মঙ্গলবার, ১২ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

সোনার ট্রানজিট পয়েন্ট চট্টগ্রাম

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

সোনার ট্রানজিট পয়েন্ট চট্টগ্রাম

আন্তর্জাতিক সোনা চোরাচালানের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে চট্টগ্রাম। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা সোনা চোরাচালানের সিংহভাগই চট্টগ্রামের রিয়াজুদ্দীন বাজার ও খাতুনগঞ্জ হয়ে চলে যাচ্ছে ভারত ও দেশের অন্যান্য জায়গায়। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় চট্টগ্রামে অপ্রতিরোধ্য চোরাকারবারিরা। আর ‘ওপেন সিক্রেট’ চলা এ চোরাকারবারিদের সহায়তার বিনিময়ে প্রশাসন নেয় মোটা অঙ্কের উৎকোচ। চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের বন্দর জোনের উপকমিশনার এস এম মোস্তাইন হোসেন বলেন, ‘বিগত সময়ে চট্টগ্রামে আটক হওয়া কয়েকটি সোনার চালান প্রাথমিক তদন্ত করে দেখা যায়, এ চালানগুলোর গন্তব্য ছিল ভারত ও দেশের অন্যান্য জায়গায়। তাই ধারণা করছি, চোরাকারবারিরা চট্টগ্রামকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছে। এটি নজরে আসার পর বিষয়টা মাথায় রেখেই কাজ করা হচ্ছে।’ নানা অভিযোগের বিষয়ে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কাস্টমসের উপকমিশনার নুর উদ্দিন মিলন বলেন, ‘বিমানবন্দরে অনেক সংস্থা কাজ করে। সবার প্রচেষ্টা থাকে স্বর্ণ চোরাচালান রোধ করা। কাস্টমসে সংশ্লিষ্ট কেউ সোনা চোরাচালানে জড়িত নয়। যদি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, মধ্যপ্রাচ্য থেকে সোনা কেনার পর বিশাল একটি অংশ বাংলাদেশ হয়ে পাঠানো হয় ভারতে। এ চালানের বাহক হিসেবে ব্যবহার করা হয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে দেশে আসা শ্রমিক ও লাগেজ ব্যবসায়ীদের। বাহককে সোনা বহনের বিনিময়ে দেওয়া হয় যাতায়াতের টিকিট ও কিছু টাকা। বিমানে ওঠার আগে হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় চালান। এরপর চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এলে বিমানের নির্ধারিত স্থানে চালানের প্যাকেটটি বিমানে রেখে বের হয়ে আসেন বাহক। পরে সিভিল এভিয়েশন, শুল্ক বিভাগ ও বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায় চালান বের করা হয় বিমানবন্দরের বাইরে। বিমানবন্দরে প্রতি তোলা সোনার জন্য ঘুষ দিতে হয় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। এরপর সোনা সিন্ডিকেটের কমিশন সদস্যদের সহায়তায় ওই চালান চলে যায় নির্ধারিত স্থানে। চট্টগ্রামে আসা সিংহভাগ চালান চলে যায় সোনা চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য খ্যাত রিয়াজুদ্দীন বাজার ও খাতুনগঞ্জে। এ দুই স্থানে সোনা চোরাচালানের ছোট-বড় শখানেক চোরাকারবারি রয়েছে। তারা বাইরে নিজেদের কসমেটিকস, মোবাইল ব্যবসায়ী, আমদানি-রপ্তানি ও কাপড় ব্যবসায়ী পরিচয় দিলেও আড়ালে করেন সোনা চোরাচালান। চট্টগ্রামের আলোচিত সোনা চোরকারবারিদের মধ্যে অবাঙালি ব্যবসায়ী আসিফ আহমেদ, আরিফ, আবু আহমেদ, সিএনজি জসিম, রিজোয়ান কমপ্লেক্সের ইসলাম, জাহাঙ্গীর, ইকবাল, আলমগীর, ক্রোকারিজ মার্কেটের হোসেন মোল্লা, মশারি মার্কেটের ফয়েজ, গোলাম রাসুল মার্কেটের আজম, মোবাইল জোনের আইয়ুব, সাইফুল, হাকিম, সাত্তার, এনামুল হক নাঈম, জাহিদ, আজগর, নেজাম, রহিম, ওসমান, আলমগীর অন্যতম। বাংলাদেশ থেকে ভারতে সোনা পাচারের সময় সিংহভাগ ক্ষেত্রেই স্থলভাগ ব্যবহার করা হয়। এ ক্ষেত্রে কখনো সরাসরি বাহকের মাধ্যমে সোনা পাচার হলেও কিছু সময় পর্যটক ও বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া ব্যক্তিদের ব্যবহার করেন সোনা পাচারকারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা। বাংলাদেশে আসা সোনার চালান ভারতমুখী হওয়ার কারণ উল্লেখ করে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, মধ্যপ্রাচ্য থেকে আনা সোনা বাংলাদেশে বিক্রি করলে লাভ হয় কেজি প্রতি চার লাখ টাকা। কিন্তু এ চালান ভারতে নিয়ে যেতে পারলে লাভ হয় কেজি প্রতি কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা। তাই সোনা চোরাকারবারিরা সোনার চালান দেশে নিয়ে আসার পর ফের ভারতে পাচার করা হয়। সোনার চালান ভারতে পাচারের পর সরাসরি বিনিময় মুদ্রা গ্রহণ করা হয় না। এ ক্ষেত্রে বিনিময় মুদ্রার পরিবর্তনে ভারত থেকে আসা চোরাই পণ্য গরু, মোটরসাইকেল, গাড়ি, জুয়েলারিসহ অন্যান্য পণ্য গ্রহণ করা হয়।

সর্বশেষ খবর