শিরোনাম
রবিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

মেট্রোরেল চলবে ডিসেম্বরেই

লাইন-৬ তৈরি চলছে দ্রুতগতিতে, প্রথম পর্যায় উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত

মানিক মুনতাসির

মেট্রোরেল চলবে ডিসেম্বরেই

মেট্রোরেল লাইন-৬-এর একাংশ এখন দৃশ্যমান। কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুতগতিতে। চলতি বছরই মেট্রোরেলে ভ্রমণ করতে পারবেন নগরবাসী। প্রথম পর্যায়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে চালু হবে মেট্রোরেল। এর মধ্য দিয়ে মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করবে রাজধানী ঢাকা। আর ২০২০ সালে লাইন-৬-এর পুরোদস্তুর সুবিধা মিলবে একেবারে মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত।

দুই কোটির বেশি মানুষের শহর রাজধানী ঢাকা। কিন্তু সেই তুলনায় নাগরিক সুবিধা বিশেষত স্বচ্ছন্দে নগরীর এক প্রান্ত থেকে অন্যত্র ভ্রমণের সুবিধা এখনো খুবই সীমিত। যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভোগান্তির শেষ নেই এই মেগা সিটির নাগরিকদের। নগরবাসীর নিত্যদিনের ভোগান্তি কমিয়ে আনা এবং সময় বাঁচাতে সরকার রাজধানী ঢাকাকে মেট্রোরেলের আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নেয়। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) প্রকল্পের অধীনে নগরীজুড়ে অন্তত ছয়টি এমআরটি লাইন স্থাপন হচ্ছে। সরেজমিন উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প, মিরপুর, পল্লবী, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও ঘুরে দেখা গেছে, মেট্রোরেল লাইন-৬-এর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকায় ভায়াডাক্ট ও নয়টি স্টেশন নির্মাণের জন্য চেক বোরিং টেস্ট পাইল ও মূল পাইল নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। ৪৯৩টি পাইল ক্যাপ, ২০৯টি পিয়ার হেড, ৭৫টি আই-গার্ডার ও ১ হাজার ৮৬৯টি প্রিকাস্ট সেগম্যান্ট কাস্টিং নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই কিলোমিটার ভায়াডাক্ট দৃশ্যমান হয়েছে।

এমআরটি লাইন-৬-এর প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যেই উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রকল্পের অর্ধেক চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হবে। সেই লক্ষ্যে এ অংশের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। শুষ্ক মৌসুমের কারণে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই পালাক্রমে কাজ করছেন প্রকৌশলী, শ্রমিক ও প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্টরা জানান, ইতিমধ্যে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের কাজও শুরু হয়ে গেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, এমআরটি লাইন-৬-এর উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অনেক স্থানে পিলারের ওপর স্প্যান বসানো হয়েছে। উত্তরার দিয়াবাড়ীতে ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়নের কাজ নির্ধারিত সময়ের নয় মাস আগেই গত ৩১ জানুয়ারি শেষ হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, আগামী ৩০ জুনের মধ্যেই ডিপো এলাকার পূর্তকাজও শেষ হয়ে যাবে। এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের পাশাপাশি দ্বিতীয় অংশের কাজও শুরু হয়ে গেছে। সরেজমিন আগারগাঁও থেকে ফার্মগেট, বাংলামোটর, শাহবাগ, পল্টন ও মতিঝিল পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, আগারগাঁও-মতিঝিল পর্যন্ত প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ করার জন্য মূল সড়কের মধ্যখানের সড়ক বিভাজন বরাবর কাজের জায়গা সংরক্ষণ করে দুই পাশে প্রাচীর দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে রাস্তার অংশে সার্ভিস লাইন সরানোর কাজ শেষ হয়েছে। পাশাপাশি নয়টি টেস্ট পাইলিংয়ের কাজ শেষ করে মূল পাইলের কাজ শুরু হয়েছে।

প্রকল্পসূত্রে জানা গেছে, আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে মেট্রোরেল লাইন-৬-এর একাংশ চালু করার বিষয়টি মাথায় রেখে নির্ধারিত সময়ের আগেই লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) ও কোচ দেশে নিয়ে আসা হবে। ইতিমধ্যে মেট্রোরেল লোকোমোটিভ ডিজাইনও চূড়ান্ত করা হয়েছে। জাপানের কারখানায় এর রেপ্লিকা তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। কোচ তৈরির কাজও শেষ পর্যায়ে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ইতিমধ্যে সংবাদমাধ্যমকে একাধিকবার জানিয়েছেন, মেট্রোরেলের কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ হবে। দিনরাত কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। তিনি বলেছেন, এখন শুকনো মৌসুম হওয়ায় বিরামহীন কাজ চলছে।

উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল লাইন-৬-এর দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার। এই ২০ কিলোমিটারের মধ্যে স্টেশন হবে ১৬টি। এটি চালু হলে ঘণ্টায় উভয় দিকে ৬০ হাজার যাত্রী বহন করবে মেট্রোরেল। একই সময়ে উভয় দিকে ২৪ জোড়া ট্রেন চলাচল করবে। প্রতিটি ট্রেনে থাকবে ৬টি করে কোচ। ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ছুটবে মেট্রোরেল। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল মূলত ২০১২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এ প্রকল্পের নির্মাণ সময় কমিয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। লাইন-৬ নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এখন শুধু অপেক্ষা এমআরটি লাইন-৬-এর কাজ শেষ হওয়ার। পুনর্নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এবং মেট্রোরেল চালু হলে রাজধানী ঢাকার যানজট কিছুটা হলেও নিরসন হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। এতে স্বস্তি পেতে পারেন নগরবাসীর একাংশ। এদিকে মেট্রোরেল লাইন-১-এর জন্য ইতিমধ্যে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। লাইন-১ হবে বিমানবন্দর-কমলাপুর পর্যন্ত। বর্তমানে এর জরিপকাজ চলছে। জরিপ শেষ হলে নিশ্চিত হওয়া যাবে এ প্রকল্পে কী পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এটি হবে মূলত পাতালরেল। এ ছাড়া অন্য এমআরটি লাইন-৫, ৪, ৩ ও ২ নির্মাণে প্রাথমিক সম্ভাব্যতা যাচাই কাজ শুরু হয়েছে।

সর্বশেষ খবর