মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

ক্যাম্পাসে চলছেই ক্ষোভ বিক্ষোভ

ফের নির্বাচনের দাবিতে ভিসি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন পাঁচটি প্যানেলের, মিছিল-স্লোগান

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

ক্যাম্পাসে চলছেই ক্ষোভ বিক্ষোভ

ডাকসু পুনর্নির্বাচন চেয়ে গতকাল ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সদ্য অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন বাতিল করে পুনঃনির্বাচনের দাবিতে গতকাল ছিল ক্ষোভ বিক্ষোভের ক্যাম্পাস। উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে নির্বাচন বর্জনকারী পাঁচটি প্যানেল। তবে দীর্ঘক্ষণ অবস্থানের পরও প্রশাসনের কেউ তাদের সঙ্গে কথা বলতে না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে প্যানেলগুলোর নেতৃবৃন্দ। এর আগে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বেলা ১১টার দিকে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হন কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’, বামপন্থি প্রগতিশীল ছাত্রঐক্য, স্বতন্ত্র জোট, স্বাধিকার স্বতন্ত্র জোটের প্রার্থী ও সমর্থকরা। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে উপাচার্যের কার্যালয়ের প্রবেশদ্বারে অবস্থান নেন তারা। এ সময় তারা ‘নীলনকশার নির্বাচন, মানি না মানব না’, ‘ভোট ডাকাতির নির্বাচন, মানি না মানব না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

এ সময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ডাকসু নির্বাচন বাতিল করে পুনঃনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ও ভোট জালিয়াতিতে জড়িতদের শাস্তি দবি করে বক্তব্য দেন নির্বাচন বর্জনকারী প্যানেলের নেতৃবৃন্দ। ডাকসুর জিএস পদপ্রার্থী রাশেদ খান বলেন, ১১ মার্চের নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে কলঙ্কজনক অধ্যায় সৃষ্টি করেছে, সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের ক্ষমা করবে না। তারা একটি নীলনকশার নির্বাচন বাস্তবায়ন করেছে। আমরা এই নির্বাচন বাতিল করে পুনঃনির্বাচন চাই। এ সময় আরও বক্তব্য দেন স্বতন্ত্র জোট থেকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বী অরণী সেমন্তী খান, বামজোটের জিএস পদপ্রার্থী উম্মে হাবিবা বেনজীর, জিএস পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী এ আর এম আসিফুর রহমানসহ অন্য নেতৃবৃন্দ। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বা তার দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা না বলা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণাও দেন তারা। পরে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অবস্থান করে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন  নেতৃবৃন্দ। কর্মসূচি শেষে কোটা সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খান বলেন, কারচুপির নির্বাচন করে প্রশাসন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মান সম্মান যতটুকু ছিল তার সবটুকু নষ্ট করে ফেলেছে। অরণী সেমন্তী খান বলেন, অনশনকারীরা নির্বাচনের জালিয়াতির প্রমাণ দিয়ে গেছে। মিডিয়ার কাছেও প্রমাণ আছে। তারপরেও প্রশাসনের প্রমাণ দরকার। আমরা ভিসি স্যারের অফিসের দোরগোড়ায় পাঁচ ঘণ্টা বসে আছি। আমাদের সামনে আসার সৎ সাহস তাদের নেই। গতকালের কর্মসূচিতে বোনের অসুস্থতার কারণে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর উপস্থিত ছিলেন না। বামজোটের ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দীকেও কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। উল্লেখ্য, গত রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিলেন নেতৃবৃন্দ। ডাকসু পুনঃনির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ৩ দিনের আলটিমেটাম শেষ হয়েছে শনিবার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না পাওয়ায় ফের পাঁচ দফা দাবিতে গতকাল ক্লাস বর্জন ও উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে তারা। তবে পুনঃনির্বাচন সম্ভব নয় বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

অনিয়মের অভিযোগপত্র দিল অনশনকারীরা : ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের অনিয়মের অভিযোগপত্র প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছেন পুনঃনির্বাচনের দাবিতে অনশনকারী ছয় শিক্ষার্থী। গতকাল সকালে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অভিযোগপত্র জমা দেন তারা। উপাচার্য অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন অনশনকারীরা।

অভিযোগপত্র জমা দেওয়া ওই ছয় শিক্ষার্থী হলেন- রাফিয়া তামান্না, আল মাহমুদ ত্বহা, শোয়েব মাহমুদ অনন্ত, মাইন উদ্দিন আহমেদ, তাওহীদ তানজিম ও রবিউল ইসলাম। এ সময় কয়েকজন সহকারী প্রক্টর এবং রিটার্নিং অফিসার উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগ জমা দিয়ে অনশনকারীরা বলেন, উপাচার্য আমাদের অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন এবং বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু তার আশ্বাসে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি। ১০ পাতার ওই অভিযোগপত্রে অন্তত দশটি হলের শিক্ষার্থীদের বরাত দিয়ে ভোটগ্রহণে নানা অনিয়মের অভিযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের কর্মীদের দ্বারা  ভোটারদের কৃত্রিম সারি তৈরি, ভোটকেন্দ্রে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ঢুকতে না দেওয়া, মারধর করা, ‘ভোট দেওয়া হয়ে গিয়েছে’ বলে বের করে দেওয়া ইত্যাদি।

সর্বশেষ খবর