্তি পাওয়া যাবে। এখানে আমার দায় কতটুকু সেটা নির্ণয় করবে আদালত। এ কারণে আদালতকে আমরা বলেছি, এই ব্যাংকগুলোকে পক্ষভুক্ত করে ব্যাংকসহ আমাদের কথা একই সঙ্গে শোনেন।’ গত ৩০ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি সেদিন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত। পরে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করে। জাহালমের আটকাদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে। একই সঙ্গে নিরীহ জাহালমের গ্রেফতারের ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, মামলার বাদী দুদক কর্মকর্তা, স্বরাষ্ট্র সচিবের প্রতিনিধি ও আইন সচিবের প্রতিনিধিকে আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দেয়। সে নির্দেশ অনুযায়ী ৩ ফেব্রুয়ারি দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি হিসেবে দুদকের মহাপরিচালক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা হাজির হলে শুনানি শেষে জাহালমকে তাৎক্ষণিক মুক্তির নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। ওই রাতেই গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পায় জাহালম।

সর্বশেষ খবর