শুক্রবার, ৮ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
নদী বাঁচাও ২৭

মগড়ার বুকজুড়ে দখলের দৌরাত্ম্য

আলপনা বেগম, নেত্রকোনা

মগড়ার বুকজুড়ে দখলের দৌরাত্ম্য

নেত্রকোনাকে পেঁচিয়ে রাখা মগড়ার বুকে দখলদারদের আধিপত্য। বিভিন্ন ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ব্যক্তিমালিকানায় গড়ে উঠেছে নদীর বুকে অসংখ্য স্থাপনা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পৌর এলাকার বর্জ্য। নদীর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত রয়েছে বহু পয়ঃনিষ্কাশন নালা। এসব দখল-দূষণে শীর্ণকায় নদীটি বাঁচাতে বিভিন্ন সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম করে যাচ্ছে। আন্দোলনের  ধারাবাহিকতায় প্রশাসনের উদ্যোগে মাঝেমধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের অভিযান পরিচালিত হলেও তা এক দিন বা দুই দিনেই সীমাবদ্ধ থাকে। উচ্ছেদ অভিযান জোরালো না হওয়ায় নতুন নতুন স্থাপনা একের পর এক তৈরি হচ্ছে। নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে দখলদাররা। এসবের দখলে রয়েছেন জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। নদী গবেষণাকারী বিভিন্ন সংগঠনের তথ্যমতে, পূর্বধলা উপজেলার ত্রিমোহনী ধলাই নদী থেকে মগড়ার উৎপত্তি হয়। এরপর ১৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে নদীটি খালিয়াজুরী উপজেলার ধনু নদীতে গিয়ে মিশেছে। এর মধ্যে নদীর তীরবর্তী গ্রাম রয়েছে ১৮৩টি, যেসব গ্রামের হাজার হাজার কৃষক বোরো মৌসুমে নদীর পানি দিয়ে সেচ কাজ চালাতেন। তারা সবাই এখন স্যালো মেশিন দিয়ে ভূগর্ভ থেকে সেচকাজ চালান। আবার অনেক কৃষক সেচের অভাবে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। এখানে ৫৯২টি ছিল জেলে পরিবার। এই নদীকে ঘিরে তারা জীবিকা নির্বাহ করত। বিলুপ্ত হয়ে গেছে ২০ থেকে ২৫ জাতের মাছ। আজকাল পুঁটি মাছও পাওয়া যায় না নদীটিতে। এর মধ্যে নেত্রকোনা পৌর এলাকার ৬ কিলোমিটার পেঁচিয়ে রেখেছে এই মগড়া। এই ৬ কিলোমিটার জুড়েই রয়েছে শত শত অবৈধ স্থাপনা। এর মধ্যে সদর উপজেলার ভূমি সার্ভেয়ার কর্তৃক ৬৪টি অবৈধ স্থাপনার শনাক্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাতপাই মৌজায় শহরের নিখিলনাথ রোড, বড় বাজার, পঞ্চাননপুর, মালনী, অজহর রোড, মালনী রোড, গোবিন্দপুর, হরিখালী, ইসলামপুর, শিবগঞ্জ রোড, আরামবা, মনিকা রোড, সাতপাই, দক্ষিণ সাতপাই, পাটপট্টি, জয়নগর, নাগড়া মৌজায় নাগড়া কাটলী, ময়মনসিংহ রোড, ছোট বাজার, কুরপাড়সহ বেশ কিছু জায়গায় ৬৪ জন অবৈধ দখলদারের লিখিত তালিকা রয়েছে। এসব মৌজায় দখলের তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তারা হচ্ছেন নিখিলনাথ রোডের পানু সিংয়ের বিল্ডিং, বড় বাজারের জয়নাল আবেদিনের টিনের ঘর, পঞ্চাননপুরে নিত্যানন্দ বিশ্বাস প্রকাশের টিনের ঘর, মালনীতে ওয়াদুদ মামুনের ভিটি পাকা, অজহর রোডে রতন সরকারের ভিটি কাঁচা, মালনী রোডে সজল সরকারের ভিটি কাঁচা, গোবিন্দপুরে সুব্রত সরকারের ভিটি কাঁচা, হরিখালীতে জাহাঙ্গীর মিয়ার ভিটি কাঁচা, ইসলামপুরে আবদুল মোতালিবের ভিটি কাঁচা, ইসলামপুর ছালাম মিয়ার ভিটি কাঁচা, মালনী রোডে রতন মিয়ার ভিটি কাঁচা, অশীষের ভিটি কাঁচা, শিবগঞ্জ রোডে ফখরুল ইসলামের বিল্ডিং, আরামবাগ ক্রিয়েনানি কিন্ডার গার্টেন স্কুল টিনের ঘর প্রভৃতি। আবার সব বাড়িঘরের এবং হোটল মোটেল রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ফেলা হয় মগড়া নদীতে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম বলেন, মগড়া নদী নেত্রকোনা শহরের প্রাণ। আর এটিকে রক্ষা করতে হলে দখল-দূষণমুক্ত করা অতীব জরুরি। দখলদারদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। এদিকে নদীর সৌর্ন্দয বর্ধনের জন্য পরিকল্পনাও পাঠানো হচ্ছে। তবে কিছু মামলা চলমান থাকায় সব ঠিকঠাকভাবে করা যাচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর