শিরোনাম
রবিবার, ১০ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিনা খরচে আইনি সেবা গ্রহণে এগিয়ে নারীরা

আরাফাত মুন্না

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার বাসিন্দা রেহেনা আক্তার। ২০১৩ সালে বিয়ে করেন একই থানার মো. রাসেলকে। সংসার শুরুর কিছুদিন পর থেকেই নানা অজুহাতে স্বামী তার কাছে টাকা চান। প্রথম দফায় রেহেনার বাবা ৫০ হাজার টাকা দিলেও পরে আর দিতে না পারায় তার ওপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়্গ। বিষয়টি নিয়ে গ্রাম্য শালিসও হয়। কিন্তু কাজ হয়নি।

রাসেল ও তার পরিবার গর্ভবতী অবস্থায় রেহেনাকে মারধর করে পাঠিয়ে দেন বাবার বাড়ি। রেহেনার বাবা যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা করেন। টাকার অভাবে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে না পারায় ফৌজদারি মামলাটি খারিজ হয়। এরই মধ্যে রেহেনার কোলজুড়ে আসে এক পুত্রসন্তান। রাসেল এরই মধ্যে রেহেনাকে তালাক নোটিস পাঠান। শেষ ভরসা হিসেবে পারিবারিক আদালতে দেনমোহর খোরপোশের জন্য মামলা করেন রেহেনা। এ মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে পৌঁছলে পারিবারিক আদালতের বিচারক মামলাটি আপস নিষ্পত্তির জন্য কুমিল্লার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে পাঠান। লিগ্যাল এইড অফিসার সিনিয়র সহকারী জজ ফারহানা লোকমানের মধ্যস্থতায় কয়েক দফা বৈঠকের পর উভয় পক্ষের সম্মতিতে মামলাটির নিষ্পত্তি হয়। সিদ্ধান্ত হয়, রাসেল রেহেনার কাবিনের উসুল বাবদ ১ লাখ ৪০ হাজার এবং রেহেনা ও বাচ্চার বকেয়া খোরপোশ বাবদ ৬৩ হাজার টাকা তিনটি কিস্তিতে দেবেন। এ ছাড়া বাচ্চার ভবিষ্যৎ খোরপোশ বাবদ প্রতি মাসে ১২০০ টাকা করে দিতে হবে, যা প্রতি বছর ২০০ টাকা করে বাড়বে। শুধু রেহেনা আক্তারই নন, গত ১০ বছরে সারা দেশের লিগ্যাল এইড অফিসগুলো থেকে বিনা খরচে আইনি সেবা গ্রহণ করেছেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৪৯১ জন নারী। জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানে সারা দেশে ৬৪টি সরকারি লিগ্যাল এইড অফিস রয়েছে। এখান থেকে আইনজীবী নিয়োগের মাধ্যমে উচ্চ ও নিম্ন আদালতে মামলা পরিচালনার পাশাপাশি বিভিন্ন আইনি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এ সহায়তা গ্রহণকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আর এ ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে রয়েছেন। জানা গেছে, ধনী-গরিব সবার সমভাবে আইনি আশ্রয় লাভের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২০০০ সালে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান আইন প্রণয়ন করে সরকার। তবে আইনটির বাস্তবায়ন শুরু হয় ২০০৯ সালে। প্রথম দিকে শুধু বিনা খরচে মামলা পরিচালনার মাধ্যমে আইনি সহায়তা দেওয়া হতো। বর্তমানে এ সহায়তার পরিধি বেড়েছে। আইনজীবী নিয়োগের মাধ্যমে উচ্চ ও নিম্ন আদালতে মামলা পরিচালনার পাশাপাশি বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর), হটলাইনে/হেল্পলাইনে আইনি পরামর্শ প্রদান, শ্রমিক আইন সহায়তা সেল গঠনের মাধ্যমে আইনি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

আয়সীমায় বাধা নেই নারীদের : জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী বিনা খরচে আইনি সেবা পেতে হলে বার্ষিক আয়সীমা সুপ্রিম কোর্টের ক্ষেত্রে দেড় লাখ এবং নিম্ন আদালতের ক্ষেত্রে ১ লাখ টাকার ওপরে হতে পারবে না। তবে শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন এবং যৌন নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুদের ক্ষেত্রে এ বিধান কার্যকর হবে না। আয়সীমা যা-ই হোক নির্যাতনের শিকার নারীরা সরকারি খরচেই নিজের মামলা পরিচালনা করতে পারবেন। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সর্বদাই আন্তরিক এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে সহিংসতার শিকার নারীদের অধিকার ও সুবিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে বিনা খরচে তাদের সরকারি আইনি সেবা প্রদান করা হচ্ছে। আইনগত সহায়তা প্রদান আইনটি অনেকটাই নারীবান্ধব। তাই এ আইনের আওতায় নারী সেবাগ্রহীতার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর