শুক্রবার, ১৫ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিত্তশালীরা এগিয়ে আসুন : প্রধানমন্ত্রী

৩১ প্রকল্প উদ্বোধন

প্রতিদিন ডেস্ক

বিত্তশালীরা এগিয়ে আসুন : প্রধানমন্ত্রী

টাঙ্গাইলে মির্জাপুর কুমুদিনী ট্রাস্টে গতকাল দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা স্মারক স্বর্ণপদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অতিথিরা -বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার (আরপি সাহা) দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসার জন্য দেশের বিত্তশালীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রণদা প্রসাদ সাহা দেশের নারী শিক্ষার প্রসার ঘটানো থেকে শুরু করে  মানবতার সেবায় যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন তা অনুসরণ করার আমাদের দেশে অনেক বিত্তশালী আছেন। তারাও তা করতে পারেন। তাহলে আমাদের দেশের মানুষের আর কোনো কষ্ট থাকবে না। খবর বাসস। গতকাল টাঙ্গাইল কমুদিনী ট্রাস্ট কমপ্লেক্সে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা স্মারক স্বর্ণপদক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। জাতির পিতার ছোট মেয়ে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রণদা প্রসাদ দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করা সত্ত্বেও পরিশ্রম ও বুদ্ধিমত্তায় তিনি বাংলার অন্যতম ধনী হিসেবে পরিণত হয়েছিলেন। তবে অর্থ-বিত্তের মালিক হওয়ার পরও তিনি ভোগ-বিলাসে ডুবে যাননি। বরং অর্জিত অর্থ মানবকল্যাণে ব্যয় করেছেন। নারী শিক্ষার প্রসারে রণদা প্রসাদের ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, তিনি একে একে ভারতেশ্বরী হোমস, কুমুদিনী কলেজ এবং পিতার নামে দেবেন্দ্র কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। দেশের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে তিনি আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল (বিডি) ৮৬ বছর কার্যকাল পূর্তি উপলক্ষে চারজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে এ বছরের দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা স্বর্ণপদকে ভূষিত করা হয়। তারা হচ্ছেন, গণতন্ত্রের মানসপুত্র তদানীন্তন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী (মরণোত্তর), জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), ১৯৫২ সালের ভাষাসৈনিক ও জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম এবং প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী শাহবুদ্দীন আহমেদ। সোহরাওয়ার্দীর পক্ষে শেখ রেহানা এবং জাতীয় কবির পক্ষে কবির নাতনি খিলখিল কাজী প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণপদক গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজিব প্রসাদ সাহা। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন ট্রাস্টের পরিচালক ও ভাষাসৈনিক প্রতিভা মুৎসুদ্দি এবং পরিচালক শ্রীমতী সাহা। স্বাগত বক্তৃতা করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য একাব্বর হোসেন। অনুষ্ঠানে রণদা প্রসাদ সাহার জীবন এবং কর্মের ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শিত হয়। জাতীয় সংগীত এবং দেশাত্মবোধক গানের মধ্য দিয়ে শুরু এই অনুষ্ঠানে ভারতেশ্বরী হোমসের মেয়েরা বর্ণাঢ্য ডিসপ্লে প্রদর্শন করে। প্রধানমন্ত্রী কুমুদিনী কমপ্লেক্স থেকে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে জেলার ৩১টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ছেলে রাশেদ সোহরাওয়ার্দী তাঁর বাবার পদক গ্রহণের জন্য বাংলাদেশে আসার বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার পর তাঁর আকস্মিক প্রয়াণে দুঃখও প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এবারের দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা স্মারক স্বর্ণপদকে যারা ভূষিত হলেন, তাঁরা সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে উজ্জ্বল নক্ষত্র।’ তিনি রণদা প্রসাদ সাহার পরিবারের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু পরিবারের পারিবারিক যোগসূত্রের কথা স্মরণ করতে গিয়ে ’৭৫-এর বিয়োগান্তক অধ্যায়ও ভাষণে টেনে এনে বলেন, ‘স্বজন হারাবার বেদনা নিয়েই কিন্তু আমার যাত্রা শুরু। আমি বাবা-মা সব হারিয়ে যখন এই মাটিতে ফিরে আসি তখন আমার চারদিকে ছিল শুধু অন্ধকার। শুধু একটাই আলোক বর্তিকা পেয়েছিলাম, বাংলাদেশের জনগণ। সেই জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা পেয়েছি।’ আরপি সাহা নামে পরিচিত রণদা প্রসাদ সাহা ছিলেন একজন প্রখ্যাত ব্যবসায়ী ও জনহিতৈষী ব্যক্তিত্ব। ভারতেশ্বরী হোমস, কুমুদিনী উইমেনস মেডিকেল কলেজ, কুমুদিনী হাসপাতাল, রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমুদিনী নার্সিং স্কুল ও কলেজ, টাঙ্গাইল কুমুদিনী গার্লস কলেজ, মির্জাপুর ডিগ্রি কলেজ, মির্জাপুর এস কে পাইলট বয়েজ অ্যান্ড গার্লস হাইস্কুল, মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজের মতো অনেক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন আরপি সাহা। ১৯৭১ সালের ৭ মে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আরপি সাহা ও তার একমাত্র ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহাকে তাদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। কুমুদিনী পরিবার এই মহান দানবীরের নামে ২০১৫ সালে রণদা প্রসাদ সাহা স্বর্ণপদক প্রবর্তন করে।

চার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে স্বর্ণপদক হস্তান্তর : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মির্জাপুর কুমুদিনী কমপ্লেক্সে তদানীন্তন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী (মরণোত্তর), জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ (মরণোত্তর) চার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা স্বর্ণ পদক হস্তান্তর করেছেন। স্বর্ণ পদকপ্রাপ্ত অপর দুই ব্যক্তিত্ব হলেন, নজরুল বিশেষজ্ঞ এবং গবেষক প্রফেসর রফিকুল ইসলাম এবং বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দীন। প্রধানমন্ত্রী কুমুদিনী কমপ্লেক্সে পদকপ্রাপ্ত এবং তাদের প্রতিনিধিদের হাতে স্বর্ণপদক হস্তান্তর করেন।

সোহরাওয়ার্দীর পক্ষে শেখ রেহানা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণপদক গ্রহণ করেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পক্ষে তাঁর নাতনি খিলখিল কাজী স্বর্ণপদক গ্রহণ করেন।

সর্বশেষ খবর