বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

অভিজিৎ হত্যায় মেজর জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিজ্ঞান লেখক ড. অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় সৈয়দ  মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে জিয়াসহ (চাকরিচ্যুত মেজর) ছয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দিয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটিটিসি)।

গত মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামান আনসারীর আদালতে এ চার্জশিটটি দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার  টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম। মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ৩৪ জনকে। মামলাটির পরবর্তী শুনানি জন্য আগামী ২৫ মার্চ দিন ধার্য রয়েছে। মামলায় মেজর জিয়া ছাড়া অপর আসামিরা হলেন মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন (সাংগঠনিক নাম শাহরিয়ার), আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, আকরাম হোসেন ওরফে আবির, মো. মুকুল রানা ওরফে শরিফুল ইসলাম ওরফে হাদী, মো. আরাফাত রহমান, শফিউর রহমান ফারাবি। মেজর জিয়া ও আকরাম হোসেন পলাতক রয়েছেন। অপরদিকে সাদেক আলী ওরফে মিঠুসহ ১৫ জনকে অব্যাহতির আবেদন করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। চার্জশিটে বলা হয়েছে, আসামি মোজাম্মেল হুসাইন, আকরাম হোসেন, হাসান ও আবু সিদ্দিক হত্যাকান্ডের দুই মাস আগে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের ১৯২/২ নম্বর বাসাটি ভাড়া নিয়ে অভিজিৎ রায়কে বিভিন্ন স্থানে অনুসরণসহ হত্যাকা- বাস্তবায়ন করেন। আসামি মোজাম্মেল রেকি টিমের নেতৃত্ব প্রদান করাসহ অপারেশন শাখার মুকুল রানাকে অনুসরণসহ এর হত্যাকান্ডের সার্বিক সহযোগিতা এবং আসামিদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন। অপরদিকে আসামি আবু বকর, আকরাম ও হাসান অভিজিৎ রায়কে হত্যার অভিপ্রায় অনুসরণ এবং রেকি করাসহ হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণকারী আসামিদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন। আসামি আরাফাত রহমান, আলী ওরফে খলিল, অনিক ও অন্তু আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের অপারেশন শাখার সদস্য সাংগঠনিকভাবে তাদের দায়িত্ব হচ্ছে টার্গেট ব্যক্তিকে হত্যা করা। আর অভিজিৎকে তারা চারজনই চাপাতি দিয়ে নির্মমভাবে কোপায়। অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে তাকেও কুপিয়ে বাম হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুল কেটে ফেলে এবং মারাত্মক আহত করে।

 অপারেশন শাখার চারজন আসামি যাতে হত্যাকা- সংঘটিত করে নিরাপদে পালিয়ে যেতে পারে তার জন্য তাদের চারপাশে আসামি মেজর জিয়া, সেলিম, মুকুল রানা, মোজাম্মেল, আবু সিদ্দিক, আকরাম ও হাসান অভিজিৎ রায়কে কোপানোর সময় কর্ডন করে রাখেন।

অব্যাহতির আবেদন : অব্যাহতি আবেদনের আসামিরা হলেন সাদেক আলী ওরফে মিঠু, মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান, আমিনুল মল্লিক, জাফরান হাসান, জুলহাস বিশ্বাস, আবদুর সবুর ওরফে রাজু সাদ, মাইনুল হাসান শামীম, মান্না ইয়াহিয়া ওরফে মান্নান রাহি, আবুল বাশার, মুকুল রানা, সেলিম, হাসান, আলী ওরফে খলিল, অনিক ও অন্তু। আসামি সাদেক আলী ওরফে মিঠু, মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান, আমিনুল মল্লিক, জাফরান হাসান, জুলহাস বিশ্বাস, আবদুুর সবুর ওরফে রাজু সাদ ও মাইনুল হাসান শামীমের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় অব্যাহতি আবেদন করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। এ ছাড়া মান্না ইয়াহিয়া ওরফে মান্নান রাহি ও আবুল বাশার চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যান। মুকুল রানা খিলগাঁও এলাকায় বন্ধুকযুদ্ধে মারা যান। অপর পাঁচ আসামি সেলিম, হাসান, আলী ওরফে খলিল, অনিক ও অন্তুর নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় তাদের অব্যাহতি আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

মূল পরিকল্পনাকারী মেজর জিয়া : অভিজিৎ হত্যাকান্ডে জড়িত ওই তিনজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, অন্যান্য আলামত বিশ্লেষণ ও তদন্তে প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণাদি সবকিছু মিলে স্পষ্ট হয়েছে এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত পলাতক মেজর জিয়া।

উল্লেখ্য, বিজ্ঞান লেখক ড. অভিজিৎ রায়কে ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত সোয়া ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে জখম করে। আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত সাড়ে ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। পরে ২৭ ফেব্রুয়ারি অভিজিতের বাবা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অজয় রায় শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

সর্বশেষ খবর