মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
নদী বাঁচাও ৪১

হারিয়ে গেছে হানু নদী

রাশেদ খান, মাগুরা

হারিয়ে গেছে হানু নদী

জলবায়ু পরিবর্তন ও কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থাপনা না থাকায় মাগুরার মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে একসময়ের খরস্রোতা নদী হানু। মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার লাঙ্গলবাঁধ এলাকার গড়াই নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে একই উপজেলার        দেবীনগর পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ২০ কিলোমিটারজুড়ে একসময় বিস্তৃত ছিল এই নদীটি। জেলার নৌ যোগাযোগ, মৎস্য উৎপাদন, কৃষিজমির সেচ সুবিধাসহ নানা আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে এই নদীর ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কার না করার ফলে পলি জমে গত ৬ দশকে নদীর অধিকাংশ জায়গা সমতল ভূমিতে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি অবৈধ বসতবাড়ি ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার মাধ্যমে নদীর অনেক এলাকা জবরদখল হয়ে গেছে।

সরেজমিন শ্রীপুর উপজেলার হানু নদী তীরবর্তী গ্রামে গিয়ে কথা হয় সারঙ্গদিয়ার হাবিবুর রহমান বিশ্বাস ও জমিরুল বিশ্বাসের সঙ্গে। তারা জানান, ছোটবেলা থেকেই বাপ-দাদাদের কাছে শুনেছেন হানু নদীর কথা। এ নদীর ওপর দিয়ে বড় বড় লঞ্চ, নৌকা করে যাত্রী বহনের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা তাদের প্রয়োজনীয় মালামাল আনা-নেওয়া করতেন। এলাকার মানুষের কাছে নদীটি ছিল যাতায়াত ও ব্যবসা বাণিজ্যের একমাত্র মাধ্যম। কালের বিবর্তনে নদীতে পলি জমে নাব্যতা হারানোর পাশাপাশি অবৈধ দখলদাররা সেখানে বসতবাড়ি স্থাপন, ফলদ ও বনজ বৃক্ষের বাগান করার ফলে ধীরে ধীরে একসময়ের খরস্রোতা হানু নদীর অস্তিত্ব মাগুরার মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। এ প্রজন্মের কেউই জানে না এই নদীর নাম। হানু নদীর অস্তিত্ব হিসেবে  নোহাটা, সব্দালপুর, রাধানগর ও বরালিদহ এলাকায় সরু খালের মতো চোখে পড়ে। হানু নদী সম্পর্কে আমতৈল গ্রামের ষাটোর্ধ্ব ইবাদত আলী বিশ্বাস অতীত স্মৃতি রোমন্থন করে জানান, ছোটবেলায় তাদের বাড়ির সামনে ছোট খালের মতো ছিল। সেখানে ৪ থেকে ৫ ফুট পানি থাকত। এ সময় তিনি ডিঙি নৌকায় চড়ে মাছ শিকার করেছেন। পরবর্তীতে নদী পুনঃখনন না হওয়ায় পলি জমে এখন নদীটি অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে। বর্তমানে নদীর জমি দখল করে সেখানে অবৈধ বসতবাড়ি গড়ে উঠেছে। ভরাট হওয়া নদীর ওপরে ফসলের খেত ও বাগান তৈরি করেছেন স্থানীয়রা। নোহাটা গ্রামের বসির শেখ জানান, হানু নদী সম্পর্কে আমাদের মুরব্বিদের কাছ থেকে অনেক কথাই শুনেছি। তবে আমি ছোট থেকেই এটিকে নদী হিসেবে দেখতে পাইনি। নদীর জমি দখল করে স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ ছোটখাট বাজার গড়ে উঠেছে। তবে নদীটির জীবন ফিরিয়ে আনতে সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ দেখিনি। এ বিষয়ে মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী তৌফিকুর রহমান জানান, ইতিমধ্যে হানু নদী পুনরুদ্ধারে সরকারিভাবে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

 যার অংশ হিসেবে দেবীনগর থেকে চন্ডীখালী পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকার নদী খননকাজ শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে নদীর অন্যান্য স্থানেও অবৈধ দখল উচ্ছেদসহ নদীর জীবন ফিরিয়ে আনতে কাজ শুরু হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর