শুক্রবার, ২২ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
নদী বাঁচাও ৩৭

নাব্যতা হারিয়ে যমুনা এখন মরা খাল

আবদুুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ

নাব্যতা হারিয়ে যমুনা এখন মরা খাল

প্রাকৃতিক বিপর্যয়, প্রতিকূল পরিবেশ, অপরিকল্পিত সড়ক-মহাসড়ক, বাঁধ, ক্রসবাঁধ, কালভার্ট, স্লুইস  গেট, উৎসমুখ ভরাট ও দখল-দূষণসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের কারণে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে সিরাজগঞ্জের নদ-নদী। সিরাজগঞ্জের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ছোট-বড় ৪০টি নদী ছিল জেলার প্রাণ। কালের বিবর্তনে ২৪টি নদ-নদীর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। বাকি ১৬টির মধ্যে করতোয়া, ইছামতী, গুমানী, গোমতী, আত্রাই, ভদ্রাবতী, গোহালা, বড়াল, নন্দকুজা, গাড়াদহ, কাঁকন-কানেশ্বরী, সরস্বতী, বাঙ্গাল, মুক্তাহার, ঝবঝবিয়া ও ফুলজোড় মৃতপ্রায়। অন্যদিকে জেলার পূর্ব দিক দিয়ে প্রবাহিত যমুনা নদীর বুকে বিশাল বিশাল চর জেগে ওঠায় নদীটি তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। ক্রমশ নদীটি পশ্চিম তীরে অবস্থিত সিরাজগঞ্জ ও পূর্ব তীরে অবস্থিত টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর-তারাকান্দি-চৌহালী উপজেলার দিকে ঢুকে পড়ছে। বর্ষা মৌসুমের করালগ্রাসী ভয়ংকর রূপ ধারণকারী যমুনা বর্তমানে নাব্যতা হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই যমুনার বুকে কচ্ছপের পিঠের মতো অসংখ্য ছোট-বড় চর জেগে উঠেছে। চরের ফাঁকে ছোট চ্যানেলগুলো মানুষ হেঁটে পার হচ্ছে। চরাঞ্চলবাসীর জন্য একদিকে যেমন সুখের বার্তা বয়ে নিয়ে এসেছে যমুনা, তেমনি জেলেদের জন্য নিয়ে এসেছে চরম দুঃখের বার্তা।

যমুনার শাখানদীতে নৌকা না চলায় মাঝি-মাল্লারা হাহুতাশ করছেন। গত কয়েক বছরে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ফলে নদীটির দেশীয় প্রজাতির প্রায় ৫০ প্রজাতির মাছের অধিকাংশেরই বিলুপ্তি ঘটেছে। এ ছাড়া বিলুপ্তির পথে রয়েছে কই, শিং, মাগুর, কাকিলা, শোল, বোয়াল, চিতল, মোয়া, বাতাসি, টেংরা, গুলশা, নন্দই, পুঁটি, সরপুঁটি, খলিশা, চেলা, ডানকানা, টাকি, বাউস, কালিবাউস, চ্যাকা, বাইন, বউমাছ ইত্যাদি। বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে গোরপুইয়া, কুচিয়া, কচ্ছপ, কাছিম ও কাঁকড়া।

 একসময় সিরাজগঞ্জের জগন্নাথগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জ-টাঙ্গাইল, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল-বেলকুচিতে স্টিমার-লঞ্চ চলাচল করত। কিন্তু পলি পড়ে চর জেগে ওঠায়  নৌরুটগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। আবার কোথাও অনেক পথ ঘুরে চর পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছুচ্ছে নৌযান। তবে সবচেয়ে অশঙ্কার বিষয়, মাঝ নদীতে বিশাল চর জেগে ওঠায় নদীর গতিপথে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। ক্রমশ যমুনা নদী পশ্চিম তীরে অবস্থিত সিরাজগঞ্জ ও পূর্ব তীরে অবস্থিত টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর-তারাকান্দি-চৌহালী উপজেলার দিকে ঢুকে পড়ছে। দ্রুত ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে যমুনার গতিপথ পরিবর্তন না করা হলে ফল শুভকর হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশালী শফিকুল ইসলাম জানান, সিরাজগঞ্জের উত্তরে কাজীপুর থেকে দক্ষিণে চৌহালী পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিমি দীর্ঘ যমুনা নদী। পূর্বে টাঙ্গাইল ও পশ্চিমে সিরাজগঞ্জের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত যমুনার প্রস্থ প্রায় ১৫ কিমি। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে লাখ লাখ টন পলি পড়ে। এ জন্য যমুনার বুকে অসংখ্য চর জেগে উঠেছে। ফলে নদীটি আঁকাবাঁকা ও বিভিন্ন চ্যানেলে বিভক্ত হয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সরকার ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদী খনন করার উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ নদীগুলোও খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে করতোয়া, ফুলজোড়, হুরাসাগর ও বাঙ্গাল নদীর ১২২ কিমি খননের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে। চলতি বছর দরপত্র আহ্বান করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর