বগুড়ার গ্রামীণ নারী-পুরুষের হাতে তৈরি তালপাতার পাখার কদর বেড়েছে দেশজুড়ে। কাহালু উপজেলার প্রায় পাঁচ গ্রাম থেকে পাখা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন জেলার পাইকাররা। শুধু দেশেই নয়, এখন বিদেশেও যাচ্ছে এসব পাখা। কাহালু উপজেলার পাঁচ গ্রামের মানুষ ৫০ বছর ধরে পাখাশিল্পের সঙ্গে জড়িত। পাখা তৈরির জন্য এ গ্রামগুলো এখন পাখার গ্রাম হিসেবেও পরিচিত। দেশের বিভিন্ন জেলার হাতপাখার চাহিদার সিংহভাগেরই জোগান দেন এ উপজেলার মানুষ। এখানকার হাতপাখার আলাদা কদর রয়েছে দেশজুড়ে। কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের অড়োলা, আতালপাড়া, যোগীরভবন, কর্ণিপাড়া গ্রামে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা গেছে, নারী-পুরুষরা ভীষণ ব্যস্ত পাখা তৈরিতে। সকাল থেকে ঘরের আঙিনায় বসে সবাই তৈরি করছেন হাতপাখা। কেউ তালপাতা চিরিয়ে নিচ্ছেন, কেউ হাতপাখা তৈরি করছেন, আবার কেউ তৈরি করা হাতপাখায় বেত দিয়ে চাকা বাঁধছেন। কেউ আবার তালপাতায় রং দিচ্ছেন। অনেক পরিবারের কিশোর-কিশোরী তাদের কাজে সহযোগিতা করছে। মূলত বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ ও চৈত্রে যখন গরম বেড়ে যায়, তখন তালপাখার চাহিদাও বাড়তে থাকে। এখানকার পাখা রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রির জন্য যায়। পাখা কারিগররা জানান, তালপাতা দিয়ে মোট পাঁচ ধরনের পাখা তৈরি করা যায়। যেমন ডাঁটা পাখা, হাতল পাখা, ঘুরকি পাখা, পকেট পাখা ও আমান পাখা। এর মধ্যে প্রতি পিস হাতল পাখা পাইকারি বিক্রি হয় ২৫ থেকে ৩০ এবং পকেট পাখা ১৬ থেকে ২০ টাকায়। যোগীরভবন গ্রামের ঘরে ঘরে এখন তালপাখা তৈরির কর্মযজ্ঞ চলছে। কারিগরদের দম ফেলার ফুরসত নেই। ওই গ্রামের প্রবীণ কারিগর হুজুর আলী জানান, যোগীরভবন গ্রামে শত বছরের পুরনো মন্দির আছে। আগে দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা এ মন্দিরে পূজা-অর্চনা করতে আসতেন। ভক্তদের জন্য হিন্দু কারিগররা হাতপাখা তৈরি শুরু করেন। পরে অন্য ধর্মের মানুষও একে পেশা হিসেবে নেন। এরপর আশপাশের গ্রামেও তালপাখা তৈরি শুরু হয়।
পাখার কারিগর ৫৫ বছর বয়সি আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘বৈদ্যুতিক ফ্যানের ভিড়ে হাতপাখা হারিয়ে যাচ্ছে। পূর্বপূরুষের পেশা হিসেবে ধরে রেখেছি। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও এ পেশা আঁকড়ে ধরে পরিবার-পরিজনের ভরণপোষণ জোগাড় করছি।’ তিনি আরও জানান, কাহালুর হাতপাখা ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন এলাকার বৈশাখী মেলায় যায়। বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা আসেন পাখা নিতে। আবার অনেকে কারিগরদের আগাম টাকা দিয়ে পাখা তৈরি করিয়ে নেন। পাখা নিতে আসা ঢাকার পাইকার ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘গরমের সময় এ এলাকা থেকে প্রচুর পাখা নিয়ে যাই। বিদ্যুৎ চলে গেলে মানুষের একমাত্র ভরসা হাতপাখা। তাই হাতপাখার কদর দেশজুড়ে। ২ হাজার টাকা দিয়ে ১০০ পকেট পাখা কিনলে প্রায় ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়।’
ধারণা পাওয়া গেছে, পাখাশিল্পীরা পেশা হারানোর শঙ্কায় আছেন। বৈদ্যুতিক ফ্যান ও প্লাস্টিকের হাতপাখার কারণে তালপাখার কদর আগের চেয়ে কমেছে। এর মধ্যে অনেকে আবার পেশা বদলে অন্য কাজে যোগ দিয়েছেন।