রবিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

শিক্ষকতার আড়ালে

মির্জা মেহেদী তমাল

শিক্ষকতার আড়ালে

ইয়াসিন আরাফাত ও সাইফুল ইসলাম। দেখতে সুদর্শন।

পেশা প্রাইভেট পড়ানো। তবে শিক্ষকতা করলেও তাদের আরও একটি ভয়ঙ্কর পরিচয় আছে। শিক্ষকতার পেশার আড়ালে তারা পর্নোগ্রাফি তৈরি করতেন। তারা পর্নো নির্মাতা। সুন্দরী তরুণীদের প্রেমের  ফাঁদে ফেলে করতেন বিয়ে। পরে তাদের কাছে গোপন করে তৈরি করতেন পর্নোগ্রাফি। ছয় মাস না যেতেই ওই তরুণীদের তালাক দিয়ে টার্গেট করতেন অন্য তরুণীদের। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সুন্দরী তরুণীদের টার্গেট করে তাদের বাসায় গিয়ে প্রাইভেট পড়াতেন ইয়াসিন আরাফাত ও সাইফুল ইসলাম। একপর্যায়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলতেন দুজনই। গোপনে করতেন ভিডিও ধারণ। পরবর্তী সময়ে সেগুলো ইন্টারনেটে ফাঁস করার ভয় দেখিয়ে ভুক্তভোগী তরুণীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতেন মোটা অঙ্কের টাকা। এভাবে দিনের পর দিন দুজনে মিলে সর্বনাশ করেন অনেক তরুণীর। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকা থেকে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব-১) হাতে গ্রেফতার হন ইয়াসিন আরাফাত ও সাইফুল ইসলাম। পর্নোগ্রাফি চক্রের এ দুই সদস্যের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় পর্নোগ্রাফি তৈরির কাজে ব্যবহৃত ৩টি মোবাইল ও একটি মেমোরি কার্ড। এ পর্যন্ত গ্রেফতার এ দুজনের হাতে বিভিন্ন সময় পাঁচজনের বেশি নারী প্রতারিত হয়েপ্রণ বলে তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। র‌্যাব-১ এর সহকারী পুলিশ সুপার (সিপিসি-১) মো. কামরুজ্জামান জানান, চক্রটি মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের প্রলোভন দেখাত এবং শারীরিক সম্পর্ক করত। সেই দৃশ্য গোপন ক্যামেরায় ভিডিও করে রাখত এবং ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে পর্নোগ্রাফি তৈরিতে বাধ্য করত। তিনি জানান, অনেক মেয়ের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন তারা। কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে দক্ষিণখান এলাকা থেকে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাবের জেরায় ইয়াসিন আরাফাত ও সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, যেসব নারীর স্বামী বিদেশ বা ঢাকার বাইরে থাকেন তাদের চিহ্নিত করে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতেন তারা। এরপর তাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে মোবাইল ফোন নম্বর নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। পরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ফ্ল্যাটে নিয়ে গিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করে গোপনে ভিডিও করে রাখতেন তারা। পরে সেই ভিডিও ইন্টারনেটে প্রকাশ করার ভয় দেখিয়ে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে প্রতারক চক্রের সদস্যরা মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতেন। র‌্যাব সূত্র জানায়, গ্রেফতার ইয়াসিন আরাফাত ২০১০ সালে এসএসসি এবং ২০১২ সালে এইচএসসি পাস করে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ইংরেজিতে অনার্স শেষ করে উত্তরখানের সানফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন। সেখানে ছাত্রীদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের দায়ে তাকে বরখাস্ত করা হয়। পরে সোনালি মডেল কিন্ডারগার্টেন নামে একটি স্কুলে ইংরেজির শিক্ষক হন। সেখান থেকে একই অভিযোগে বরখাস্ত হওয়ার পর গৃহ শিক্ষকতা শুরু করেন। দেড় বছর আগে তার সঙ্গে এক মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক হয়। পরে বিয়ের এক বছরের মধ্যে সেই তরুণীকে ডিভোর্স দেন। ছয় মাস আগে এক ছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেন আরাফাত। সম্প্রতি তাকেও ডিভোর্স দিয়েছেন তিনি।

যাদের বিয়ে করতেন তাদের সবার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করতেন। ডিভোর্সের পর তার কাছে নগ্ন ভিডিও আছে দাবি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন। অনেক সময় ভুক্তভোগীদের দিয়ে পর্নোগ্রাফি তৈরিতে বাধ্য করা হতো। এ পর্যন্ত তিনি চার-পাঁচজন মেয়েকে বিয়ের ফাঁদে ফেলেছেন বলে জানা গেছে। র‌্যাব জানায়, গ্রেফতার সাইফুল ইসলাম বরিশাল সরকারি গৌরনদী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বরিশাল বিএম কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন। ঢাকায় দক্ষিণখানের খৈনকুটি আইডিয়াল স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। ছাত্রীদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের কারণে তাকে বরখাস্ত করা হয়। পরে ছাত্রীদের বাসায় গিয়ে প্রাইভেট পড়াতেন। এ সময় ছাত্রীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে নগ্ন ছবি স্যোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে আদান-প্রদান করতেন। অনেক সময় ছাত্রীর পরিবারের কেউ বাসায় না থাকলে শারীরিক সম্পর্ক করতেন এবং তা ভিডিও ধারণ করে রাখতেন। ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতেন। একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে তার এমন সম্পর্ক ছিল বলে র‌্যাবের কাছে স্বীকার করেছেন সাইফুল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর