শনিবার, ৯ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভাঙ্গা-মাওয়া ট্রেন আগামী বছরেই

ঢাকা-যশোরে সরাসরি ট্রেন চলবে ২০২২ সালে ♦ ব্যয় হচ্ছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা

নিজামুল হক বিপুল

ভাঙ্গা-মাওয়া ট্রেন আগামী বছরেই

পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের মাধ্যমে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আসছে দেশের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল। প্রথম ধাপে ঢাকার কমলাপুর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা যশোর পর্যন্ত নির্মাণ হচ্ছে ১৭২ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন। ২০২২ সালের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। তবে ২০২০ সালের ডিসেম্বরেই মাওয়া থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫১ কিলোমিটার রেলপথে চলবে ট্রেন। পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে রেল লাইন নির্মাণসহ এই প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের পর ব্যয়ের দিক থেকে এটি হচ্ছে দ্বিতীয় বৃহৎ প্রকল্প। আর এই প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকার অর্থায়ন করছে ১৮ হাজার ২১০ কোটি টাকা। বাকি ২১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা অর্থায়ন করবে চীন। বাংলাদেশ রেলওয়ের পদ্মা রেল লিংক প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, রেলপথটি ঢাকার কমলাপুর থেকে শুরু হয়ে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইলের ওপর দিয়ে গিয়ে শেষ হবে যশোরে। পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলের জেলা বরিশাল এবং পটুয়াখালীর পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গেও যুক্ত হবে পর্যায়ক্রমে। এই অংশের কাজ হতে আরও সময় লাগবে। আর এটি নির্মাণ হলে প্রথমবারের মতো রেল যোগাযোগের আওতায় আসবে দেশের দক্ষিণাঞ্চল। এর বাইরে পর্যায়ক্রমে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গেও যুক্ত হবে বাংলাদেশ।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, এখন মূলত পদ্মা রেল লিংক প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ হবে ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ। এই রেলপথটির প্রথম সেকশন কমলাপুর থেকে গেন্ডারিয়া পর্যন্ত হবে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন। দ্বিতীয় সেকশন হবে গেন্ডারিয়া থেকে মাওয়া ৩৬ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন। এটি ব্রডগেজ। এই সেকশনে থাকবে ৪টি স্টেশন। তৃতীয় সেকশন হবে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা জংশন পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার। এটিও হবে সিঙ্গেল লাইন ব্রডগেজ। এই ৪২ কিলোমিটারের মধ্যে স্টেশন থাকবে ৫টি। চতুর্থ সেকশনে ভাঙ্গা থেকে রূপদিয়া পর্যন্ত রেলপথ হবে ৮৬ কিলোমিটার। এটিও হবে ব্রডগেজ সিঙ্গেল লাইন। এই অংশে স্টেশন হচ্ছে ১০টি। সব মিলিয়ে কমলাপুর থেকে রূপদিয়া পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলপথে মোট স্টেশন হচ্ছে ২০টি। যার মধ্যে ১৪টি নির্মাণ হবে একেবারে নতুন। এগুলো হচ্ছে-রানীগঞ্জ, নিমতলা, শ্রীনগর, মাওয়া, জাজিরা, শিবচর, ভাঙ্গা, নাগরকান্দা, মুকসুদপুর, মহেশপুর, লোহাগড়া, নড়াইল, পদ্মবিলা এবং জামদিয়া। বাকি ছয়টি স্টেশন রি-মডেলিং করা হবে। প্রকল্প সূত্র জানায়, এই রেল পথের মধ্যে প্রায় ২২ কিলোমিটার নির্মাণ হবে ভায়াডাক্ট রেলপথ। অনেকটা উড়াল সড়কের মতো। মাটি থেকে ১১ মিটার উঁচু দিয়ে রেল লাইন নির্মাণ হবে। এই অংশে স্টেশন থাকবে দুটি। নির্মাণ করা হবে ৪৩ কিলোমিটার লুপ। থাকবে একটি মেইন লাইন, স্থাপন করা হবে লিফট। এর বাইরে পদ্মা রেল লিংক প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হবে বড় ব্রিজ ৬৬ মিটার এবং ছোট-বড় মিলিয়ে ২২৪ মিটার ব্রিজ-কালভার্ট। ৩০টি লেভেল ক্রসিং এবং ৪০টি আন্ডারপাস নির্মাণ হবে। এ ছাড়া ১০০টি ব্রডগেজ যাত্রীবাহী কোচ কেনা হবে প্রকল্পের আওতায়। ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হলেও রেলখাতের বৃহৎ এই প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, ২০২২ সালের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে। তবে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে যখন পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হবে তখন এই সেতু দিয়ে ট্রেনও চলবে। তিনি বলেন, ওই সময়ের মধ্যে মাওয়া থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কাজ শেষ হয়ে যাবে। এই ৫১ কিলোমিটারে তখন নিয়মিত ট্রেন চলাচল করবে। রেলপথ মন্ত্রী জানান, এই ৫১ কিলোমিটারের কাজ দ্রুত শেষ করতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ চীনা কোম্পানিকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর