‘তুমি দোকানে থাক, একটু পরেই আসছি।’ এর কিছুক্ষণ পরই শুনি আমার স্বামী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। কথাগুলো কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় নিহত অটোচালক মানিক মিয়ার স্ত্রী মুন্নী বেগমের। তিনি জানান, তার স্বামী গুলিবিদ্ধ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে মোবাইল ফোনে তাকে এসব কথা বলেন। গত ১৮ জুলাই রংপুর নগরীর মডার্ন মোড়ে তাজহাট এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন
অবস্থায় মারা যান অটোচালক মানিক মিয়া (৩৪)। নিজের চায়ের দোকানের মালামাল কিনতে স্ত্রীকে দোকানে রেখে মডার্ন মোড় এলাকায় গিয়েছিলেন। মানিক মিয়া রংপুর নগরীর পূর্ব ঘাঘটপাড়া এলাকার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে মানিক মিয়া ছিলেন দ্বিতীয়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীকে হারিয়ে দেড় বছরের শিশু সন্তান সিয়ামকে নিয়ে চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন মুন্নী বেগম। মুন্নী বেগম বলেন, মাত্র দেড় বছর বয়সি ছেলেকে কীভাবে মানুষ করব। বড় হয়ে বাবা বলে কাকে ডাকবে। আমি এখন কীভাবে সংসার চালাব। আমার স্বামী কোনো দোষ করেনি। তাহলে তাকে কেন গুলি চালিয়ে মারা হলো। আমি এসবের বিচার চাই। মানিক মিয়া অটোরিকশা চালানোর পাশাপাশি নগরীর মডার্ন মোড়ে চায়ের দোকান করতেন। ঘটনার দিন বিকাল ৪টার দিকে স্ত্রীকে দোকানে রেখে তিনি অটোরিকশা নিয়ে মালামাল কিনতে মডার্ন মোড়ে যান। এ ফেরার পথে বিকাল ৫টার দিকে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এলাকায় পৌঁছলে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় অটোচালক মানিক মিয়া গুলিবিদ্ধ হন। পরে স্থানীয়রা রংপুর মেডিকেলে নিয়ে গেলে সেখানে তিনি মারা যান। অটোচালক মানিক মিয়া ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বাবা সেকেন্দার আলী ১২ বছর আগে মারা যান। ২০১৮ সালে মানিক মিয়া মুন্নীকে বিয়ে করেন। দেড় বছর আগে তাদের সংসারে জন্ম নেয় শিশু সিয়াম। তিন শতক জমির ওপর টিন শেডের দুটি ঘরে তাদের বসবাস। মানিক মিয়া দুই বোন কুলসুম ও শিউলির বিয়ে দিয়েছেন। এখন উপার্জনক্ষম সেই মানিককে হারিয়ে অন্ধকার দেখছে পুরো পরিবার। ছেলেকে হারিয়ে মানিকের মা নূরজাহান বেগম (৫৫) শয্যাশায়ী। তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা কারও নেই।