বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
চকবাজার ট্র্যাজেডি

সেই বৃষ্টিসহ আরও ১১ জনের মৃতদেহ শনাক্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

সেই বৃষ্টিসহ আরও ১১ জনের মৃতদেহ শনাক্ত

পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুড়ে যাওয়া ১৯ লাশের মধ্যে ডিএনএ পরীক্ষায় ১১ জনের লাশ শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে নিখোঁজ সেই বৃষ্টির লাশও রয়েছে। ১১ লাশের মধ্যে দুজন নারী ও নয়জন পুরুষ রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল দুপুরে সিআইডি কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ মোহাম্মদ রেজাউল হায়দার বলেন, ‘লাশ শনাক্ত হওয়া দুই নারীর মধ্যে দাবিদারদের তথ্যমতে তাদের নাম ফাতেমা জোহরা ও নাসরিন জাহান। এ ঘটনায় আরও আটটি লাশের পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। ১০-১২ দিনের মধ্যে তাদের শনাক্ত করা যাবে।’ এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘শনাক্ত হওয়া ১১ লাশের বিপরীতে আমরা ২৩ জনের ডিএনএ নমুনা নিয়েছিলাম।  বাকি আটটি লাশের মধ্যে পাঁচটির হাড় ও বাকি তিনটির সফট্্ টিস্যু নমুনা নিয়ে আমরা কাজ করছি। যেহেতু ঘটনাটি নিয়ে মামলা হয়েছে, তাই আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’ সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রুমানা আক্তার বলেন, ‘আমাদের কাছে ১৯টি লাশ ছাড়াও একটি হাত ছিল। সে হিসেবে ২০টি লাশ ধরতে হবে। ১১টি লাশ আইনি প্রক্রিয়া শেষে স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার পর আমাদের কাছে থাকবে একটি হাত এবং আটটি লাশের নমুনা।’ জানা গেছে, চুড়িহাট্টার অগ্নিকান্ডে র ঘটনায় এর আগে মোট ৪৮ জন নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে ৪৮টি ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছিল সিআইডির ফরেনসিক দল। উল্লেখ্য, ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চকবাজারের ওয়াহি ম্যানশনে ভয়াবহ অগ্নিকা  ঘটে। সব মিলিয়ে এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৭১ জন মারা গেছেন।

লাশ শনাক্ত : সিআইডির ব্রিফিং শেষে বৃষ্টির বাবা জসিম উদ্দিন জানান, ২০ ফেব্রুয়ারি বিকালে বৃষ্টি তার বান্ধবী দোলাকে নিয়ে শিল্পকলা একাডেমির অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বের হয়। এরপর তাদের আর পাওয়া যায়নি। তবে ভিডিও ফুটেজে তাদের দুজনকে রিকশায় দেখা যায়। এরপর বিস্ফোরণ ঘটে। সিআইডির ডিএনএ টেস্টে আদরের সন্তান বৃষ্টির লাশ শনাক্তের কথা জানানো হয় তাকে। মেয়েকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফনের কথা জানান বৃষ্টির বাবা।

৮ মরদেহ হস্থান্তর : আটজনের মরদেহ ঢামেক মর্গ থেকে স্বজনদের কাছে হস্থান্তর করা হয়েছে তার মধ্যে চকবাজারের প্লাস্টিকের ব্যবসায়ী নিহত শাহীন আহমেদ (৪২)। তার লাশ বুঝে নেন তার স্ত্রী ময়না বেগম। শাহীনের মরদেহ আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছে তার পরিবার। গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের ছাত্রী ফাতেমা-তুজ-জোহরা ওরফে বৃষ্টির (২১) মরদেহ বুঝে নেন তার ভাই সাইদুল ইসলাম সানি। ঘটনার দিন থেকে বৃষ্টি ও তার বান্ধবী দোলা নিখোঁজ ছিল। তবে দোলার লাশ শনাক্ত হয়নি। বৃষ্টির মরদেহও আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন তার বাবা জসিম উদ্দিন। সালেহ আহমেদ লিপু (৩৬) ও তার স্ত্রী নাসরিন জাহানের (৩০) লাশ শনাক্ত হলেও শনাক্ত হয়নি তাদের শিশু সন্তানের লাশ। ঘটনার দিন তারা রিকশাযোগে বাসায় ফিরছেন। গতকাল লাশ দুটি গ্রহণ করেন লিপুর ভাই ইসমাইল হোসেন।

শনাক্ত হওয়া রিকশাচালক নূরুজ্জামান হাওলাদের (৪৫) লাশ গ্রহণ করেন তার স্ত্রী শিরিন আক্তার। নূরুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বেলপাড়ায়। তিনি ঢাকায় রিকশা চালাতেন।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর ছাত্র তানজিল হাসান খান রোহানের মরদেহ গ্রহণ করেন তার বাবা হাসান খান। রোহান বংশালের আগামাছি লেনে থাকতেন। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে। তার মরদেহ গ্রামে দাফন করার কথা জানিয়েছেন রোহানের বাবা।

প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবসায়ী আহসান উল্লাহর (৩২) লাশ গ্রহণ করেন তার ভাই আনোয়ার হোসেন। আহসান উল্লাহ চকবাজার সাত রওজা এলাকায় থাকতেন। ঘটনার দিন ওষুধ কিনতে বের হয়ে দগ্ধ হন। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে।

নিহত স্টেশনারি দোকানি এনামুল হকের (৩৩) লাশ গ্রহণ করেন তার বাবা আমজাদ হোসেন। ওই দিন দোকান বন্ধ করে কেরানীগঞ্জ আটিবাজার যাওয়ার পথে তিনি দগ্ধ হন।

জানা গেছে, শনাক্ত হলেও গতকাল দুলাল, নূরুল হক ও ইব্রাহিমের লাশ নিতে তার স্বজনরা মর্গে আসেননি। আজ তারা লাশ নেবেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

ঢামেক হাসপাতাল মর্গে স্বজনদের কাছে লাশগুলো হস্থান্তর করেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, শনাক্ত হওয়া ৮টি মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মরদেহগুলোর দাফনের কাজে সহায়তার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর