শিরোনাম
সোমবার, ২৫ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

শাহনাজের গান ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণার উৎস

গাজী মাজহারুল আনোয়ার

শাহনাজের গান ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণার উৎস

একে একে সবাই না ফেরার দেশে চিরদিনের মতো চলে যাচ্ছেন! এই চলে যাওয়া মেনে নেওয়া যায় না।

কিংবদন্তিতুল্য কণ্ঠশিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহর অসময়ের এই প্রস্থানকে মেনে নিতে বড় কষ্ট হচ্ছে। প্রত্যেক জীবনকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে, এ কথা অমোঘ সত্য হলেও কিছু কিছু মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। কারণ কিছু বিদায় দেশের সমৃদ্ধির ভান্ডারকে পূর্ণতা দেওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। শাহনাজের চলে যাওয়া ঠিক তেমনি একটি অপূরণীয় ক্ষতি। এই শূন্যতা কখনো পূরণ হওয়ার নয়।

‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ দেশাত্মবোধক ও জাগরণমূলক একটি গান। ১৯৭০ সালের মার্চে এই গানটি রচনা করেছিলাম। গানটি মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালিদের উদ্বুদ্ধ করেছিল। আর এই গানেই কণ্ঠ দিয়েছিলেন শাহনাজ রহমতুল্লাহ। কেবল ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ নয়, আমার লেখা এ রকম আরও বেশকিছু গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন শাহনাজ। তার মতো একজন বড় মাপের শিল্পী দেশের জন্য অ্যাম্বাসেডরের ভূমিকা পালন করেন। আজকে যদি ভারতের দিকে তাকাই দেখবেন, লতা মুঙ্গেশকরের নাম বললেই সারা বিশ্ব তাকে এক নামে চেনে। পাকিস্তানি নূরজাহানের নাম বললে সারা পৃথিবী এক নামে তাকে চেনে। তেমনি বাংলাদেশের কিছু শিল্পী আছেন যাদের নাম বললে সারা পৃথিবীর মানুষ চিনবে। শাহনাজ রহমতুল্লাহ তাদের মধ্যে একজন। সংগীতজগতে বাংলাদেশের অ্যাম্বাসেডর ছিলেন শাহনাজ রহমতুল্লাহ। বাংলা চলচ্চিত্রে প্রচুর গানে তিনি কণ্ঠ দিয়ে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তার কণ্ঠস্বর সাধারণ মানুষের মনে রেখপাত করে আছে। কালজয়ী তার কণ্ঠ। ১৯৭১ সালে আমরা যে স্বাধীনতার যুদ্ধটা করেছি শারীরিকভাবে, স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে দাবি করছি নিজেদের, সে দাবির পেছনে আমরা মনে করি সংগীতাঙ্গনের মানুষের ভূমিকা অত্যন্ত স্পষ্ট। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে আমরা প্রচার করতাম ‘জয় বাংলা বাংলার জয়/হবে হবে হবে, হবে নিশ্চয়/কোটি প্রাণ এক সাথে জেগেছে অন্ধরাতে/নতুন সূর্য ওঠার এই তো সময়।’ এ ছাড়া তার গাওয়া ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বলরে? এবার বল’ এ রকম আরও জনপ্রিয় গান রয়েছে। শাহনাজ রহমতুল্লাহর গান ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণার উৎস। তার গানে ছিল গভীর দেশপ্রেম। মানুষের হৃদয়ে দেশপ্রেম ছড়িয়ে দিতে তার গান তুলনাহীন। আমারই লেখা এ রকম আরও বেশ কিছু গান। সেসব গানের মধ্যে শাহনাজ রহমতুল্লাহ ও আব্দুল জব্বারের কণ্ঠ ছিল এবং এরকম আরও বহু শিল্পীর কণ্ঠ ছিল। তাদেরকে হারিয়ে ফেলা সত্যিই বেদনাদায়ক। এক নদী রক্ত পেরিয়ে, একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়, একতারা তুই দেশের কথা বলরে? এবার বল, প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ-এর মতো বেশকিছু দেশাত্মবোধক গান গেয়েছেন তিনি। আমি তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবার যেন এই শোক সহ্য করতে সক্ষম হয় সৃষ্টিকর্তার কাছে সেই প্রার্থনা করছি। লেখক : গীতিকার ও চলচ্চিত্র পরিচালক

সর্বশেষ খবর