বুধবার, ২০ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

হাবিপ্রবির খামারে উটপাখির ডিম

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

হাবিপ্রবির খামারে উটপাখির ডিম

উড়তে না পারলেও পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উটপাখি হাবিপ্রবির খামারে ডিম দিতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে আবহাওয়া উপযোগী উটপাখির বংশ বিস্তার ও পালনে আশার আলো জাগিয়েছে হাবিপ্রবির  জেনেটিক্স অ্যান্ড এনিমেল ব্রিডিং বিভাগ। হাবিপ্রবির চিড়িয়াখানায় গত ১ ফেব্রুয়ারি প্রথমবার একটি ডিম দেয় মা উটপাখি। এরপর ১৬ মার্চ আরেকটি ১ কেজি ১২৯ গ্রাম ওজনের একটি ডিম দিয়েছে। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে সময় লাগে ৪২-৪৩ দিন। এই ডিম ফুটানোর ইনকিউবিউটর নেই। তবে বিকল্পভাবে ফুটানোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শিগগিরই বাচ্চা ফুটানোর কক্ষ গড়ে তোলার ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানান প্রফেসর ড. আবদুল গাফ্ফার মিয়া।

গবেষণারত শিক্ষার্থী ও শিক্ষক জানান, ২ মাস বয়সী ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এসব উটপাখি আনা হয়েছে। বর্তমানে ১৮টি উটপাখি রয়েছে। এর মধ্যে ৪টি পূর্ণ বয়স্ক এবং বাকিগুলোর বয়স ৯৪ দিন। পূর্ণ বয়স্ক হতে প্রায় আড়াই বছর লাগে এবং সেই সময় থেকে ডিমও পাড়ে। একেকটি ডিম দেড় কেজি ওজনের হয়ে থাকে। উটপাখি সাধারণত ২-৪ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয়। এদের খাদ্য সহজলভ্য। এরা নেপিয়ারসহ যে কোনো ঘাস, ডুমুর গাছের পাতা, বাঁধাকপি-ফুলকপি, লালশাক, পালংশাক, পোলট্রি ফিড এবং পাথর এদের খাদ্য। উটপাখির চামড়া মূল্যবান এবং এদের মাংস আন্তর্জাতিক বাজারে অত্যন্ত উপাদেয় খাদ্য হিসেবে বিবেচিত। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক উটপাখির ওজন ৬০-১৫০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আহসান হাবীব জানান, উটপাখি নিয়ে গবেষণায় আমরা আশাবাদী। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় তাদের বৃদ্ধি ঠিকই আছে। বছরে একটি উটপাখি ৬০-১০০টি ডিম পাড়ে। এর মধ্যে অর্ধেকের সফল উৎপাদন হয়। একটি উটপাখির বাচ্চার দাম ৩০-৩৫ হাজার টাকা। অন্যান্য প্রাণীর মাংসের তুলনায় উটপাখির মাংসে চর্বির পরিমাণ ৩ শতাংশের কম ও অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ  বেশি থাকায় স্বাস্থ্য সচেতন লোকজন উটপাখির মাংস গ্রহণে আগ্রহী। গরু পালনের চেয়ে উটপাখি পালন বেশি লাভজনক হবে।

কারণ উটপাখি ৫০-৭০ বছর উৎপাদনক্ষম থাকে এবং বাঁচে কমপক্ষে ৮০-১০০ বছর। অ্যাডভান্সড অ্যানিমেল রিসার্স ফার্ম পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও হাবিপ্রবির জেনেটিক্স বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবদুল গাফ্ফার মিয়া জানান,  জেনেটিক্স অ্যান্ড এনিমেল ব্রিডিং বিভাগ ও জেনারেল এনিমেল অ্যান্ড নিউট্রিশন বিভাগের যৌথ পরিচালনায় বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পের অর্থায়নে অ্যাডভান্সড অ্যানিমেল রিসার্স ফার্মে উচ্চ শিক্ষার অপরিহার্য অংশ হিসেবে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। খামারটিতে ১ম পর্যায়ে ৪টি প্রাপ্ত বয়স্ক উটপাখি (যা গবেষণা প্রকল্পের বহির্ভূত) রয়েছে, যারা ডিম পাড়া শুরু করেছে। এতে উটপাখির খামারের আকর্ষণও বেড়ে গেছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ শত শত দর্শনার্থী বেড়েই চলেছে। ফলে বেড়া না থাকায় ডিম চুরির আশঙ্কা করছি। তাই জরুরি ভিত্তিতে তারের বেড়ার ব্যবস্থা করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অর্থ বরাদ্দের কথা জানিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর