বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
সংসদে প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসা নয় ভ্রাতৃত্বে বিশ্বাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের উন্নয়নে দল-মত নির্বিশেষে সবার সহযোগিতা কামনা করে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। আমরা সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যে বিশ্বাসী। এ জন্য আমরা বিভিন্ন সময় জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছি। বর্তমান সরকারের দৃষ্টিতে দেশের সব নাগরিক সমান। সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ সব সময়ই জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তির ওপর আস্থাশীল। একটি দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য সব নাগরিকের অংশগ্রহণ জরুরি। এ জন্য আমি দল-মত নির্বিশেষে সবার সহযোগিতা চাই। মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে আমরা ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতার অভিশাপমুক্ত বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’ স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামানের (মেহেরপুর-২) প্রশ্নের লিখিত জবাবে তিনি এ সহযোগিতা চান। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তরসহ সব প্রশ্ন টেবিলে উত্থাপিত হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ব্যক্তি হিসেবে বিভিন্ন দল-সংগঠন করতে পারি। আমাদের মতের ভিন্নতাও থাকতে পারে। গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, প্রতিপক্ষ দলকে নিঃশেষ করার অপচেষ্টা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর আওয়ামী লীগ এবং এর দলের নেতা-কর্মীরা এ ধরনের বৈরী আচরণের শিকার হয়েছেন বারবার।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের দুঃশাসনের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘২০০১ সালের নির্বাচনের পরদিন থেকেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা চরম নির্যাতনের মুখোমুখি হয়েছিলেন। আমি ব্যক্তিগতভাবেও বারবার হামলার শিকার হয়েছি। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আমার এবং আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের ওপর ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। আমার দলের ২২ নেতা-কর্মীসহ সেদিন মোট ২৪ জন নিহত এবং পাঁচ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছিলেন। যারা বেঁচে আছেন, শরীরে স্পিøন্টার নিয়ে দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়।’

 শেখ হাসিনা বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ের পর আমরা টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেছি। আমাদের দৃষ্টিতে দল-মত নির্বিশেষে দেশের সব নাগরিক সমান। আমরা সবার জন্য কাজ করব। ২৫ জানুয়ারি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে আমি বলেছিলাম, ...এখন আমাদের প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের ঐক্যের যোগসূত্র হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িকতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সাম্য ও ন্যায়বিচার এবং উন্নয়ন ও অগ্রগতি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আমরা দেশের সব নিবন্ধিত দলের সঙ্গে সংলাপ করেছি। সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে আমরা সংসদকে সব কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছি। সংসদের বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের সমন্বয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিসহ বিভিন্ন কমিটি গঠন করেছি।’

অগ্রগতির পথে হাঁটছে বাংলাদেশ : সরকারদলীয় সদস্য এম আবদুল লতিফের (চট্টগ্রাম-১১) প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশি-বিদেশি নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে উন্নয়ন, অগ্রগতি আর সমৃদ্ধির পথে হাঁটছে আমাদের আজকের বাংলাদেশ। ৪২ বছর স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকায় থাকার পর গত বছর ১৭ মার্চ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হওয়ার স্বীকৃতি পেয়েছে।’ এ সময় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের দুর্নীতি-দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসে। আবার দুর্নীতিতে নিপতিত হয় দেশ। হাওয়া ভবনের নামে তারেক জিয়া চালাতে থাকে লুটপাট। অর্থনৈতিক উন্নয়ন সূচকের প্রায় সবগুলোতেই বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়তে থাকে। ২০০৮ সালে নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আবার দেশের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। ১০ বছর ধরে এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা এমন পর্যায়ে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি যে, পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প নিজেদের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছি। পদ্মা সেতুসহ আমরা ১০টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি।’ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের জনকল্যাণমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন উদ্যোগ বাস্তবায়নের কারণে বাংলাদেশের এই উন্নয়ন এবং অদম্য অগ্রযাত্রা সম্ভব হয়েছে। আশির দশকের তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ কাটিয়ে বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন বিস্ময় হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়ত উন্মোচিত হচ্ছে নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার।

২০ তলা বিল্ডিংয়ে উদ্ধারকাজের সক্ষমতা অর্জন : কুড়িগ্রাম-১ আসনের আছলাম হোসেন সওদাগরের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০ তলা পর্যন্ত বিল্ডিংয়ের আগুন নেভানো ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতা অর্জন করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। তার সরকারের আমলে ১০টি উঁচু মই (এরিয়াল প্ল্যাটফরম লেডার) আমদানি করা হয়েছে, যার মাধ্যমে উল্লিখিত উচ্চতার বিল্ডিংয়ের দুর্যোগে কাজ করা যায়। তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে সম্পাদিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী অনুদান হিসেবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রাপ্ত ভূমিকম্পে উদ্ধারকাজে ব্যবহারের জন্য আনুমানিক ১০০ কোটি টাকার সরঞ্জাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে সরবরাহ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর