বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

খুনোখুনিতে কিশোররা

মির্জা মেহেদী তমাল

খুনোখুনিতে কিশোররা

রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়েছিল সিজান। সাড়ে ১১টার দিকে একটি ফোন আসে তার কাছে। ফোনে কথা বলতে বলতে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় সিজান। ১৫ বছরের ছেলে সিজান এত রাতে বাইরে যাওয়ায় তার বাবা একটু টেনশনে। আধা ঘণ্টা পর সিজানের বাবার কাছে ফোন আসে। অন্য প্রান্ত থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি বলেন, সিজান ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি আছে। তার জন্য রক্তের প্রয়োজন এবং দ্রুত সেখানে যেতে বলেন। এ সংবাদ শুনে সিজানের পরিবারের লোকজন ঢামেক হাসপাতালে যান এবং সেখানে সিজানকে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পান। কিন্তু সেই রাতেই সিজান মারা যায়। পরে সিজানের পরিবার জানতে পারে, ঢামেক হাসপাতালের দক্ষিণ পাশে ১৪ নম্বর বকশীবাজার রোডে দুর্বৃত্তরা সিজানকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। পরে রক্তাক্ত সিজানকে ঢামেক হাসপাতালের গেটে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।

চকবাজার মডেল থানা পুলিশ মামলার তদন্ত শুরু করে। তাদের ধারণা, ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে সিজান খুন হতে পারে। তবে পাশাপাশি তদন্ত করে পিবিআই। তারা জানতে পারে ভিন্ন তথ্য। এলাকায় জুনিয়র-সিনিয়র দ্বন্দ্বের জেরে সিজান খুনের শিকার হয়। এরা প্রত্যেকেই কিশোর বয়সী। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কিশোররাই জড়িয়ে পড়েছে খুনোখুনিতে। সিজানের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ইমন ও মুন্নাকে গ্রেফতার করা হয়।

পিবিআই জানায়, ইমনকে (১৯) কক্সবাজার আর মুন্না মিয়াকে (১৮) ঢাকার বংশাল থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ইমনের কাছ থেকে হত্যার ঘটনায় ব্যবহৃত একটি সুইচ গিয়ার চাকু ও সিজানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন সেট উদ্ধার করা হয়। তাদের কাছ থেকে পুলিশ খুনের রহস্য উদ্ঘাটন করে। পিবিআই জানতে পারে, বংশাল ও চকবাজার থানার সুরিটোলা, চানখাঁরপুল ও মালিটোলায় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি সিনিয়র-জুনিয়র গ্রুপ রয়েছে; যার একটি ইমন ও অন্যটি সিজান গ্রুপ নামে পরিচিত। এলাকায় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে গ্রুপ দুটির মধ্যে অনেকদিন ধরেই বিরোধ চলে আসছিল। ঘটনার এক-দেড় মাস আগে এলাকায় ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে সিজানের সঙ্গে ইমনের কথাকাটাকাটি হয়। এর জেরে সিজান গ্রুপের লোকজন ইমনের গ্রুপের একজনকে ছুরিকাঘাত করে আহত করে। ঘটনার পর ইমন, মুন্নাসহ অন্য সহযোগীরা সিজানকে খুন করার পরিকল্পনা করে। সে অনুসারে ঘটনার দিন ৭ মার্চ রাতে সিজানকে মোবাইল ফোনে বাসা থেকে ডেকে নেয় ইমন। তারা সিজানের শরীরের বিভিন্ন স্থান ধারালো চাকু দিয়ে জখম করে পালিয়ে যায়।

পিবিআইর বিশেষ পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সিজানকে হত্যার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সিজানের সঙ্গে তারা মেলামেশা করতে থাকে। সব ভুলে যাওয়ার কথা বলে সিজানের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ইমন ও তার সহযোগীরা। এর পরই সিজানকে ডেকে হত্যা করে তারা।’ পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, জুনিয়র-সিনিয়র নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় দ্বন্দ্ব রয়েছে। এসব দ্বন্দ্বে কিশোররা জড়িয়ে পড়ছে। আর খুনোখুনিতে অংশ নিচ্ছে তারা। বাবা-মায়ের অসচেতনতার অভাবে উঠতি বয়সের কিশোররা নানা অপরাধে এমনকি খুনোখুনিতে জড়িয়ে পড়ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর