কোটা সংস্কার আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে দুর্বৃত্তরা শুধু বরিশাল নগরীতেই হাজার কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস করেছে। এর মধ্যে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে মহানগর পুলিশের প্রায় অর্ধ কোটি টাকার মালামাল ধ্বংস করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালসহ বাসশ্রমিকদের স্থাপনাগুলোও ধ্বংস করা হয়েছে। হামলায় লঞ্চ, বাস, বাজার, পর্যটনসহ বিভিন্ন সেক্টর মিলিয়ে হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে সহিংস ঘটনা নিয়ে বরিশাল মহানগর পুলিশের চার থানায় পাঁচটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বর্ণিত ক্ষয়ক্ষতি অনুযায়ী দেখা গেছে, পুলিশ বক্স ও ক্যাম্পে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করে ৪৫ লাখ টাকার ক্ষতি করা হয়েছে। যেমন ১৭ জুলাই নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালসংলগ্ন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা কনস্টেবল জালাল আহম্মদ শরীফ পুলিশ বক্সে ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় মহানগর পুলিশের এয়ারপোর্ট থানায় টিএসআই শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় পুলিশ বক্সের ৩০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। হামলাকারীরা পুলিশ বক্সের দরজা-জানালা, পার্টিশন গ্লাস ও একটি মোটরসাইকেল গুঁড়িয়ে দিয়েছে। একই বক্সে দ্বিতীয়বার হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ক্ষতি করা হয়েছে ১০ লাখ টাকার সম্পদ। এ ঘটনায় এয়ারপোর্ট থানার এসআই হুমায়ন কবির বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এ ছাড়া কোতোয়ালি মডেল থানা রেঞ্জ পুলিশের কনস্টেবল মো. মহসিন বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। এ পুলিশ কনস্টেবলের ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এলাকার ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে ক্ষতি করা হয়েছে ২ লাখ টাকার। এ ঘটনায় এএসআই কামরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পুলিশ ক্যাম্পে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় করা মামলায় ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। হামলাকারীরা পুলিশ ক্যাম্পের জানালার গ্রিল ভাঙচুর করে ক্যাম্পের সিসি ক্যামেরা, বৈদ্যুতিক বাল্ব লুট করে নিয়ে গেছে। বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি অসীম দেওয়ান জানান, ১৭ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত নগরীর কেন্দ্রীয় টার্মিনাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ থাকে। এতে ৫ শতাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন। ভাঙচুর করা হয়েছে বাঙালি নামে একটি রেস্তোরাঁসহ ১০টি বাস কাউন্টার। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বেশ কিছু বাসের সামনের গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়েছে। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বরিশাল চেম্বার্স অব কমার্সের সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘কোটা আন্দোলনের কারণে বরিশালের বিভিন্ন সেক্টরে হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। লঞ্চ, বাস, বাজার, পর্যটনসহ বিভিন্ন সেক্টরের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সময় লাগবে। কারফিউ ওঠার পর স্বাভাবিক হতেও সময় লাগবে।’