বুধবার, ১৩ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গাদের নিয়ে যত সংকট

অনেকেই ইয়াবা ও মানব পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গারা দিন দিন অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে। রোহিঙ্গাদের কারণে দেখা দিয়েছে নতুন নতুন সংকট। তাদের হামলার শিকার হচ্ছেন স্থানীয় সাধারণ মানুষ থেকে পুলিশ, এনজিও কর্মকর্তা, দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ও ত্রাণ সহায়তা দিতে আসা বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। আবার একটি অংশ জড়িয়ে পড়েছে ইয়াবা, মানব পাচারের মতো জঘন্য অপরাধের সঙ্গেও। ক্যাম্পে তাদের নিজেদের মধ্যেও বাড়ছে ঝগড়া-বিবাদ ও খুনোখুনি। এ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের মধ্যে পারস্পরিক হামলা ও পরিকল্পিত খুনের ঘটনায় নিহত হয়েছে ২০ জনের অধিক রোহিঙ্গা। আর বিভিন্ন সময় আহত হয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তাসহ দুই শতাধিক লোকজন। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের একটি বড় সিন্ডিকেট ইয়াবা ও মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে জানান স্থানীয় পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ইতিমধ্যে তারা কয়েকজনকে চিহ্নিত ও আটক করতে সক্ষম হলেও মূল হোতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ইতিমধ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়ে অপরাধীদের ধরার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রোহিঙ্গাদের পুরোপুরি নিবন্ধনের আওতায় আনা হলে অপরাধীদের চিহ্নিত করা আরও সহজ হবে বলে মনে করছে পুলিশ প্রশাসন। উখিয়া-টেকনাফের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাইলাউ মারমা বলেন, ‘লাখ লাখ রোহিঙ্গার মাঝে কিছু সংখ্যক উচ্ছৃঙ্খল ও অপরাধপ্রবণ লোক থাকবে এটাই স্বাভাবিক। অপরাধের মাত্রা যেন আর না বাড়ে সেদিকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’

অপরাধমূলক কর্মকান্ডে  রোহিঙ্গাদের জড়িয়ে পড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন পুলিশ কর্মকর্তারা। ইতিপূর্বে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন একাধিক সমাবেশেও রোহিঙ্গাদের অপরাধে জড়িয়ে পড়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর নজর রাখতে কক্সবাজারের কুতুপালং ও রামুর আশ্রয় কেন্দ্রগুলোয় পাঁচটি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন হলেও কমছে না অপরাধ। রোহিঙ্গারা যাতে অপরাধে জড়াতে না পারে এবং বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে জন্য সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কারণ আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে পারলে অপরাধও কম হবে- এমন ধারণা থেকে এই সিদ্ধান্ত হলেও অপরাধ বা রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়দের সংকট কমছে না। সম্প্রতি উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্বপালন করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন ফ্রান্সের দুই সাংবাদিকসহ একাধিক স্থানীয় লোকজন। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের অপরাধ কর্মকা  নিয়ে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কারণে আজ উখিয়া-টেকনাফের মানুষ সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে। এতে স্থানীয়দের নিরাপত্তা দিন দিন ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। আজকে একজন খুন হয়েছে, কাল ১০ জন খুন হতে পারে।’ এদিকে রোহিঙ্গাদের সামলাতে যখন ব্যস্ত পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, তখন ইয়াবা পাচারকারী সিন্ডিকেট বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। এ কাজে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের একটি চক্র জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় লোকজন। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপসহ বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে গত দুই মাসে বড় বড় ইয়াবার চালান খালাস হয়েছে বলে জানা গেছে। শাহপরীর দ্বীপ হাইওয়ে পুলিশের হাতে, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও র‌্যাবের অভিযানেও কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। এসবের পেছনে রয়েছে রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের ভিতরে যেমন সহিংস আচরণ করছে, তেমনি দিন দিন বাইরেও সহিংস আচরণে লিপ্ত হচ্ছে। গত দেড় বছরে রোহিঙ্গারা সামান্য কারণে পরস্পরকে হত্যা করেছে, তেমনি ঠুনকো বিষয়কে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাঙালিদের ওপরও চড়াও হয়েছে। পুলিশের একাধিক সূত্রে জানা যায়, পুলিশের গত ত্রৈমাসিক অপরাধ পর্যালোচনার সভার বেশিরভাগ জুড়েই ছিল রোহিঙ্গা ইস্যুটি। রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প এলাকায় আরও কী পরিমাণ ক্যাম্প স্থাপন জরুরি, এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা যেন দেশের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে জন্য সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাখাইনে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডে  জড়িত রোহিঙ্গাদেরও চিহ্নিত করার কাজ চলছে। বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে গোয়েন্দারা এরই মধ্যে চিহ্নিত করেছেন। তাদের মধ্যে ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’র (আরসা) কোনো সদস্য রয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর